Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

২০২৩ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ

ছবি: হারুন অর রশীদ
ছবি: হারুন অর রশীদ
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

বায়ুদূষণে ২০২৩ সালে শীর্ষ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী বায়ু মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের গড় বায়ু মান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত নিরাপত্তা নির্দেশিকা অতিক্রম করে প্রায় ১৬ গুণ বাড়ে। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ বায়ু মানের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।

পাকিস্তান ও ভারত তালিকায় বাংলাদেশের পরেই অবস্থান করেছে। ভারতের সর্বোচ্চ দূষিত শহরগুলোর মধ্যে ৯টিই শীর্ষ ১০ তালিকায় রয়েছে।

প্রতিবেদন বলছে, গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ বায়ু দূষণের শীর্ষ ১০০ শহরের মধ্যে মাত্র একটি ছিল এশিয়ার বাইরে। জলবায়ু সংকট এই খারাপ বায়ু মানের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছে। এতে বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

এসব শহরের মধ্যে ৮১টিই ভারতের। শহরগুলোর বায়ু মান ডব্লিউএইচও নির্ধারিত নিরাপদ বায়ু মানের চেয়ে ১০ গুণ বেশি।

গবেষণায় বিশেষভাবে খুবই সূক্ষ্ম ধুলিকণা বা পিএম২.৫ নামক কণার উপরে নজর দেওয়া হয়েছে। এই কণা সবচেয়ে ক্ষুদ্র, কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকারক।

ডব্লিউএইচও বলছে, বাতাসে গড় পিএম২.৫ এর মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া চলবে না। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ৭ হাজার ৮০০ এর বেশি শহরের মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ শহরেই এই নিরাপদ মাত্রা মেনে চলা হচ্ছে।

আইকিউএয়ার গ্লোবালের সিইও ফ্রাঙ্ক হ্যামেস বলেন, “আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বায়ু দূষণের প্রভাব রয়েছে। যেসব দেশের বাতাসে দূষণ সবচেয়ে বেশি, সেখানে মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। কিছু গবেষণা বলছে, এ দূষণের কারণে মানুষের আয়ু কমে যেতে পারে ৩ থেকে ৬ বছর। এছাড়া এর জন্য মানুষকে অনেক বছর ধরে নানা রোগে ভুগতে হয়। কিন্তু বাতাসের মান ভালো থাকলে এই দুর্ভোগ এড়ানো সম্ভব।”

ঢাকার দয়াগঞ্জ এলাকার ধূলায় ধূসরিত রাস্তা।

শ্বাস নেওয়ার সময় পিএম২.৫ ধূলিকণা ফুসফুসের গভীরে পৌছে যায়। এমনকি রক্তনালীতেও ঢুকতে পারে। গাড়ির জ্বালানি, ধুলোবালি, ঝড় ও জঙ্গলের আগুন থেকে এই ধুলিকণা তৈরি হয়। পিএম২.৫ শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। এমনকি শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার সঙ্গেও এর সম্পর্ক পাওয়া গেছে।

ভারতের বিহার রাজ্যের উত্তরের একটি শহর বেগুসারাই। গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে বায়ুদূষণের শহর ছিল এটি। সেখানে বাতাসে পিএম২.৫ এর গড় মাত্রা ছিল ১১৮ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম গ্রতি ঘনমিটারে। এটা ডব্লিউএইচওর নিরাপদ মানের চেয়ে ২৩ গুণ বেশি।

আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনে ভারতের আরও কয়েকটি শহর খারাপ বায়ু মানের তালিকায় রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – আসামের গুয়াহাটি, দিল্লি ও পাঞ্জাবের মুলানপুর।

প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের ৯৬ শতাংশ মানুষ এমন বাতাসে বাস করে যা ডব্লিউএইচওর নির্ধারিত নিরাপদ বায়ু মানের চেয়ে ৭ গুণ খারাপ।

গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষিত চারটি দেশ ছিল মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায়। এই দেশগুলো হলো – বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও তাজিকিস্তান।

দক্ষিণ এশিয়ার বায়ু দূষণের পরিস্থিতি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষিত ৩০টি শহরের মধ্যে ২৯টিই ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে অবস্থিত। লাহোর ৫ম, নয়াদিল্লি ৬ষ্ঠ ও ঢাকা ২৪তম অবস্থানে।

হ্যামেসের মতে, “জ্বালানি অবকাঠামো ও কৃষি পদ্ধতিতে মৌলিক পরিবর্তন না আনলে এই অঞ্চলে বায়ুদূষণের মাত্রায় তেমন কোন উন্নতি আশা করা যায় না। বিশ্বের অনেক জায়গায়, বাইরের বাতাসের দূষণের কারণগুলোই ভেতরের বাতাসের দূষণের জন্যও দায়ী, যা বেশ উদ্বেগজনক।

“অপরিষ্কার জ্বালানি ব্যবহার করে রান্না করলে ঘরের বাতাস বাইরের চেয়ে অনেক বেশি দূষিত হতে পারে।”

ভারতের রাজধানী দিল্লির রাস্তার অবস্থা।

বৈশ্বিক সমস্যা

আইকিউএয়ার গত বছর ১৩৪টি দেশ, অঞ্চল ও ভূখণ্ডের ৭ হাজার ৮১২ টি স্থানের গড় বায়ু মান বিশ্লেষণ করেছে। এতে দেখা যায়, ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ স্থানেই ডব্লিউএইচও নির্ধারিত পিএম২.৫ মানদণ্ড অতিক্রম করেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১০টি দেশ ও অঞ্চলে ‘স্বাস্থ্যকর’ বাতাস ছিল। এই দেশগুলো হল – ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, পুয়ের্তো রিকো, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বারমুডা, গ্রেনাডা, আইসল্যান্ড, মরিশাস ও ফরাসি পলিনেশিয়া।

বায়ু দূষণের ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর মারা যাচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ। গত নভেম্বরে বিএমজে জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সৃষ্ট বায়ু দূষণে প্রতি বছর বিশ্বে ৫১ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।

ডব্লিউএইচও বলছে, বাইরের ও বাড়ির ভেতরের বাতাস দূষণে বছরে ৬৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মতো মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ু সংকট বাড়ছে, এমনটা বলা হয় আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনে।

জলবায়ু সংকট বায়ুমণ্ডলে পরিবর্তন আনছে। বৃষ্টিপাত ও বাতাসের দিক পরিবর্তন করছে। ফলে বায়ু দূষণকারী উপাদান ছড়িয়ে পড়ার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে। তীব্র গরম আরও বেশি এবং বারবার ঘটলে বায়ুদূষণ আরও বাড়বে।

বায়ু দূষণ নিয়ে ডেকান হেরাল্ডের তৈরি ব্যাঙ্গচিত্র।

আঞ্চলিক র‌্যাংকিং

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কানাডায় বনাঞ্চলে যে অগ্নিকাণ্ডগুলো হয়েছিল, তাতে উত্তর আমেরিকা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মে মাসে আলবার্টার বাতাস এতটাই দূষিত ছিল, যা ২০২২ সালের মে মাসের চেয়ে নয় গুণ বেশি ছিল।

বায়ুদূষণের দিক থেকে কানাডা প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে।

দাবানলের ধোয়ায় ক্ষতি হয় যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিস ও ডেট্রয়েটের মত শহরগুলোর। এসব শহরে আগের বছরের তুলনায় গত বছর বায়ু দূষণ বেশি ছিল। তবে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দূষিত প্রধান শহর ছিল কলম্বাস ও ওহাইও।

এশিয়ার বেশিরভাগ অংশে বায়ু দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

চীনে গত পাঁচ বছরে বায়ুদূষণের মাত্রা কমেছে। আগে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শহরগুলো ছিল চীনেরই। কিন্তু গত দশকে পরিবেশ রক্ষার নীতিমালার ফলে সেখানে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

বৈষম্য

আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র না থাকায় সেখানে বাতাসের মান সম্পর্কিত তথ্যের অভাব রয়েছে।

আফ্রিকার অনেক দেশে বাতাসের দূষণের মাত্রা কত তা জানা যায় না। কারণ এই দেশগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র নেই। এবার আগের বছরের চেয়ে বেশি দেশের তথ্য প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবুও অনেক দেশের তথ্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত