Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

‘গরমে যেভাবে মুরগি মরছে খামার টিকবে না’

আর এস পোল্ট্রির মালিক রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার খামারে গরমে প্রতিদিন ১০-২০টি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। ছবি: সকাল সন্ধ্যা
আর এস পোল্ট্রির মালিক রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার খামারে গরমে প্রতিদিন ১০-২০টি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। ছবি: সকাল সন্ধ্যা
Picture of আঞ্চলিক প্রতিবেদক, সাভার

আঞ্চলিক প্রতিবেদক, সাভার

নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে পোল্ট্রি ছিল বেশ লাভজনক শিল্প। দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো ঢাকার সাভারেও সেসময় গড়ে উঠেছিল ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার পোল্ট্রি খামার। এসব খামারে উৎপাদিত মাংস ও ডিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকার বাজারের বড় অংশ দখল করে নেয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাভারের সেসব খামারের বেশিরভাগই এখন নেই। ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, উৎপাদন খরচের সঙ্গে বাজারমূল্যের সমন্বয়হীনতার কথা।

এছাড়া আছে পোল্ট্রি খাদ্যের দামবৃদ্ধি, মানসম্পন্ন টিকার অভাব এবং ডিম উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া। তাই দীর্ঘসময় ধরে পোল্ট্রি খামারিদের ব্যবসা রমরমা থাকলেও এখন তা প্রায় বন্ধের পথে।

সাভারের খামারিরা যখন তাদের ব্যবসাকে চলমান বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছেন, ঠিক তখন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে দাবদাহ। এতে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে মুরগি। কমেছে ডিম উৎপাদন; ছোট হয়ে গেছে ডিমের আকার।

তবে অতিরিক্ত গরমে পোল্ট্রি খামারে কোনও প্রভাব পড়ছে না বলে দাবি করেছেন সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলছেন, গরমে মুরগি মারা যাওয়ার কথা কেউ জানায়নি।

গরমে খামারের পরিস্থিতি জানতে সকাল সন্ধ্যা কথা বলেছে সাভারের দেওগাঁ এলাকার আর এস পোল্ট্রির মালিক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “আমার খামারে ১২ হাজার লেয়ার মুরগি ছিল। প্রচণ্ড গরমের কারণে দৈনিক ১০-২০টা করে মুরগি মারা যাচ্ছে। খামারে ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও অতিরিক্ত গরমে মুরগি খাবার খেতে পারছে না। খাবার না খাওয়ায় দুর্বল হয়ে মারা যাচ্ছে প্রাণীগুলো।”

রফিকুল ইসলাম বলেন, “আগে ৯০ ভাগ মুরগি ডিম দিত। এখন গরমের কারণে ৫০-৬০ ভাগ ডিম পাচ্ছি। এগুলোর আকারও তুলনামূলকভাবে ছোট।”

দিনের পর দিন যে পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে, তাতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা মুশকিল- এমন আশঙ্কা এই খামার মালিকের।

অত্যাধিক গরমে মুরগি মারা গেলেও সে ঘটনা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসকে জানাননি তিনি।

খামারিরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমে খেতে পারছে না মুরগি। ছবি: সকাল সন্ধ্যা

সাভারের ভাকুর্তা, কমলাপুর, বাঁশবাড়ী ও শিমুলিয়া এলাকায় প্রায় সাড়ে তিনশ’ খামার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে লেয়ার মুরগির খামার ১৮টি, ব্রয়লার মুরগির খামার ১৫০টি। বাকিগুলো সোনালি মুরগির খামার।

ভাকুর্তা এলাকার হাসমত পোল্ট্রিতে আছে প্রায় ১০ হাজার লেয়ার মুরগি। অতিরিক্ত গরমে প্রতিদিন মুরগি মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই খামারের মালিক হাসমত উল্লাহ।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “৬-৭ বছর ধরে পোল্ট্রির ব্যবসা করে আসছি। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। অনেকে খামার ছেড়ে অন্য ব্যবসা করছে। কিন্তু আমি কষ্ট হলেও পোল্ট্রি ব্যবসা ধরে রেখেছি।

“কিন্তু এই গরমে যেভাবে মুরগি মারা যাচ্ছে, তাতে হয়তো খামারটি আর টিকিয়ে রাখা যাবে না। এভাবে হয়ত একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে এই পোল্ট্রি শিল্প।”

ক্রমাগত লোকসানের মুখে সাভারের খামার মালিকদের কাঁধে এখন শুধুই ঋণের বোঝা। একসময় এই উপজেলার শিক্ষিত কর্মহীন লোকজন স্বল্প পুঁজি নিয়ে পোল্ট্রি শিল্পের মাধ্যমে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। এখন আর কেউ তাদের মতো করে এই অনিশ্চিত ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন না।

সাভারের খাগুড়িয়া এলাকার আরেক পোল্ট্রি ফার্ম মায়ের দোয়ায় মুরগির সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। প্রচণ্ড গরমে এখানেও কমবেশি মুরগি মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ফার্মের মালিক মালু মিয়া। তবে তিনিও অন্যদের মতো মুরগি মারা যাওয়ার বিষয়টি প্রাণিসম্পদ অফিসকে জানাননি।

পোল্ট্রি শিল্প যে কয়েকটি কারণে বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার একটি এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু। ২০০৭ সালে প্রথম এই রোগ দেশের খামারগুলোতে হানা দেয়। এতে খামারিদের বড় অংশই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, “একসময় সাভারে প্রায় আড়াই হাজার খামার ছিল। বার্ড ফ্লুয়ের কারণে পোল্ট্রি শিল্পে যে বিপর্যয় শুরু হয়েছে, তা থামছেই না।”

এসময় সাভারে একসময়ের পোল্ট্রি মালিকদের সংগঠন ‘পোল্ট্রি মালিক কল্যাণ সমিতির’ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাজেদুল ইসলাম বলেন, পোল্ট্রি শিল্পে বিপর্যয়ই সংগঠনটিকে অস্তিত্বহীন করে তোলে।

বার্ড ফ্লুয়ের আক্রমণসহ নানা পরিস্থিতি পোল্ট্রি শিল্পের বিপর্যয়ে ভূমিকা রাখলেও চলমান দাবদাহও যে এক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তা মানতে নারাজ সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।        

অতিরিক্ত গরমে পোল্ট্রি খামারে কোনও প্রভাব পড়ছে না দাবি করে তিনি বলেন, “গরমে মুরগি মারা যাওয়ার কথা কেউ আমাদের জানায়নি।”

সাভার থেকে দিন দিন পোল্ট্রি খামার বিলুপ্ত হওয়ার বিষয়ে সাজেদুল ইসলাম বলেন, “দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। এ কারণে খামারিরা সাভার থেকে অন্যত্র গ্রামাঞ্চলের দিকে চলে যাচ্ছে। আগামী ২/১বছরের মধ্যে সাভারে পোল্ট্রি খামার খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত