গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার দুদক কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
দুদকের এমন কথা জানানোর মাত্র একদিন আগেই শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে স্থায়ী জামিন পেয়েছেন ড. ইউনূস। এ মামলায় গত ১ জানুয়ারি এই নোবেলজয়ীকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয় আদালত। তবে এক মাসের মধ্যে আপিল করার শর্তে সেদিন তাকে জামিন দেওয়া হয়।
২৮ জানুয়ারি স্থায়ী জামিন পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় ড. ইউনূস জানান, সাজার রায়ে বিচলিত নন তিনি। তার ঠিক একদিন পরই দুদক চার্জশিট দেওয়ার কথা জানাল।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাছাড়া অবৈধভাবে অর্থ রূপান্তর করে স্থানান্তর করায় অভিযোগপত্রে মানিলন্ডারিং ধারাও দেখানো হয়েছে। মামলায় দুদক ১৩ জনকে আসামি করেছিল, তবে অভিযোগপত্রে আরও একজনের নাম যুক্ত করা হয়।
এতে আসামি করা হয় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, সাবেক এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মাইনুল ইসলামসহ ১৪ জনকে।
সোমবার কমিশনে অভিযোগপত্রটি জমা দেন দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার, এটিই পরে আদালতে পেশ করা হবে। গত বছরের ৩০ মে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে প্রধান বাদী হয়ে এ মামলা করেছিলেন গুলশান আনোয়ার।
দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সংবাদিকদের বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়।
তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভায় ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ৯ মে হলেও তার একদিন আগেই ব্যাংক হিসাব খোলা হয় এবং সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট ২৭ এপ্রিল হলেও এই এগ্রিমেন্টে ব্যাংক হিসাব দেখানো হয়—যা বাস্তবে অসম্ভব।
এরপর ওই অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময়ে লেনদেন হওয়া অর্থের হিসাব তুলে ধরে দুদক সচিব আরও বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং অ্যাডভোকেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টের শর্ত ভেঙে গ্রামীণ টেলিকম থেকে ওই অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে আত্মসাৎ করেছেন। দণ্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।