Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

শিবলী রুবাইয়াতকে পুনঃনিয়োগের দিনই পুঁজিবাজারে বড় উত্থান

ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of বিশেষ প্রতিনিধি, সকাল সন্ধ্যা

বিশেষ প্রতিনিধি, সকাল সন্ধ্যা

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পুনঃনিয়োগের দিনে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে বাজারে।

রবিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৯৭ পয়েন্টের বেশি বেড়েছে। এমন উত্থান অনেক দিন দেখা যায়নি। অন্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৮৪ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে দুই বাজারে।

এদিন ডিএসইতে আগের দিনের চেয়ে ২০ শতাংশ লেদেন বেড়েছে। মোট লেনদেন হয়েছে ৬১৪ কোটি টাকার মতো। লেনদেন হওয়া ৩৯৬টি সিকিউরিটিজের মধ্যে দাম বেড়েছে ৩০০টির, কমেছে ৫২টির ও অপরিবর্তিত ৪৪টির দাম।

ডিএসইতে এদিন খাতওয়ারি লেনদেনে এগিয়ে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। মোট লেনদেনের ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ হয় এ খাতে। এরপর ছিল বস্ত্র (১৬.৪ শতাংশ) ও খাদ্য (১৪.৩ শতাংশ) খাত।   

তবে টানা পতনের বাজারে হঠাৎ করে এই তেজিভাবের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বাজার বিশ্লেষকরা।

ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এই যে বাজার পড়তে পড়তে তলানিতে নেমে এল; আবার হঠাৎ করে সূচকের বড় উল্লম্ফন হলো—তার কোনও কারণই আমার কাছে নেই। এটা বাজারের স্বাভাবিক আচরণ নয়।”

তবে গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকের প্রভাব বাজারে পড়তে পারে বলে মনে করেন শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তিনি বলেন, “অনেক পড়ে গিয়েছিল, এখন ভালোর দিকে যেতে যারে।”

টানা পতনের পর সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৭ দশমিক ৩৬ দশমিক পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক পড়ে গিয়েছিল ৬০ পয়েন্ট। সূচকের ঘরে ৫৫১৮ পয়েন্ট নিয়ে রবিবার সকালে লেনদেন শুরু হয় ইতিবাচক প্রবণতায়।

আধা ঘণ্টার মাথায় সূচক কিছুটা কমে গেলেও এরপর ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। লেনদেন শেষ হয় সূচকে ৫৬১৫ পয়েন্ট নিয়ে।

অন্য দুই সূচক ডিএসইএস ১৬ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৩৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএস-৩০ সূচক ২১ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে ১৯৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকার বাজারে এদিন লেনদেন হয়েছে ৬১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার। তাতে ডিএসই একদিনেই ৮ হাজার ১৩১ কোটি টাকার বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে। আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ৫১১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

গত ২৩ এপ্রিল ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল ৫ হাজার ৬৩৩ পয়েন্ট। এর পরের দুই দিন সূচক নেমে গিয়েছিল ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে, যা ছিল গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

সিএসইতে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই রবিবার ১৮৩ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমে ১৫ হাজার ৯৯৯ দশমিক ৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ দিন এই বাজারে ১১ কোটি ১০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।

রবিবার সিএসইতে ২০৬টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে দর বেড়েছে ১১৩টির, কমেছে ৭১টির। আর অপরিবর্তিত ২২টির দর।

আড়াই মাসের কম সময়ে পুঁজিবাজারে ৮১৫ পয়েন্ট সূচক পতনের পর বিএসইসি বাজারে হস্তক্ষেপ করে।

গত বুধবার এক আদেশে বিএসইসি এক দিনে শেয়ার দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনে। তবে ফ্লোর প্রাইসে থাকা তিনটি কোম্পানির শেয়ারের দর কমতে পারবে না।

এরপরও বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ৬০ পয়েন্ট পড়ে যায়। বাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ ধরনের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করা হয় ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর পরিচালক পর্ষদের সদস্যরা বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন।

ওই সভায় শেয়ারদর কমার সীমা বেঁধে দেওয়ার বিরোধিতা করেন ডিএসইর পরিচালকরা।

একই দিনে বিএসইসির পক্ষ থেকে বৈঠক করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।

প্রতিষ্ঠানটিকে সক্ষমতা অনুযায়ী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। এসব উদ্যোগের মধ্যে রবিবার বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে বলে মনে করছে বিএসইসি।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম সকাল সন্ধাকে বলেন, “বাজারের পতন থামাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারী ও বাজারের উন্নয়নের স্বার্থে কমিশন নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে, যার ফলে বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরছে।

“এখন বিনিয়োগ উপযোগী শেয়ারের সংখ্যা অনেক। ভালো মানের শেয়ারের কতোগুলো এখনও প্রত্যাশিত দরের চেয়ে অনেক নিচে রয়েছে। সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে এলে বাজার আরও ভালো হবে।”

এদিকে বিএসইসি চেয়ারম্যান হিসেবে আবারও নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

রবিবার দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ শিবলী রুবাইয়াতকে চার বছরের জন্য পুনঃনিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে যুগ্মসচিব জাহিদ হোসেনের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে বিএসইসি আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ৫ (৬) অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১৭ মে থেকে বা যোগ দেওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী চার বছর মেয়াদের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান পদে পুনঃনিয়োগ দেওয়া হলো।

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত হবে।

গত ৩১ মার্চ শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে আরও এক মেয়াদে পুনঃনিয়োগ দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়।

এরপর ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাতে সই করেন বলে জানা যায়।

২০২০ সালে শিবলী রুবাইয়াতকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথম নিয়োগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত