সাংগঠনিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধে বুয়েটের দেওয়া বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি।
সোমবার বিবৃতি দিয়ে এ ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে শিক্ষকদের সংগঠনটি।
শিক্ষক সমিতি বলছে, ২০১৯ সালের পর থেকে গত কয়েক বছরে বুয়েটে শিক্ষা কার্যক্রম অবাধে চলেছে, সুষ্ঠু একাডেমিক পরিবেশ বজায় ছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, “একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা, নিরাপদ রাখা, বিদ্যাচর্চা অক্ষুণ্ণ রাখা ইত্যাদি আমাদের সকলের দায়িত্ব। শিক্ষক সমিতি এমন পরিবেশই প্রত্যাশা করে। এ অবস্থায় বর্তমান অচলাবস্থা নিরসন এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম চালুর দাবি জানাচ্ছে শিক্ষক সমিতি।”
শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও নিষ্কলুষ বুয়েট ক্যাম্পাস সকলের কাম্য উল্লেখ করে সেখানে বলা হয়েছে, “সব অংশীজনদের সহযোগিতা ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে অচিরেই সে অবস্থা ফিরে আসবে বলে শিক্ষক সমিতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।”
বুয়েট শিক্ষার্থীদের কাছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের ইমেইল পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে শিক্ষক সমিতি এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
২০১৯ সালে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজনৈতিক তৎপরতার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় বুয়েট প্রশাসন।
ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর পিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন আবরার। সেই হত্যাকাণ্ডের মামলায় সংগঠনটির ২০ নেতাকর্মীর মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়।
গত পাঁচ বছর ধরে বুয়েটে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা চললেও সম্প্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বুয়েটে উপস্থিতি নতুন করে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়।
গত ২৭ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে গেলে তার প্রতিক্রিয়ায় ২৯ মার্চ থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেনের হলের সিট বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
পরে বুয়েটের সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ইমতিয়াজ।
সোমবার তার হলের আসন বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে আদেশ দেয় বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এর আগে ১ এপ্রিল হাইকোর্টের একই বেঞ্চ থেকে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের আদেশ স্থগিত করে দেয়। এ আদেশের ফলে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ থাকার পর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির দ্বার উন্মোচন হয়।
হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধেই আপিল করতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে বলেছে শিক্ষক সমিতি।