কোভিশিল্ড টিকা নিয়ে এক তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবার বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে মামলার পরিকল্পনা করছে।
যুক্তরাজ্যের আদালতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করেছে, তাদের কোভিশিল্ড টিকা বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এতে রক্ত জমাট বাঁধা ও প্লাটিলেট সংখ্যা কমতে পারে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি ভারতে ‘কোভিশিল্ড’ নামে সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এসআইআই) উৎপাদন করেছিল। এটি ব্যাপকভাবে বাজারজাত ও প্রয়োগও করা হয়েছিল।
টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি এসআইআই।
মৃত তরুণী করুণার (২০) বাবা ভেঙ্কটেশ গোবিন্দন জানান, অ্যাস্ট্রাজেনেকা অনেক দেরিতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আর এতদিনে অনেক জীবন নষ্ট হয়েছে।
সোশাল মিডিয়া এক্সে এক পোস্টে গোবিন্দন সিরাম ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, “রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যুর ঘটনায় ইউরোপের ১৫টি দেশ ওই টিকা ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছিল। তখনই এসআইআই এর উচিত ছিল টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া। শোকগ্রস্ত বাবা-মা বিভিন্ন আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন। কিন্তু তাদের আবেদন বিবেচনা করা হচ্ছে না।
“জনস্বাস্থ্যের নামে এই কার্যকলাপের ফলে আমাদের সন্তানদের মৃত্যু হয়েছে। এর প্রতিকার না পেলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও এই অত্যাচারের পুনরাবৃত্তি রোধে আমরা এই ঘটনার জন্য যেসব দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আছে তাদের সবার বিরুদ্ধে নতুন মামলা করব।
“আমরা আট জন নিহতের পরিবার এ বিষয়ে একমত হয়েছি। আমি আমাদের সবার অনুভূতির প্রতিধ্বনি হিসেবে কথা বলছি।”
ভেঙ্কটেশ গোবিন্দন এক্সের পোস্টে সিরাম ইনস্টিটিউট ও আদর পুনাওয়ালা ছাড়াও সরকারি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও সমালোচনা করেছেন। তিনি কোভিশিল্ড টিকা অনুমোদন দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে বলেন, “সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া ও আদর পুনাওয়ালাকে তাদের পাপের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।”
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারা যান ১৮ বছর বয়সী রিথাইকা। তার মা রচনা গাঙ্গু ও গোবিন্দন এর আগেই সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। আবেদনে তারা তাদের সন্তানদের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে মেডিকেল বোর্ড গঠন, টিকার প্রভাব শনাক্তে প্রাথমিক শনাক্তকরণ পদ্ধতি তৈরি করা ও মৃত্যুর ক্ষতিপূরণের দাবি করেছিলেন।
যুক্তরাজ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে ৫১ টিরও বেশি মামলা করা হয়েছে। এই মামলাগুলোতে অভিযোগ করা হয়েছে, কোম্পানিটির তৈরি কোভিড-১৯ টিকা কয়েকজনের মৃত্যু ও অনেকের গুরুতর স্বাস্থ্যহানির কারণ।
এসব মামলা ক্লাস অ্যাকশন মামলা হিসেবে পরিচিত। এর অর্থ হলো, অনেক ব্যক্তি একই অভিযোগ নিয়ে একত্রে মামলা করেছেন।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা সম্প্রতি স্বীকার করেছে যে তাদের কোভিড-১৯ টিকা ‘খুব বিরল ক্ষেত্রে’ থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম (টিটিএস) নামক রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি।