Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে নেই জটের ভয়

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর।
দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রাণবিন্দু চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর।
Picture of আসিফ সিদ্দিকী

আসিফ সিদ্দিকী

ঈদের ছুটিতে দেশের স্থলবন্দরগুলো যখন অচল হয়ে পড়ে, তখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের চিত্র পুরো উল্টো। এই বন্দরে পণ্য উঠানামা বন্ধ থাকে না। ঈদের দিনে শুধু নামাজ ঘিরে এক শিফটে আট ঘণ্টা বন্ধ থাকে কাজ। তার আগে-পরে জাহাজ আসা-যাওয়া করে স্বাভাবিক সময়ের মতোই।

তারপরও অন্যান্য সংস্থাগুলোতে ঈদের ছুটি থাকায় বন্দরের ভেতরে কখনও কখনও কন্টেইনারজট বা জাহাজজট দেখা দিলেও এবার নির্ভার সময় কাটাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। রোজার পর থেকে কোনও জটই সামলাতে হয়নি দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরকে।

কেন নির্ভার চট্টগ্রাম বন্দর

কোনও ঈদেই বন্দরে কাজ বন্ধ থাকে না বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ও মুখপাত্র ওমর ফারুক। তিনি বলেন, পরিচালন কাজে যুক্ত সবাই দায়িত্ব পালন করেন। বন্দরে তিন শিফটে কাজ চলে। এরমধ্যে সকালের শিফটে কেবল ঈদের নামাজের সময়টা বন্ধ রাখা হয়। বাকি সময় পুরোদমে সচল থাকে বন্দরের কাজ। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

এবার একটু নির্ভার থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “বন্দরে কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতার প্রায় অর্ধেকই খালি। ফলে কন্টেইনার জট নিয়ে উদ্বেগ নেই। প্রতিবার সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দেয় এটি। বহির্নোঙরে জাহাজজট নেই। তাতে পণ্যবাহী জাহাজ এসেই জেটিতে ভিড়তে পারছে। তাই আমরা কিছুটা স্বস্তিতে আছি। তারপরও সতর্ক আছি যেন বন্দরের কারণে পণ্য উঠানামায় বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত না ঘটে।”

পণ্য উঠানামা নির্বিঘ্ন করতে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর সচল থাকলেই হয় না। এর সঙ্গে যুক্ত কাস্টমস, শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, কন্টেইনার ডিপো, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, বাণিজ্যিক ব্যাংক, পণ্য পরিবহনে যুক্ত ট্রাক-কভার্ডভ্যান-লরিসহ সব বন্দর ব্যবহারকারী সমানতালে সচল থাকতে হয়।

কিন্তু ঈদের ছুটিতে শুধু বন্দর সচল থাকে। এমনকি বন্দর ভবনের সব বিভাগও খোলা থাকে না। ফলে দেখা যায়, ঈদের ছুটিতে শুধু বন্দরের ভেতরেই পণ্য উঠানামা, পরিচালন কার্যক্রম চলে। কিন্তু পণ্য বন্দরেই থেকে যায়।

বহির্নোঙরে আসা পণ্যবাহী দেশি-বিদেশি জাহাজ বন্দরে নিয়ে আসার কাজ করে মেরিন বিভাগ। আর পণ্য উঠানামার কাজটি করে বন্দরের পরিবহন বিভাগ। জাহাজ ভিড়িয়ে পণ্য উঠানামার কাজ করে বার্থ অপারেটর, টার্মিনাল অপারেটররা। ঈদের ছুটিতেও এসব সচল থাকে সমানতালে। কিন্তু শিপিং লাইন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা কাজ করে না।

ঈদের ছুটিতে সাধারণ দিনের মতোই জাহাজ আসা-যাওয়ার কাজ তদারক করেন বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “ঈদের তিন দিনে কোন জাহাজ কোন জেটিতে ভিড়বে, সেই বার্থিং শিডিউল আগেই নেওয়া হয়। ফলে ঈদের ছুটিতে কে কোথায় কাজ করবে, তা আমরা আগেই প্ল্যান করি। এভাবেই ঈদের ছুটিতেও জাহাজ সচল থাকে অন্যান্য দিনের মতোই।”

কন্টেইনার ইয়ার্ডের ৪৬% খালি

আমদানি হওয়া কন্টেইনারগুলো জাহাজ থেকে নামিয়ে ইয়ার্ডে রাখা হয়। আবার রপ্তানি হতে যাওয়া কন্টেইনার বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো থেকে এনে ইয়ার্ডে রাখা হয়। এরপর জেটিতে আসা জাহাজে সেগুলো উঠানামা করা হয়। ফলে পরিচালন কাজ সুষ্ঠু করতে কন্টেইনার রাখার স্থান পর্যাপ্ত থাকা দরকার।

চট্টগ্রাম বন্দরে এখন রাখা যায় ৫৩ হাজার ৫১৮ একক কন্টেইনার। অর্থাৎ ২০ ফুট দীর্ঘ ৫৩ হাজার ৫১৮টি কন্টেইনার রাখা সম্ভব এই বন্দরে। গত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিল ২৯ হাজার একক। অর্থাৎ খালি রয়েছে ইয়ার্ডের ৪৬ শতাংশ।

আবার জাহাজ থেকে নামার পর যদি বন্দর থেকে ছাড় না হয় তাহলে ইয়ার্ডে কন্টেইনার জমে যায়। এর আগে জরিমানা আদায় করেও পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো যায়নি। এবার সেই কাজটি করতে হয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষকে। কারণ বন্দরের ভিতরে অতিরিক্ত কন্টেইনার জমা নেই। যদিও যতদিন ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখা হবে, বন্দরের ততই লাভ। কারণ প্রতি তিনদিন ফ্রি টাইমের পর কন্টেইনার রাখার জন্য বাড়তি রাজস্ব দিতে হয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালক এনামুল করিম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বর্তমানে সক্ষমতার তুলনায় ইয়ার্ডে কন্টেইনার কম আছে। ফলে তা নিয়ে আমদের চিন্তা নেই। এবার কন্টেইনার সরানোর জন্য জরিমানার প্রজ্ঞাপনও জারি করতে হয়নি।”

আমদানি-রপ্তানি পণ্যের সব জমে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে।

তাহলে কি আমদানি-রপ্তানি কমেছে

সাধারণত দুই সময়ে বন্দরে জাহাজজট, কন্টেইনারজট বেশি তৈরি হয়। এক, যখন রোজার জন্য ভোগ্যপণ্য আমদানি বাড়ে। দুই, বাজেট ঘিরে শুল্কহার কম-বেশি হওয়ায় আমদানি বাড়ে।

রমজান ঘিরে এবার আমদানি-রপ্তানি কেমন হয়েছে, সেই পরিসংখ্যানে একবার নজর দেওয়া যাক। জাহাজের মেইন লাইন অপারেটরদের হিসাবে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৮৮৬ একক। মার্চে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৪৮৭ একক। যেখানে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ছিল ৭৭ হাজার ৮৪১ একক আর মার্চে এর পরিমাণ ছিল ৯৮ হাজার ৭৩৬ একক। অর্থাৎ দুই মাসেই আগের বছরের তুলনায় আমদানি বেড়েছে।

আর রপ্তানির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে যেখানে রপ্তানি ছিল ৬১ হাজার ৯৯ একক, মার্চে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৭৫২ একক কন্টেইনারে। গত বছরের মার্চে রপ্তানি হয়েছিল ৫৫ হাজার ১৬০ একক কন্টেইনার। অর্থাৎ এবার রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে।

আমদানি বাড়ার পরও বন্দরের ইয়ার্ড খালি কেন- এমন প্রশ্নে বন্দরের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তা এনামুল করিম বলেন, “আধুনিক সব যন্ত্রপাতি যুক্ত করায় আমাদের পণ্য উঠানামার দক্ষতা বেড়েছে। সেইসঙ্গে আমদানিকারকরা এখন পণ্য এনে আগের মতো মাসের পর মাস অপ্রয়োজনীয়ভাবে ফেলে রাখার অবস্থায় নেই। প্রত্যেকটি পণ্য আমদানি করতে ঋণপত্র খোলা, বাড়তি শুল্কহারের ঝামেলা সামলাতে হয়েছে। তাই পণ্য এনেই তারা দ্রুত ছাড় করেছেন। সে কারণেই জট লাগেনি।”

বন্দরে এবার জাহাজ আসা-যাওয়ার সংখ্যাতেও বেশ তারতম্য দেখা গেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়িয়েছে ৩১৮টি। ফেব্রুয়ারিতে সংখ্যাটা ছিল ২৯৬টি, মার্চে ৩৩৬টি। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যা ছিল ৩৪৩টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩১২টি আর মার্চে ছিল ৩৭৫টি।

তুলনা করলে দেখা যায় ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে জাহাজ যাওয়া-আসা কমেছে।

তবে বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, জাহাজ আসা কমলেও পণ্য বেশি আসার মুল কারণ আগের তুলনায় বড় এক জাহাজে বেশি পণ্য আনা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত