Beta
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪

অনুভূত তাপমাত্রা কী

প্রচণ্ড গরমের মধ্যে জলাশয়ে জল পানে একটি পাখি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে জলাশয়ে জল পানে একটি পাখি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

আবহাওয়ার বিভিন্ন খবরে খেয়াল করে দেখেছেন হয়ত গরম ও শীতকালে প্রায়ই দিনের প্রকৃত তাপমাত্রার পাশাপাশি অনুভূত তাপমাত্রারও উল্লেখ করা হয়। যেমন বলা হয়, আজকের দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর অনুভূত তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কথাটি শুনতে অনেক সহজ মনে হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুভূত তাপমাত্রা নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা হয়। এটি বছরের সময়ের উপরও নির্ভর করে।

সংক্ষেপে বললে, অনুভূত তাপমাত্রা হলো আপেক্ষিক আর্দ্রতা, গতি ও এমনকি সূর্যালোকের মাত্রার নিরিখে বাতাস মানবদেহে কতটা গরম বা কতটা ঠাণ্ডা অনুভূত হয় তা। অনুভূত তাপমাত্রাকে তাপসূচক তাপমাত্রাও বলা হয়। আর বাতাসে থার্মোমিটার দিয়ে মেপে যে তাপমাত্রা পাওয়া যায় সেটাকে বলা হয় প্রকৃত তাপমাত্রা।

তাপমাত্রা কী

তাপমাত্রা হলো বাতাস কতটা গরম বা ঠাণ্ডা, তা প্রকাশ করার ভৌত পরিমাপ। এটি বাতাস, আর্দ্রতা, বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, মেঘ ও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের অবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাপমাত্রা সবসময়ই অস্থিতিশীল এবং পৃথিবীর প্রতি বিন্দুতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয় এবং বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে। যেমন:

>> যে কোণে সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছায়

>> সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব

>> পৃষ্ঠের ধরন (সমতল, রুক্ষ, অন্ধকার বা হালকা, ইত্যাদি)

>> মেঘমালা

তাপমাত্রা কীভাবে কাজ করে

বাতাস সরাসরি সূর্যর আলোতে উত্তপ্ত হয় না বরং ভূ-পৃষ্ঠ থেকে তাপ শোষণ করে। বিভিন্ন ধরনের পৃষ্ঠতল বিভিন্ন উপায়ে সৌর শক্তিকে শোষণ করে, সঞ্চয় করে এবং প্রতিফলিত করে। পৃষ্ঠের রঙ যত গাঢ় হয় তত বেশি তাপ ধরে রাখে এবং সে অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে।

যে কোণে সূর্যালোক পৃথিবীতে ৯০ ডিগ্রিতে পৌঁছায়, তা পৃথিবীর যত কাছাকাছি হয় স্থলভাগ তত বেশি উত্তপ্ত হয় এবং বাতাসও ততই উত্তপ্ত হয়। এক্ষেত্রে মেঘমালা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, মেঘমালা রাতে একটি কম্বল হিসেবে কাজ করে এবং তাপ আটকে রাখতে পারে। বাতাসের তাপমাত্রা সেলসিয়াস, ফারেনহাইট ও কেলভিনে পরিমাপ করা হয়।

প্রকৃত ও অনুভূত তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য

বাতাসের প্রকৃত তাপমাত্রা থার্মোমিটার দিয়ে মাপা হয়। আর অনুভূত তাপমাত্রা মাপা হয় মানব শরীরে সেই তাপমাত্রা কেমন অনুভূত হয় তার ভিত্তিতে।

যেমন আবহাওয়া দপ্তরের একজন বিশেষ কর্মচারী সকালে বাইরে যান এবং তিনি কী অনুভব করেন তা বর্ণনা করেন। অনুভূত তাপমাত্রা পরিমাপ করার সময় বাতাসের আর্দ্রতা ও গতিও বিবেচনায় নেওয়া হয়। অনুভূত তাপমাত্রা হলো সেই তাপমাত্রা যা একজন ব্যক্তি পোশাক পরা অবস্থায় অনুভব করেন।

সাধারণত বায়ুর তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও ভূমি থেকে প্রায় ৫ ফুট উচ্চতায় তথা মানুষের মুখ বরাবর উচ্চতায় বাতাসের শক্তি বিবেচনায় নিয়ে অনুভূত তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়। এর সঙ্গে ঠাণ্ডার দিনে ও বাতাস প্রবাহের দিনে মানুষের শরীর থেকে কতটা তাপ হারায় তাও বিবেচনায় রাখা হয়।

অনুভূত তাপমাত্রা পরিমাপের কোনও সূত্র আছে কি

অনুভূত তাপমাত্রা পরিমাপ করার কোনও একক উপায় বা সূত্র নেই এবং অনুভূত তাপমাত্রার কোনও ক্যালকুলেটর বা পরিমাপ যন্ত্রও নেই। অনুভূত তাপমাত্রা পরিমাপে বিভিন্ন আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিষেবা ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ভিন্ন ভিন্ন সূচক ব্যবহার করে। তবে অনুভূত তাপমাত্রা নির্ধারণের জন্য দুটি ভিন্ন সূচক রয়েছে- হিট ইনডেক্স বা তাপ সূচক এবং উইন্ড চিল বা বাতাসের শীতলতা সূচক।

