Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে স্বীকারোক্তি অ্যাস্ট্রাজেনেকার

covishield-vacine
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের তৈরি করা কোভিড-১৯ টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। একইসঙ্গে রোগীদের নিরাপত্তার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেছে।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, তাদের তৈরি করা কোভিশিল্ড টিকা কিছু ক্ষেত্রে রক্ত ​​জমাট বাঁধাতে এবং প্লাটিলেটের সংখ্যা কমানোর মতো প্রাণঘাতী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যদিও তা খুবই বিরল।

যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছে বা স্বাস্থ্য সমস্যার কথা জানিয়েছে তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “রোগীর নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং ভ্যাকসিনসহ সমস্ত ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছে স্পষ্ট এবং কঠোর মানদণ্ড রয়েছে।”

অবশ্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সঙ্গে সম্পর্কিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার স্বীকারোক্তি এটাই প্রথম নয়।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের আদালতেও কোম্পানিটি স্বীকার করে যে, তাদের তৈরি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিলে থ্রম্বোসিস থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিন্ড্রোম (টিটিএস) হতে পারে। তবে তা খুবই বিরল।

বর্তমানে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে একটি ক্লাস অ্যাকশন মামলা চলছে। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের তৈরি কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার কারণে অনেক সুস্থ মানুষ মারা গেছেন। অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে এমন ৫১টি মামলা করা হয়েছে।

আদালতের একটি নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করেছে, কোভিশিল্ড টিকা নিলে খুব বিরল ক্ষেত্রে টিটিএস হতে পারে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা টিকাটি ভারতে কোভিশিল্ড নামে বাজারজাত করা হয়েছিল, যা উৎপাদনও করেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনিস্টিটিউট।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ভ্যাকসিনটিকে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে ‘খুব বিরল’ বলে বর্ণনা করেছে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এমআরএনএ প্রযুক্তির পরিবর্তে একটি ভাইরাল ভেক্টর প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কোভিশিল্ড কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি করেছে।

এই ভ্যাকসিনটি মানব কোষে কোভিড-১৯ স্পাইক প্রোটিন পরিবহনের জন্য একটি পরিবর্তিত শিম্পাঞ্জি অ্যাডেনোভাইরাস চ্যাডক্স১ (ChAdOx1) নিযুক্ত করে। এই ঠান্ডা ভাইরাসটি গ্রাহককে সংক্রামিত না করে তার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে অনুরূপ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শেখায়।

টিটিএস কী

থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিন্ড্রোম (টিটিএস) একটি বিরল কিন্তু প্রাণঘাতী সমস্যা, যার ফলে শিরায় রক্ত ​​জমাট বাঁধা (থ্রম্বোসিস) এবং প্লাটিলেট কমার (থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া) মতো ঘটনা ঘটে।

টিটিএস সাধারণত গুরুতর মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট এবং স্নায়বিক ঘাটতির মতো লক্ষণগুলোর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। রক্ত ​​​​পরীক্ষার মাধ্যমে প্লাটিলেটের মাত্রা নির্ণয় এবং রক্তের জমাট বাঁধা শনাক্ত করার জন্য ইমেজিংয়ের মাধ্যমে এটি ধরা পড়ে।

টিটিএস-এর চিকিৎসার জন্য রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে রক্তের আরও জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করার জন্য অ্যান্টিকোঅ্যাগুলেশন থেরাপি দিতে হয় এবং নিবিড় যত্ন নিতে হয়। প্লাটিলেটের মাত্রা স্থিতিশীল করতে ইনট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবুলিন (আইবিআইজি) ও প্লাজমা এক্সচেঞ্জ করা যেতে পারে।

অঙ্গহানি ও মৃত্যু সহ গুরুতর জটিলতার সম্ভাবনার কারণে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা টিটিএস আক্রান্ত রোগীদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। এই বিরল কিন্তু জটিল সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থার উন্নতির জন্য দ্রুত সমস্যা শনাক্ত এবং ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ডা. রাজীব জয়দেব এএনআইকে বলেছেন, “টিটিএস বা থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিন্ড্রোম হলো- মস্তিষ্কের রক্তনালীতে বা অন্য কোথাও রক্ত জমাট বাঁধার সঙ্গে রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়া। নির্দিষ্ট ধরনের কিছু টিকা নেওয়ার কারণে এটি ঘটতে পারে, যদিও তা খুব বিরল।”

২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে বলেছিল, কোভিড-১৯ নন-রিপ্লিক্যান্ট অ্যাডেনোভাইরাস ভেক্টর-ভিত্তিক ভ্যাকসিনের মাধ্যমে টিকা দেওয়া ব্যক্তিদের টিকা দেওয়ার পরে টিটিএস একটি নতুন প্রতিকূল ঘটনা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিড-১৯ চ্যাডক্স-১ ভ্যাকসিন ও জনসন অ্যান্ড জনসন (জেঅ্যান্ডজে) জেনসেন কোভিড-১৯ এডি২৬ডটকোভ-এস এই দুটির টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত