Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

উপজেলা নির্বাচন : টুকু-রাজ্জাকের স্বজনের হার

পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই আবদুল বাতেন বেড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। ছবি : সংগৃহীত
পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই আবদুল বাতেন বেড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। ছবি : সংগৃহীত
Picture of খাইরুল বাশার

খাইরুল বাশার

স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে ভোটের মাঠে রয়ে ‍গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নয়জন সংসদ সদস্যের ১৪ জন স্বজন। তাদের মধ্যে জয় পেয়েছেন সাত সংসদ সদস্যের আট স্বজন; হেরেছেন চার সংসদ সদস্যের ছয় স্বজন।

বাজিমাত করেছেন বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছেলে ও ছোট ভাই। তারা দুই জনই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। সব মিলে তিন সংসদ সদস্যের তিন পুত্র হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

নির্বাচন কমিশনের সারাদেশের সার্বিক তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

বিএনপি বর্জন করায় উপজেলা নির্বাচন জমিয়ে তোলার চেষ্টায় দলের প্রার্থী রাখেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে প্রতিটি উপজেলায় দলটির একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নেমেছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

তবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের প্রার্থী না হতে নির্দেশ দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। কিন্তু শাজাহান খানের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের ছেলেও প্রার্থী হয়ে জিতে গেছেন।

যার মুখ দিয়ে আওয়ামী লীগের নির্দেশনা আসে, সেই সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাইও মনোনয়নপত্র দাখিল করেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। বাছাইয়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হলেও তিনি আশায় আছেন ভোটের মাঠে থাকার। স্বজন বলতে এমপিদের সন্তান বোঝাবে, একথা বলছেন ওবায়দুল কাদের।

এবার চার ধাপে দেশের ৪৯৫ উপজেলায় নির্বাচনের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপে বুধবার (৮ মে) ভোটগ্রহণ হয়েছে ১৩৯ উপজেলায়। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এ ধাপে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পড়েছে।

শাজাহান খানপুত্র আসিবুর রহমান খান

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য। তার ছেলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসিবুর রহমান খান এবার প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন। আসিবুর হারিয়েছেন তার চাচা পাভেলুর রহমান শফিককে।

মাদারীপুর সদর উপজেলায় ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ২২ হাজার ৪২৬ জন। এর মধ্যে আসিবুর রহমান খান ৭৫ হাজার ৬৬২ ভোট পেয়েছেন। পাভেলুর রহমান সফিক ভোট পেয়েছেন ৬১ হাজার ৩৬৫ ভোট। এ উপজেলায় ভোট পড়েছে ৪৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর একসময় শাজাহান খানের সঙ্গেই রাজনীতি করতেন। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই চাচাতো ভাইয়ের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। পাভেলুর ওই নির্বাচনে মাদারীপুর সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দল শাজাহান খানকে মনোনয়ন দেয়। এরপর একবার কিছুদিনের জন্য দুই ভাই কাছাকাছি এসেছিলেন। একই পরিবারের হলেও পাভেলুর এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

বগুড়ার সাহাদারা মান্নানের ছেলে ও ছোট ভাই

বগুড়া-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছেলে ও ছোট ভাই দুইজনই বাজিমাত করেছেন। সারিয়াকান্দি উপজেলার চেয়ারম্যান পদে ছেলে সাখাওয়াত হোসেন এবং সোনাতলা উপজেলায় ছোট ভাই মিনহাদুজ্জামান জয়লাভ করেছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী সাহাদারা সংসদ সদস্য হন। তাদের ছেলে মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য।

সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৯৮ জন ভোটার। এর মধ্যে সাহাদারা মান্নানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন পেয়েছেন ৩৭ হাজার ২৪৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেজাউল করিম মন্টু পেয়েছেন ৬ হাজার ১৫৩ ভোট। এ উপজেলায় ভোট পড়েছে ২৫ দশমিক ১৯ শতাংশ।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় চেয়ারম্যন পদে জয় পেয়েছেন সাহাদারা মান্নানের ছোট ভাই মিনহাদুজ্জামান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৬৬ হাজার ১৬১ জন। মিনহাদুজ্জামান ২০ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়েছেছে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাকির হোসেন পেয়েছেন ৭ হাজার ৩৪৫ ভোট। উপজেলায় ভোট পড়েছে ১৭ দশমিক ১১ শতাংশ।

ঠাকুরগাঁওয়ের সুজনের চাচা সফিকুল

ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য মাজহারুল ইসলাম সুজনের চাচা সফিকুল ইসলাম বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন। ৬৩ হাজার ৭৬২ ভোট পেয়ে ভাই মোহাম্মাদ আলীকে হারিয়েছেন তিনি। মোহাম্মদ আলীর ছেলে উপজেলা যুবলীগের সদস্য আলী আফসারও ভোটযুদ্ধে ছিলেন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সফিকুল ইসলাম। একই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তার ভাই মোহাম্মদ আলী। দুই ভাই সংসদ সদস্য সুজনের চাচা। এ উপজেলায় ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী বুধবার নিজের এলাকায় ভোট দেন।

একরামুলপুত্র শাবাব

ছয় বছর আগে ঢাকায় গাড়িচাপায় এক ব্যক্তি মৃত্যুর জন্য যার বিরুদ্ধে উঠেছিল অভিযোগের আঙুল, সেই আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী হয়েছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের উপজেলার চেয়ারম্যান। নোয়াখালী-৪ আসনের (সদর ও সুবর্ণচর) সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে শাবাব হারিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনাম সেলিমকে।

৩০ বছরেরও কম বয়সী শাবাব আনারস প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়ে চ্যালেঞ্জ জানান সুবর্ণচরের টানা তিন বারের চেয়ারম্যান বর্ষীয়ান নেতা সেলিমকে। আনারস প্রতীকে শাবাব পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৬৪৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিম দোয়াত কলম প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৯৪৫। তাদের ভোটের ব্যবধান ৭০৩ ভোট।

হানিফের চাচাত ভাই আতা

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফের চাচাত ভাই আতাউর রহমান আতা চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন সদর উপজেলায়।

কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতা আনারস প্রতীকে ৬৭ হাজার ৬ ভোট পেয়ে ছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবু আহাদ আল মামুন ভোট পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৮৬।

রেজাউলের ভাই নূরে আলম

পিরোজপুর-১ (সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানি) আসনের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই এস এম নূরে আলম সিদ্দিকী নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। দোয়াত কলম প্রতীকে তিনি ১৯ হাজার ২৭২ ভোট পেয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মাদ আলী শিকদার ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ১৮ হাজার ২৯৩ ভোট।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার জামাতা বিশ্ব প্রদীপ

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার জামাতা বিশ্ব প্রদীপ অধিকারী খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮৪৩ ভোট; তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল কাদের পেয়েছেন ৮ হাজার ৪৪৭ ভোট। উপজেলায় ভোট পড়েছে ৫৩ দশমিক ২০ শতাংশ।

হেরেছেন ৪ এমপির ৬ স্বজন

টুকুর ভাই বাতেন ও ভাতিজা কাদের

পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই আবদুল বাতেন বেড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন, যিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র।

টুকুর আরেক ভাইয়ের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল কাদেরও ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন।

তারা দুইজনই হেরেছেন। আমিনপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বাবু হেলিকপ্টার প্রতীকে ২৯ হাজার ৬৮৯ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান পদে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টুকুর ভাই বাতেন ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৩ হাজার ৭৬৬ ভোট। এ উপজেলায় ভোট পড়েছে ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ও মামাতো ভাই

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই হারুন অর রশীদ ও মামাতো ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম ধনবাড়ী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট করে হেরেছেন।

হারুন অর রশীদ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। মামাতো ভাই মঞ্জুরুল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ তালুকদার সবুজ চেয়ারম্যান পদে মোটরসাইকেল প্রতীকে ৩০ হাজার ৭৩০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্জাকের খালাতো ভাই হারুন অর রশীদ হীরা ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ২৯৯ ভোট।

আরও যারা হেরেছেন

মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের চাচাতো ভাই পাভেলুর রহমান শফিক হেরেছেন ভাতিজা আসিবুর রহমানের কাছে।

ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য মাজহারুল ইসলাম সুজনের চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী হেরেছেন তার ভাই সফিকুল ইসলামের কাছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত