যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে গত ১ এপ্রিল এক ব্যক্তির শরীরে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ ধরা পড়ে। ওই ঘটনায় দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) দেশজুড়ে সতর্কতা জারি করেছে।
নিউ ইয়র্ক পোস্ট বলছে, বার্ড ফ্লু (এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা) থেকে সৃষ্ট মহামারি কোভিড-১৯ এর চেয়ে শতগুণ ভয়াবহ হতে পারে।
২০২০ সালে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের নতুন ধরন এইচ৫এন১ প্রথম আবিষ্কৃত হয়। এরপর থেকে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ভাইরাসটি এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যের বন্য পাখি, বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হাঁস-মুরগি ও ব্যক্তিপর্যায়ের খামারের পাখিদের আক্রান্ত করেছে।
ভাইরাসটি কেবল পাখিতেই সীমাবদ্ধ নেই। সম্প্রতি স্তন্যপায়ী প্রাণীতেও এর সংক্রমণ দেখা গেছে। চারটি রাজ্যের গরুর পালে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গত সোমবার ফেডারেল স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা টেক্সাসের একজন দুগ্ধ খামারের কর্মীর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা প্রকাশ করেন।
নিউ ইয়র্ক পোস্ট ডেইলি মেইলের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, পিটসবার্গের বার্ড ফ্লু গবেষক সুরেশ কুচিপুদি সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় বলেন, “এই ভাইরাসটি বহু বছর, সম্ভবত কয়েক দশক ধরে মহামারির তালিকার শীর্ষে রয়েছে। ভাইরাসটি সম্ভাব্য মহামারি সৃষ্টির দিকে বিপজ্জনকভাবে এগিয়ে আসছে।”
এইচ৫এন১ ভাইরাস ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতিতে শনাক্ত হয়েছে। মানুষসহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা রয়েছে এর।
কুচিপুদি আরও বলেন, “আমি মনে করি এটি এমন এক ভাইরাস যা স্পষ্টতই বৈশ্বিক মহামারির সবচেয়ে বড় হুমকি এবং বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান।”
টিকার জন্য ওষুধ শিল্প পরামর্শক ও কানাডাভিত্তিক বায়োনিয়াগারের প্রতিষ্ঠাতা জন ফুলটনও ভাইরাসটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক পোস্ট।
তিনি বলেন, “এইচ৫এন১ ভাইরাসটি যদি রূপান্তরিত হতে থাকে এবং উচ্চ মৃত্যুহার বজায় রাখলে, এটি কোভিড-১৯ এর চেয়ে ১০০ গুণ বেশি ভয়াবহ হতে পারে। আর এটি মানুষে সংক্রামিত হওয়ার জন্য রূপান্তরিত হলে, আমরা কেবল আশা করতে পারি যেন মৃত্যুহার কম হয়।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, ২০০৩ থেকে এইচ৫এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত ৫২ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
তুলনামূলক চিত্র বলছে, বর্তমানে কোভিডে সংক্রমিতদের মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ১ শতাংশের কম। যদিও মহামারির শুরুতে এই হার ছিল প্রায় ২০ শতাংশ।
নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন বলছে, বার্ড ফ্লুর লক্ষণগুলো সাধারণ ফ্লুর লক্ষণ – কাশি, শরীরে ব্যথা ও জ্বরের মতোই। অনেকের শরীরে লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। আবার অনেকে এর মাধ্যমে নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারেন।
সিডিসি জানায়, টেক্সাসে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত খামার কর্মীর শরীরে লক্ষণ বলতে ছিল শুধু চোখ লাল হয়ে থাকা। তাকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে এবং ফ্লুর জন্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
বার্ড ফ্লু পরিস্থিতিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সিডিসি পরিচালক ম্যান্ডি কোহেন।
তিনি অবশ্য বলছেন যে ভাইরাসটি সাধারণ মানুষের জন্য এখনও খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তার মতে, টেক্সাসের খামার কর্মী আক্রান্ত গরুর সরাসরি সংস্পর্শে থাকায় নিজেও আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে বেশি মাত্রায় সংক্রামক হয়ে ওঠার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।
সিডিসি পরিচালক ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছেন, “গবাদি পশুতে এই ভাইরাসের উপস্থিতি একটি উদ্বেগজনক বিষয়। কারণ এর মানে হলো ভাইরাসটির জিনগত রূপান্তর শুরু হয়েছে।
“গত সপ্তাহের আগে আমরা গবাদি পশুর মধ্যে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ দেখিনি। এটি একেবারেই নতুন। এটি ভাইরাসের জন্য একটি সংক্রমণ কেন্দ্র হতে পারে।”
ফক্স নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, ইউরোপীয় খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ (ইএফএসএ) গত বুধবার সতর্ক করেছে যে, ভাইরাসটি মানুষকে সংক্রমিত করতে রূপান্তরিত হলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইএফএসএ এক বিবৃতিতে বলেছে, “এইচ৫এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসটি মানুষের দেহে দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা অর্জন করলে মানুষের এর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবে অনেক বেশি হারে আক্রান্ত হতে পারে।”
ভাইরাসটির সম্ভাব্য বিস্তার রোধে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে টিকা তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান পরীক্ষা করছে।