Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

লেনদেন বাড়ায় চাঙ্গাভাব পুঁজিবাজারে

ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of বিশেষ প্রতিনিধি, সকাল সন্ধ্যা

বিশেষ প্রতিনিধি, সকাল সন্ধ্যা

দীর্ঘ পতনের পর আকর্ষণীয় শেয়ারগুলোয় বিনিয়োগ বাড়ার মাধ্যমে চাঙাভাব এসেছে দেশের পুঁজিবাজারে। রবিবার দেশের দুই পুঁজিবাজারেই মূল্যসূচকের বড় উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১৫.১ শতাংশ বেড়ে লেনদেন ৮০০ কোটি টাকার ঘরে পৌঁছেছে। এদিন আরেক বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৩৮ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।

এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফেরার ইঙ্গিত মেলে।

রবিবার ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৭৬ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৬৯২ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্টে উঠেছে।

এদিন সিএসইতে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮০ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে ১৬ হাজার ২৩২ দশমিক ১২ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পুনঃনিয়োগের পর থেকে বাজারে উত্থান এসেছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে চার দিন বেড়ে সূচকে যোগ হয়েছে ১৭৩ পয়েন্ট।

গত ২৮ এপ্রিল বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে চার বছরের জন্য পুনঃনিয়োগ দেওয়ার আদেশ আসার দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১০০ পয়েন্ট বেড়েছিল। পরের কর্মদিবসেই অবশ্য ৪৬ পয়েন্ট পড়ে যায়।

এরপর টানা তিন কর্মদিবসে বাড়ে ১২৩ পয়েন্ট। এর মধ্যে ৩০ এপ্রিল ১৪ পয়েন্ট, ২ মে ৩০ পয়েন্ট এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবার বাড়ল ৭৬ পয়েন্ট।

কেবল সূচক নয়, বাড়তে শুরু করেছে লেনদেনও। উত্থান শুরুর আগে ২৫ এপ্রিল হাতবদল হয়েছিল ৫১১ কোটি টাকার শেয়ার। সেটি বাড়তে বাড়তে রবিবার ছাড়িয়েছে ৮১৭ কোটি টাকা, যা গত ৫ মার্চের পর সর্বোচ্চ।

দিন শেষে দাম বেড়েছে ২৫৯টি কোম্পানির, কমেছে ৯৮টির, আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ৪৪টি।

বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের চার বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে আসার কিছুদিন আগে থেকেই তাদের পুনঃনিয়োগ হবে কি না—তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা। এর মধ্যে গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে পুঁজিবাজারে শুরু হয় দরপতন।

পতন শুরু হওয়ার আগের দিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্ট। সেদিন পুঁজিবাজার ছিল ঊর্ধ্বগামী, লেনদেন হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকার বেশি।

সেখান থেকে পড়তে পড়তে গত ২৫ এপ্রিল সূচক নামে ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে, লেনদেন নেমে আসে ৫১১ কোটি টাকায়।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি বাজার মূলধন ছিল প্রায় ৭ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। ২৫ এপ্রিল তা নেমে আসে ৬ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকায়। বাজার থেকে হাওয়া হয়ে যায় ৭৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সেখান থেকে এই কয় দিনে ফিরেছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি।

রবিবারের বাজার

সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটেই সূচক বাড়ে ৪৭ পয়েন্ট। এরপর কিছুটা কমলেও পরে বাড়তে থাকে সূচক। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সূচক উঠে ৫ হাজার ৭০২ পয়েন্টে। দিন শেষে সেখান থেকে ২০ পয়েন্ট কমে সূচক স্থির হয় ৫ হাজার ৬৯২ পয়েন্টে।

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষ হয়েছিল পাঁচ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে।

১৩টি কোম্পানির দর সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে, অর্থাৎ এক দিনে যে পর্যন্ত বাড়া সম্ভব, বেড়েছে ততটাই। আরও একটি কোম্পানির দর বেড়েছে সার্কিট ব্রেকারের কাছাকাছি।

আরও তিনটি কোম্পানির দর বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি, ৭টির দর সাত শতাংশের বেশি, ১৩টির দর ৬ শতাংশের বেশি, ২২টির দর ৫ বা পাঁচ শতাংশের বেশি, ২৩টির দর চার শতাংশের বেশি, ৩৮টি কোম্পানির দর বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৬ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৬৯২ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচক ডিএসইএস ১৮ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৫০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএস-৩০ সূচক ২৫ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৩৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

লেনদেন হয়েছে ৮১৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৭১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

মোট ৪০১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৫৯টির; কমেছে ৯৮টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৪৪টির দর।

এদিন ডিএসইতে মোট লেনদেনের ২৭.৩ শতাংশ নিয়ে শীর্ষে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। লেনদেনে এগিয়ে থাকা আরও দুটি খাত হচ্ছে- বস্ত্র (১২.৮ শতাংশ) ও প্রকৌশল (১০.৪ শতাংশ)।

অন্য বাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮০ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে ১৬ হাজার ২৩২ দশমিক ১২ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে।

লেনদেন হয়েছে ৩৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। বৃহস্পতিবার এই বাজারে ১৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।

রবিবার সিএসইতে ২৩১টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে দর বেড়েছে ১৪২টির, কমেছে ৭০টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৭০টির দর।

‘বাজার এখন ভালো হবে’

গত কয়েক দিনের বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আশার কথা শুনিয়েছেন ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “টানা দরপতনে পুঁজিবাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়েছে। সবাই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছিল। এমনকি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রি করে ‍দিচ্ছিল। বিক্রির চাপে বাজার পড়তে পড়তে তলানিতে নেমে এসছিল। বাজার কিন্তু আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমার মনে হয়, বাজার এখন ভালো হবে।

“বাজার অনেক সংশোধন হয়েছে। সেটা শেষে দর বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, সেই সময়টি মনে হয় শুরু হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ বাড়াবেন, যাদের শেয়ার দর কমে গিয়েছিল তারা লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন।”

শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “বাজার নিয়ে যারা অপপ্রচার করছিল তাদের কয়েকজনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। বিনিয়োগ করার মতো যথেষ্ট শেয়ার এখনও বাজারে আছে, তা বিনিয়োগকারীরা জানতে পেরে বিনিয়োগ বাড়াতে শুরু করেছেন। এতেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাজার।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত