Beta
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান

বিদেশি বিনিয়োগেই হবে পতেঙ্গার বে টার্মিনাল

ss-patenga-bay-terminal-240424

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সাগর উপকূলে প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল পুরোটাই বিদেশি বিনিয়োগে গড়ে উঠবে বলে নতুন তথ্য দিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম. সোহায়েল।

এতদিন চারটি টার্মিনালের মধ্যে দুটি টার্মিনাল বিদেশি বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, একটি বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজে এবং আরেকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে নির্মাণ-পরিচালনার কথা বলা হয়েছিল বন্দরের পক্ষ থেকে। চট্টগ্রাম বন্দর দিবস উপলক্ষে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য এল চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকেই।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ১৩৭তম বন্দর দিবস। ১৮৮৮ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিষ্ঠা পায়। তাই প্রতি বছর ২৫ এপ্রিল ঘটা করেই বন্দর দিবস পালন করা হয়। আর আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে বন্দরের বিভিন্ন অগ্রগতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন বন্দর চেয়ারম্যান।

বন্দর দিবসে শ্রমিক, কর্মী, বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে মেজবানি আয়োজন হয়। হয় আলোচনা অনুষ্ঠানও।

প্রতি বছর বন্দর দিবস এলেই বে টার্মিনালের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তার উত্তরে বড় স্বপ্ন দেখান বন্দর চেয়ারম্যান। গত অন্তত ১০ বছর ধরেই এমন আশ্বাস, আশার বাণী শুনিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফলে ঠিক কবে নাগাদ বে টার্মিনাল চালু হবে, সেই সময় জানা যায়নি।

বন্দর অডিটরিয়ামে এই সংবাদ সম্মেলনে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, “বে টার্মিনালের ভূমি পেয়ে গেছি। মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সব নকশা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আগে তিনটি টার্মিনাল থাকলেও এখন বে টার্মিনালে চারটি টার্মিনাল করা হবে। ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে দুটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে বিদেশি বন্দর প্রতিষ্ঠান।

“তরল জ্বালানি খালাসের জন্য একটি লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল করবে দেশীয় প্রতিষ্ঠান। আর বন্দরের নিজস্ব মাল্টিপারপাস টার্মিনালে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বিদেশিরা। অর্থাৎ বে টার্মিনালের পুরোটাই হবে বিদেশি বিনিয়োগে। সেগুলো চালু হলে সত্যিকার বন্দর নগরের রূপ দেখা যাবে ৪-৫ বছর পর। তখন চট্টগ্রাম বন্দর হবে হাব পোর্ট।”

নতুন নকশা অনুযায়ী, বে টার্মিনালে চারটি টার্মিনাল হবে। একটি টার্মিনালে বিনিয়োগ-নির্মাণ-পরিচালনা করবে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড। আরেকটি টার্মিনাল করবে সিঙ্গাপুরভিত্তিক পিএসএ সিঙ্গাপুর। দুটি টার্মিনালাই পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হবে। তবে সেই প্রস্তাব এখনও চূড়ান্ত রূপ পায়নি। বন্দরের নিজস্ব মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি আগে বন্দরের নিজের বাস্তবায়নের কথা থাকলে সেটি এখন আবুধাবি পোর্ট নির্মাণ করবে। এই তিনটি টার্মিনালে মোট ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব আছে সরকারের কাছে।

বাকি থাকে আরেকটি লিকুইড টার্মিনাল। দেশি প্রতিষ্ঠান আজম জে চৌধুরীর ওমেরা টার্মিনালস কিছুদিন আগে সেখানে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। তখন তারা নিজস্ব বিনিয়োগে এই টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিল। এখন বন্দর চেয়ারম্যান বলছেন, সেই টার্মিনালেই আসছে বিদেশি বিনিয়োগ।

সাগরপাড় ঘিরে পতেঙ্গা থেকে রাসমণি ঘাট পর্যন্ত সোয়া ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৩০০ একর জমিজুড়ে এই বে টার্মিনালের মেগাপ্রকল্প নির্মাণের জন্য প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই টার্মিনাল নির্মাণের মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ৫০০ একর ভূমিও বুঝে নিতে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এর মধ্যে একটি এক হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল, একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল এবং অন্যটি দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল।

বে টার্মিনাল নির্মাণ হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে। এই টার্মিনালে ১০-১২ মিটার গভীরতা এবং যেকোনও দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়তে পারবে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে প্রবেশের জন্য জোয়ার-ভাটার অপেক্ষায় থাকতে হয়। ১০ মিটার গভীরতা এবং ২০০ মিটারের বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। বে টার্মিনালে সেই সীমাবদ্ধতা নেই। ফলে অনেক বড় জাহাজ সরাসরি কোনও জটিলতা ছাড়াই ২৪ ঘণ্টাই জেটিতে ভেড়ার সুযোগ পাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, “বতর্মানে কনটেইনার জাহাজ বহির্নোঙ্গরে আসার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে। ক্ষেত্রবিশেষে অন-অ্যারাইভেল জাহাজ জেটিতে ভিড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) প্রথম ৯ মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং আগের অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) একই সময়ের তুলনায় ৮.২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে ৩.২ মিলিয়ন একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং হবে বলে আশা করছি।”

তিনি জানান, বিগত এক বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ৪৩ হাজার বর্গমিটার কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। এ কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের ফলে অতিরিক্ত ৭ হাজার একক কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা বেড়েছে। পাশাপাশি আরও তিনটি নতুন কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে আসা রাসায়নিক পদার্থ নিরাপদে সংরক্ষণ ও ছাড়করণের লক্ষ্যে দ্বিতল বিশিষ্ট ৪ হাজার ২৭৫ বর্গমিটার আয়তনের একটি কেমিক্যাল শেড নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া কর্ণফুলী নদীর নাব্য রক্ষায় নদীর উভয় পাড়ে ২৮৫০ মিটার ব্যাংক প্রটেকশন কাজ শেষ হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত