Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

বর্ষার ছাতা লাগছে গরমেও

তীব্র রোদের হাত থেকে বাঁচতে ছাতা মাথায় হাঁটছেন তিন তরুণ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
রোদের হাত থেকে বাঁচতে ছাতা মাথায় হাঁটছেন তিন তরুণ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of অনিক রায়

অনিক রায়

কাজের প্রয়োজনে রোজ ঘর থেকে বের হতে হয় উন্নয়নকর্মী ফারজানা ইয়াসমিনকে। দিনভর হেঁটে হেঁটে কাজ করতে হলেও এতদিন রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা ব্যবহার করতেন না তিনি। কেবল বর্ষাকালেই ছাতা দেখা যেত তার হাতে। কারণ, ছাতা বহন তার কাছে বাড়তি বোঝা বলে মনে হয়। কাজের সময় বার বার ছাতা বন্ধ করার আর খোলার কাজটিও বিরক্তিকর তার কাছে।

সেই ফারজানাই এখন তীব্র রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা মাথায় দিচ্ছেন। তিনি বললেন, এবার রোদ-গরমের তীব্রতা এত বেশি যে ছাতা ছাড়া পথে হাঁটাই যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে পানীয় জলও সঙ্গে রাখতে হচ্ছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আতিউর রহমান অবশ্য গত কয়েক বছর ধরেই ব্যাগে সময় তিনটি জিনিস বহন করেন। এগুলো হলো ছাতা, পানির বোতল আর পাতলা গামছা।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে তাপমাত্রা এতটাই পরিবর্তিত হয়েছে যে প্রতিদিন ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এই তিনটি সঙ্গে রাখা খুব জরুরি। বাসা থেকে বের হয়ে কাছের বাসস্ট্যান্ড পর্যন্তও ছাতা ছাড়া হেঁটে যাওয়া দায় হয়ে উঠেছে।

বাড়ি থেকে বের হলে ছাতা যেন এখন জরুরি অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ছাতার ব্যবহার সবসময়ই বেশি। ধু ধু মাঠ, বালুচর বা ফসলের ক্ষেতের মধ্য দিয়ে হেঁটে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামের যাওয়ার সময় ছাতা মাথায় দিতেই হয় তাদের।

সেই তুলনায় শহুরে মানুষের জীবনে ছাতার ব্যবহার তুলনামূলক কম ছিল। রোদের মধ্যে হাঁটতে না চাইলে রিকশার সহজলভ্যতা, প্রয়োজনে বড় ভবনের ছায়ায় ছায়ায় হেঁটে যাওয়ার মতো সুযোগ যেহেতু তাদের জীবনে রয়েছে তাই ব্যস্ত জীবনে স্বাভাবিকভাবেই ছাতা বহন অনেকটা বাড়তি কাজই ছিল। কেবল বৃষ্টি এলেই হয়ত ঘরের কোণা থেকে বের হতো ছাতাটি।

তবে এবারের গা পুড়িয়ে দেওয়া রোদ আর তীব্র গরম নাগরিক জীবনের দীর্ঘদিনের অভ্যাসে পরিবর্তন এনেছে। বাড়তি অনুষঙ্গ হিসেবে কাজে যাওয়া মানুষের ব্যাগে পানির বোতলের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে ছাতা। কেউ কেউ তো আবার ছোট ব্যাটারিচালিত ফ্যানও সঙ্গে রাখছেন। এছাড়া মাথায় টুপি বা ওড়না দিয়েও রোদ থেকে বাঁচতে চেষ্টা করছেন অনেকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপদাহ আরও বাড়তে পারে। সামনের দিনে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও উঠে যেতে পারে।

এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ঘর থেকে স্বল্প দূরত্বে বের হলেও সঙ্গে ছাতা ও পানি রাখতে।

আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণে দেশজুড়ে ছাতার বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুচরা পর্যায়ে এখনও বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে না হলেও তাপদাহ বাড়লে সামনের দিনে বিক্রি বাড়বে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকার দোকান ঘুরে দেখা গেল খুচরা বাজারে ২০০ থেকে ৮০০ টাকায় ছাতা বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে এসব ছাতার দাম ১১০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে।

বিভিন্ন নকশা, রঙ আর আকারের মধ্যে গাঢ় সবুজ, খয়েরি ও নীল রঙের ছাতা বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন বিক্রেতারা। সহজে খোলা-বন্ধ করা যায়, ওজনে হালকা, বহনযোগ্য আকার ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে ছাতার বিক্রি।

বিক্রেতারাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশি ছাতার মধ্যে শরীফ ও বিদেশি ছাতার মধ্যে এটলাস ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া রহমান, শংকর, স্টামফোর্ড, দত্ত, মুন, ফিলিপস, চেরি, ব্রাদার্স, মার্টিন, অ্যাপেক্স, নওয়াব, গোল্ডফিশ, ইউনিক, ফুজি, ডাভ ইত্যাদি ব্র্যান্ডের ছাতাও বেশ ভালো বিক্রি হয়।

‘ছাতা দ্যাখে কিন্তু কেনে না’

“মানুষ আসে। ছাতা দেখে। একটার জায়গায় দুইটা দেখে। কিন্তু নেওয়ার সময় একটাও নেয় না।”

এভাবেই বিক্রির অবস্থা বোঝালেন মতিঝিলের বিক্রেতা নিজাম উদ্দিন। ব্যাংকপাড়ার রাস্তায় বসে ছাতা, বেল্টসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করেন তিনি।

অবশ্য ক্রেতাদের মধ্যে ছাতা কেনার আগ্রহ বেড়েছে বলেও জানালেন তিনি।

সকাল সন্ধ্যাকে নিজাম উদ্দিন বলেন, “মানুষ দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ছাতা দেখে। যে রোদ পড়েছে, ছাতা কিনতে ইচ্ছাও হয়। জিনিসটা তো দরকারি।”

ঢাকার বাজারে মেলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ছাতা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

কিন্তু তাও কেন বিক্রি কম জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মানুষের কাছে টাকা নাই। একটা ছাতার জন্য ৫০০ টাকা কেউ খরচ করতে চায় না।”  

তার দোকানে ১৮০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা পর্যন্ত দামের ছাতা আছে বলে জানান।

বাজার ঘুরে দোকানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ঢাকার খুচরা বাজারে ছাতার বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি।

এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাপদাহের কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকা এবং মানুষের রাস্তায় বের হওয়ার প্রবণতা কমে গেছে। সে কারণে ছাতা এখনও প্রয়োজন পড়ছে না।

খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকার সিয়াম স্পোর্টসের মালিক মিজানুর রহমান। তার দোকানে ছাতাসহ বিভিন্ন ধরনের খেলার সামগ্রী বিক্রি করেন।

তিনি বলেন, “এবছর ছাতা বিক্রি খুব একটা বাড়েনি। স্কুল-কলেজ বন্ধ তো। বাচ্চাদের ছাতাটাই বেশি বিক্রি হয় আসলে। গতবছরও এই ছাতা বেশি বিক্রি হয়েছিল।”

এখন মানুষ ছাতা দাম-দর করতেই বেশি আসছে বলে জানালেন।

ঢাকার বাইরে বিক্রি বেশি

খুচরা বাজারে কম বিক্রি হলেও পাইকারিতে বেড়েছে ছাতা বিক্রি। চকবাজারের ছাতা ব্যবসায়ীরা বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তারা বলছেন, যে অর্ডার আসছে তার মধ্যে ঢাকার বাইরে যাচ্ছে বেশি। পাইকারি বাজার থেকে বিক্রি হওয়া আনুমানিক ৭০ শতাংশ ছাতাই ঢাকার বাইরে চলে যাচ্ছে বলেও জানান তারা।

চকবাজারে ১০ নম্বর গলির আরবি এন্টারপ্রাইজের শিপন মুন্সী জানালেন, ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ীরা বেশি আসছেন ছাতা কিনতে। গতবারের চেয়ে এবার দ্বিগুণ বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।  

এর পেছনে ব্যাখ্যাও দিলেন তিনি।

এই বিক্রেতা বলেন, ঢাকায় তো মানুষকে বেশি হাঁটতে হয় না। রিকশা আছে, বাস আছে; নানান কিছু আছে। কিন্তু ঢাকার বাইরে প্রায় সব জায়গায় মানুষকে হাঁটতে হয়। গরমে ছাতা তাদের জন্য খুবই জরুরি।

চকবাজারের পাইকারি দোকানগুলোয় বেড়েছে ছাতা বিক্রি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
চকবাজারের পাইকারি দোকানগুলোয় বেড়েছে ছাতা বিক্রি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

তবে ধীরে ধীরে ঢাকার মানুষেরও অভ্যাস বদলাচ্ছে বলে মনে করেন আরেক পাইকারি বিক্রেতা মো. সোলেয়মান।

চকবাজারে সোলেয়মান ট্রেডার্সের মালিক এই ব্যবসায়ী গত প্রায় ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এতদিন ধরে ঢাকায় ব্যবসা করি, কিন্তু কোনোদিন ভাবি নাই গরমে মানুষ ছাতা কিনবে। সবসময় ব্যবসা করছি বর্ষার আগে। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে গরমের মৌসুমে ব্যবসা হচ্ছে।

“আবহাওয়া এমন অবস্থায় যাচ্ছে,ছাতা না নিয়া বের হওয়া কঠিন।”

এমনকি তিনি নিজে আগে রোদের জন্য ছাতা ব্যবহার না করলেও এখন করতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও জানালেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত