বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য স্থানান্তর বা লাইটারিং কাজে নিয়োজিত ছোট জাহাজের মালিকরা এক হলো, গঠন করল নতুন সংগঠন ‘বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো অর্ডিনেশন সেল’ (বিডব্লিউটিসি)।
আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে নতুন সংগঠন দিয়ে জাহাজের সিরিয়াল দেওয়া হবে। এতে এই খাতে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা। মঙ্গলবার চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ঘোষণা আসে।
জাহাজের সিরিয়াল দেওয়ার কাজটি ২০০৩ সাল থেকে করে আসছিল বেসরকারি সংগঠন ‘ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি)’। সেই সংগঠনে জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব ছিল।
কিন্তু ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জাহাজ মালিকদের একটি সংগঠন ‘আইভোয়াক’ দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ তুলে ডব্লিউটিসি থেকে বেরিয়ে যায়। ডব্লিউটিসি ও আইভোয়াক নেতাদের মধ্যে চলে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, আসে মামলার হুমকি।
এরপর জাহাজ মালিকরা যে যার মতো করে জাহাজের সিরিয়াল দেওয়া শুরু করলে বহির্নোঙরে পণ্য খালাসে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা।
পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারি নৌ পরিবহন অধিদপ্তর হস্তক্ষেপ করে। সরকারিভাবেই জাহাজের সিরিয়াল দেওয়ার চেষ্টা হয়। গঠিত হয় নতুন কমিটি, কিন্তু সুফল মেলেনি তাতে। সিদ্ধান্তে অনড় থাকে ‘আইভোয়াক’। ফলে যে যার মতো করেই সিরিয়াল দিচ্ছিল।
পরে বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্তও গড়ায়। তিন মাস টানাপড়েন শেষে ‘বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (বিসিভোয়া), ‘কোস্টাল শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (কোয়াব)’ এবং ‘ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং (আইভোয়াক)’ এই তিনটি সংগঠনের জাহাজ মালিকরা মিলেই মঙ্গলবার নতুন সংগঠনের ঘোষণা দিল।
অনুষ্ঠানে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলম বলেন, “লাইটার জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সময়ের দাবি ছিল। তিন সংগঠনের নেতারা বিভাজন ভুলে এক হয়েছেন, এটাই স্বার্থকতা। সামনে ভারতের সাথে পণ্য পরিবহন শুরু হলে ব্যস্ততা বাড়বে। তাই নিজেদের মধ্য বিভাজন রাখা যাবে না।”
তিনি বলেন, জাহাজ চলাচলে চাঁদাবাজি আর চলবে না। পণ্য পরিবহনে সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করে গ্রহণযোগ্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে। সেটি বাস্তবায়ন হলে এর বাইরে কেনা জাহাজ চলতে পারবে না।
আগামী বছর থেকেই এই খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে আশাবাদী নৌ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
কীসের ভিত্তিতে সমঝোতা
প্রশ্ন উঠেছে, কী এমন ঘটনা ঘটলো যে জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠন হঠাৎ সমঝোতায় পৌঁছাল।
তিনটি সংগঠনের প্রকাশ্যে-নেপথ্যে সরকারি দলের প্রভাবশালীরা যুক্ত আছেন। ফলে এক হওয়ার পেছনে কোন স্বার্থ কাজ করছে, তা নিয়ে গুঞ্জন চলছে শিপিং খাতে।
বিষয়টি জানতে জাহাজ মালিকদের অন্তত ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুটি কারণে এই সমঝোতা হয়েছে।
একটি হচ্ছে, গত তিন মাস ধরে জাহাজ মালিকরা ব্যবসা হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। জাহাজ মালিকরা যে যার মতো করে আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জাহাজের ট্রিপ নিয়েছেন। এই প্রতিযোগিতা দিতে গিয়ে নির্ধারিত ভাড়ার কমে পণ্য পরিবহন করেছেন। ফলে ভাড়া অনেক কমে গেছে। আর নেতারা ট্রিপ কম পাচ্ছিলেন। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা-পুঁজি আরও হারাবেন, এই শঙ্কায় জাহাজ মালিকরা এক হতে বাধ্য হয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, নতুন সংগঠনে প্রত্যেকেই নিজেদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছেন। জাহাজ ভাড়া বাবদ কমিশন, কে কাকে কীভাবে ছাড় দেবেন এসব বিষয়ে অলিখিত সমঝোতায় পৌঁছেছেন। আর পরস্পরের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির কাদা ছোড়াছুড়ি আর করবেন না বলেও একমত হয়েছেন।
ডব্লিউটিসি’র বদলে বিডব্লিউটিসি
মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকেই সমঝোতার গুঞ্জন চলছিল। মঙ্গলবার ঢাকা থেকে জাহাজ মালিক নেতা, পণ্য পরিবহন এজেন্ট নেতা, নৌ পরিবহন খাতের প্রভাবশালী বেশ কজন নেতা চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম পাড়ায় বসে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
চার ঘণ্টার আলোচনায় সমঝোতায় পৌঁছায় তারা। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ঘোষণা আসে।
যেখানে চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, বিসিভোয়ার সাবেক সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমদ, নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলমসহ জাহাজ মালিকদের তিন সংগঠনেরই শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিডব্লিউটিসিতে তিনটি সংগঠনের তিনজন করে প্রতিনিধি, জাহাজের স্থানীয় এজেন্টের দুজন এবং পণ্যের এজেন্টের দুজন করে মোট ১৩ সদস্য রাখার বিষয়ে মতৈক্য হয়।
এই কমিটির আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে সমন্বিতভাবে লাইটার জাহাজ পরিচালনার বিষয়গুলো ঠিক করার কথা রয়েছে। এজন্য তিন সংগঠনের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হবে।
তবে অফিস কি আগ্রাবাদের বর্তমান ডব্লিউটিসিতে হবে, নাকি নতুন কোথাও হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।
সাধারণ জাহাজ মালিকদের সংশয়
নতুন কমিটি গঠিত হলেও তা আসলে কতটি কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দিহান সাধারণ জাহাজ মালিকরা।
তারা বলছেন, ‘বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো অর্ডিনেশন সেল’ নামের সংগঠনে নতুন কিছুই হবে না। এটা অনেকটা ‘নতুন বোতলে পুরনো মদ’র মতো। কারণ এখানে জাহাজ পরিচালনার নীতিমালা হয়নি। জাহাব ভাড়া নির্ধারণ হয়নি। কাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি। গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে পরিচালনার সুযোগ নেই। ফলে সংগঠনের নেতারাই ঘুরে-ফিরে এর নেতৃত্বে থাকবেন।
তাদের ভাবনার সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, জাহাজের সিরিয়াল লঙ্ঘনের ঘটনা তদারক করবে কে? সিরিয়াল লঙ্ঘনকারী নেতাদের শাস্তি কে দেবে?
এসব বিষয়ে সাধারণ জাহাজ মালিকরা চিন্তিত হলেও নেতাদের রোষানলে পড়ার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছে না।
এক জাহাজ মালিক তো বলেই ফেললেন, “স্বার্থের কারণেই জাহাজ মালিক নেতারা পরস্পর দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন, এখন গোপন সমঝোতা হয়েছে। ৬০০ কোটি টাকার অনিয়মের যে অভিযোগ আইভোয়াক থেকে তোলা হয়েছিল, তা কি গিলে ফেলা হয়েছে?
“আর আগের মতোই নেতারা মাসে দুটি ট্রিপ পাবেন। আমরা তিন-চার মাসে একটি ট্রিপ পাব। আর আমি যদি চিল্লাই এসব কথা বলি, তাহলে একটি ট্রিপও মিলবে না।”
জাহাজ ভাড়া কমেছে কেন
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে দেশের ৩৪টি নৌ পথের গন্তব্যে ভাড়া নির্ধারণ করা আছে ডব্লিউটিসিতে। এরমধ্য থেকে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।
একটি লাইটার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে সিমেন্ট ক্লিংকার নিয়ে ঢাকায় যেতে ‘ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল’ এর নির্ধারিত ভাড়া ছিল টন প্রতি ৫৭০ থেকে ৬০০ টাকা। ডিসেম্বর থেকে সিরিয়াল যখন ভেঙে যায়, এরপর সাধারণ জাহাজ মালিকরা নিজেদের মতো আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পণ্য পরিবহন করেছেন। আর আমদানিকারকরা যেই ভাড়া অফার করেছেন, সেই ভাড়ায় তার পণ্য পরিবহন করেছেন। একটি ট্রিপ পেতে আমদানিকারকদের ধরনা দিচ্ছিলেন জাহাজ মালিকরা। জাহাজ মালিকদের এই অসম প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে জাহাজ ভাড়া কমে টন প্রতি ৪২০ টাকায় নামে।
ভাড়ার কমার পর কী জাহাজ মালিকদের লাভ হচ্ছে- জানতে চাইলে এক জাহাজ মালিক বলেন, “লাইটার জাহাজে পণ্য নিয়ে বহির্নোঙর থেকে ঢাকায় যেতে সব মিলিয়ে খরচ সাড়ে তিন লাখ টাকা। এখন ট্রিপে পাচ্ছি সাড়ে চার লাখ টাকা। অর্থাৎ এক ট্রিপে প্রায় এক লাখ টাকা মুনাফা থাকছে।”
অসম প্রতিযোগিতার কারণ জানতে চাইলে আরেক জাহাজ মালিক বলেন, “একদিকে ট্রিপ না পেয়ে জাহাজগুলো অলস বসে আছে। ব্যাংকের ঋণের কিস্তি গুনতে হচ্ছে। আবার শ্রমিকের বেতন দেওয়ার চাপ আছে। সবমিলিয়ে একটি ট্রিপ পেলে অন্তত জাহাজটি স্ক্র্যাপ বা ভেঙে ফেলা থেকে বাঁচানো যাবে। সেই চেষ্টায় আমরা নিরুপায় হয়েই কম ভাড়ায় গেছি।”
মধ্যস্বত্বভোগী কারা
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য প্রথমে বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজ বা লাইটারেজে স্থানান্তর করা হয়। এরপর নদীপথ ব্যবহার দেশের ৩৪টি গন্তব্যে নেওয়া হয়। এই কাজটি একচেটিয়া করতে ডব্লিউটিসি।
তিন সংগঠনে যুক্ত এমন লাইটার জাহাজের সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। কিন্তু দেশের বড় শিল্প গ্রুপ মালিকরা নিজেরা জাহাজ কিনে নিজেদের পণ্য নিজেরা পরিবহন শুরু করলে ডব্লিউটিসির নিয়ন্ত্রণ কমে আসে। এখন শুধু শিল্পগ্রুপের বাইরের জাহাজগুলোই সিরিয়াল দিচ্ছিল ডব্লিউটিসি।
অভিযোগ রয়েছে, গত ১০ বছরে ডব্লিউটিসির নেতারা বেপরোয়া হয়ে উঠেন। নেতৃত্বে থেকে তারাই নিয়ম ভাঙেন। একদিকে নেতাদের সবাই সিরিয়ালের বাইরে জাহাজ ভাড়া দেওয়া শুরু করেন। আবার বাড়তি ট্রিপ নিতে থাকেন। এর ফলে সাধারণ জাহাজ মালিক পুঁজি হারান । অনেকেই ট্রিপ না পেয়ে জাহাজ ভেঙে লোহা হিসেবে বিক্রি করে দেন। আবার পদে থেকে বিশেষ সুবিধা আদায় করতে না পেরে এবং সিরিয়ালের বাইরে জাহাজ চালাতে না পেরে আইভোয়াক নেতারা ডব্লিউটিসি থেকে বের হয়ে আসেন।
ডব্লিউটিসির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে, পণ্য পরিবহনে যৌক্তিক ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া নির্ধারণ করা। আর বাড়তি সেই টাকা লুফে নেয় নেতারা।
সিমেন্ট শিল্প মালিকরা বলেছেন, ৪২০ টাকায় যদি পণ্য পরিবহন করবেন তাহলে ৫৭০ টাকা কেন ভাড়া নির্ধারণ করেছিলেন?
জাহাজ মালিক নেতারা কী বলেন
আইভোয়াক মুখপাত্র পারভেজ আহমদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আগে ডব্লিউটিসিতে বিসিভোয়ার একক নিয়ন্ত্রণ ছিল। অন্যদের তেমন কথা বলার সুযোগ ছিল না। ফলে বিশৃঙ্খলা ছিল, কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছিল। নতুন সংগঠনে সবার সমান অধিকার, সম অংশগ্রহণ এবং ট্রান্সপারেন্ট হওয়ার কারণেই শৃঙ্খলা ফিরবে।”
নেতারাই তো নীতি ভেঙেছেন, সেটা কীভাবে ফেরাবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন সবার মতামতের ভিত্তিতে সংগঠন চলবে। ফলে সেটি করার সুযোগ থাকবে না। নতুন ভবনে, নতুন কমিটি নতুনভাবে কাজ শুরু করবে।”
সমঝোতার পর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ কি নেই হয়ে গেল- প্রশ্নে পারভেজ বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, সেগুলো আমরা মীমাংসা করবে। আর তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে, সেগুলো তারা মীমাংসা করবে। আর হিসাবের খাতায় ইজা (ইত্যকার জমা) টেনেই নতুন সংগঠন কার্যক্রম শুরু করবে।”
ডব্লিউটিসির আহ্বায়ক নুরুল হক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা একমত হয়েই নতুন সংগঠন করেছি। এখানে আগের মতো অনিয়ম হবে না। সেই সুযোগ নেই। সবাইকে সিরিয়ালে আসতে হবে।”
ডব্লিউটিসির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “সেগুলো আসলে কথার কথা। মুখে মুখে। অভিযোগ থাকলে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে হবে। বরঞ্চ আইভোয়াকই অনিয়ম করেছে, টাকা তছরুপ করেছে। তবে সেই অভিযোগ এখন আমরা আনছি না। ভুলে গেছি।”
ডব্লিউটিসি থেকে বের হয়ে ‘চট্টগ্রাম বিভাগীয় জাহাজ মালিক সমিতি’ নামের আলাদা একটি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করেন এ কে এম সামশুজ্জামান রাসেল। তাকে ফোন দেওয়া হলে তিনি সাড়া দেননি।
বিসিভোয়া’র নেতা ডব্লিউটিসি’র সাবেক কো কনভেনর গাজী বেলায়েত হোসেনকে ফোন দিয়ে তার সাড়াও পাওয়া যায়নি।