হিট ইনডেক্স বা তাপসূচক ব্যবহৃত হয় যখন অনুভূত তাপমাত্রা বাতাসের প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হয়। তাপ সূচক দেখায় কিভাবে আর্দ্রতা গরম আবহাওয়ায় অনুভূত তাপমাত্রা বাড়ায়। আর্দ্রতা যত বেশি হবে, প্রকৃত তাপমাত্রার তুলনায় অনুভূত তাপমাত্রা তত বেশি হবে।

বাতাস প্রবাহের দিনে মানবদেহের ত্বক থেকে বাষ্পীভবনের গতি বাড়ে এবং বাতাস শরীর থেকে তাপ বের করে দেয়, এতে প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি ঠান্ডা অনুভূত হয়। যখন তাপমাত্রা বেশি হয় তখন এর উল্টোটা ঘটে। গরমের দিনে বাতাসের শীতলতার পরিবর্তে আর্দ্রতা বড় ভূমিকা পালন করে।

মানুষের শরীর যখন অতিরিক্ত গরম হয় তখন এটি ঘাম ঝরিয়ে নিজেকে ঠাণ্ডা করে; সেই ঘামের বাষ্পীভবনের মাধ্যমে শরীর থেকে তাপ সরে। তবে বাতাসের বেশি আর্দ্রতা এই বাষ্পীভবনের হারকে ধীর করে দেয়। আশেপাশের বাতাসে যত বেশি আর্দ্রতা থাকে, তত তা বাষ্পীভবনের মাধ্যমে ত্বকের পৃষ্ঠ থেকে কম আর্দ্রতা শোষণ করতে সক্ষম হয়। কম বাষ্পীভবন ঘটলে, শরীর থেকে কম তাপ সরে এবং এতে মানুষ আরও বেশি গরম অনুভব করে। ফলে প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি গরম অনুভূত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার সঙ্গে বাতাসে ৯০ শতাংশ আর্দ্রতা থাকলে ঘরের বাইরে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মতো অনুভূত হতে পারে।

অন্যদিকে, বাতাসের শীতলতা সূচকে নিম্ন-তাপমাত্রার বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে শরীরের তাপমাত্রা কতটা কমে তার হিসাব দেওয়া হয়। এটি বাতাসের গতির ওপর নির্ভর করে মানবদেহ কতটা তাপ হারায় তা দেখায়। বাতাসের গতিবেগ যত বেশি হবে, ভূপৃষ্ঠসহ মানব দেহও তত দ্রুত শীতল হবে। বাতাসের শীতলতা পরিমাপে আর্দ্রতা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। উইন্ড চিল সর্বদা বাতাসের প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে কম থাকে।

শীতকালে আমাদের শরীর আমাদের ত্বকের ঠিক পাশে বাতাসের একটি পাতলা স্তরকে (পরিচলনের মাধ্যমে) গরম করে। উষ্ণ বাতাসের এই স্তরটি আমাদের শরীরকে চারপাশের ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে। কিন্তু শীতের বাতাস যখন আমাদের উন্মুক্ত ত্বক বা কাপড়ের উপর দিয়ে বয়ে যায়, তখন তা আমাদের শরীর থেকে এই উষ্ণতাকে দূরে নিয়ে যায়। বাতাস যত দ্রুত প্রবাহিত হয়, তত দ্রুত তাপ সরে যায়। যদি ত্বক বা জামাকাপড় ভেজা থাকে, তবে বাতাস তাপমাত্রা আরও দ্রুত কমিয়ে দেবে, যেহেতু প্রবাহমান বাতাস স্থির বাতাসের চেয়ে দ্রুত গতিতে আর্দ্রতা বাষ্পীভূত করে।

গরমের দিনে প্রকৃত তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ডিউ পয়েন্ট তাপমাত্রা ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৪০ শতাংশের বেশি হলে হিট ইনডেক্স সক্রিয় হয়। আর শীতের দিনে তাপমাত্র ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এবং বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৩ মাইল বা ৪.৫ কিলোমিটারের বেশি হলে উইন্ড চিল সূচক সক্রিয় হয়।

অনুভূত তাপমাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকি

গরমের দিনে বাইরে কাজ করতে যাওয়ার সময় হিট ইনডেক্স বিবেচনায় রাখতে হবে। গরমে মানুষের শরীর প্রচুর ঘামে, কিন্তু বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হলে ঘাম খুব কমই বাষ্পীভূত হয়। এটি শরীরের শীতলকরণ প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং উল্লেখযোগ্যভাবে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এর লক্ষণগুলো হল মাথাব্যথা, হৃদস্পন্দন, বিভ্রান্তি, মাথা ঘোরা, পানিশুন্যতা, পেশীতে ব্যথা, বমি বমি ভাব ও দুর্বলতা বা ক্লান্তি।

অনুভূত তাপমাত্রা প্রকৃত বা‘বাস্তব’ তাপমাত্রা না হলেও আমাদের দেহের ওপর তা বেশ প্রভাব ফেলে। অনুভূত তাপমাত্রা ১০৫-১১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট অতিক্রম করলে আমাদের ত্বক শ্বাস নিতে পারে না। এমন তাপমাত্রা দুই থেকে তিনদিন থাকলে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়। যদি শরীর ১০৫.১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি গরম হয়, তাহলে হিট স্ট্রোকের মতো তাপজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ে।

একইভাবে শীতকালে যদি শরীরের তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে নেমে যায় তাহলে হাইপোথার্মিয়ার মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত