কবিরাট কোহলি কমলা টুপিটা খুলে দিলেন আম্পায়ারকে। ব্যাট হাতে আসা সুনীল নারিনকে ‘গলা কাটা’র ভঙ্গি করে বোঝালেন, ‘‘বল হাতে আজ তোমাদের ভোগাতে আসছি’’। এটা নিছকই মজা করা। ইডেনের দর্শকরা মনে করছিলেন কোহলি হয়ত বোলিং ওপেন করবেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই টুপিটা নিয়ে কোহলি চলে যান ফিল্ডিং পজিশনে!
কোহলি মজা করলেও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে ছাড় দেননি কলকাতা নাইটরাইডার্সের ব্যাটাররা। তপ্ত দুপুরে ব্যাট হাতে ঝড় তুলে তারা করেছেন ৬ উইকেটে ২২২ রান। আইপিএলে এর আগে সর্বোচ্চ ২০৪ রান তাড়া করে জিতেছিল বেঙ্গালুরু। তবে এবারের আইপিএলে যেভাবে রান উৎসব হচ্ছে তাতে স্বস্তিতে থাকার কথা ছিল না কলকাতার।
শেষ পর্যন্ত বেঙ্গালুরু লড়াই করলেও রুদ্ধশ্বাস ম্যাচটা হারে ১ রানে। তারা শেষ বলে অলআউট হয় ২২১ রানে। তপ্ত দুপুরে দুর্দান্ত এক থ্রিলারের সাক্ষী হয় ইডেন।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য বেঙ্গালুরুর দরকার ছিল ২১ রান, হাতে ২ উইকেট। প্রায় ২৫ কোটি রুপিতে কেনা মিচেল স্টার্ককে সেই ওভারে স্তব্ধ করে দেন করণ শর্মা। প্রথম বলে ৬, দ্বিতীয় বলে রান নেই। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে আবারও দুই ছক্কা! কি হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছিল না ইডেনের গ্যালারি।
দর্শকদের তখন মাথায় হাত। শেষ দুই বলে দরকার ৩ রান। পঞ্চম বলে স্টার্কের বলে আউট হয়ে যান করণ। শেষ বলে ১ রান নিলেও দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে আউট লকি ফার্গুসন। ১ রানের নাটকীয় জয় পায় কলকাতা।
তাড়া করতে নেমে ৭ বলে ১ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ১৮ রানে হর্ষিত রানার হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কোহলি। তাতে হয়েছে রেকর্ড আরা বিতর্কও। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে নির্দিষ্ট একটা দলের হয়ে আইপিএলে ২৫০ ছক্কার নজির এখন কোহলির। ক্রিস গেইল বেঙ্গালুরুর হয়েই ২৩৯ আর একই দলের হয়ে এবি ডি ভিলিয়ার্স মেরেছিলেন ২৩৮ ছক্কা।
কোহলি আজ আউট হয়েছেন কোমর সমান উচ্চতায় আসা বলে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এটা নো বল ছিল কিনা? কোহলি সঙ্গে সঙ্গেই নেন রিভিউ। তবে নানা দিক বিবেচনা করা আউটের সিদ্ধান্তই দেন তৃতীয় আম্পায়ার। আউটটা মানতে না পেরে ক্ষোভ দেখিয়ে মাঠ ছাড়েন কোহলি। বার বার মাঠের আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্ক করেন কোহলি। বেশ ক্ষোভ দেখিয়েই ছাড়েন মাঠ। ডাগআউটে গিয়েও ক্ষুব্ধ বিরাটকে দেখা যায়, সতীর্থদের বলের উচ্চতা বোঝাচ্ছেন।
How is this not a no-ball? He was on his toes. Umpiring has been the worst in this fixed league.
— Virat Kohli Fan Club (@Trend_VKohli) April 21, 2024
Fixed Premier League@IPL pic.twitter.com/pmiFaoZlUB
কোমরের উপরে বল রয়েছে কি না সেটা জানতে নতুন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে আইপিএলে। প্রতিটি ক্রিকেটারের কোমরের মাপ দেওয়া রয়েছে প্রযুক্তির কাছে। বল কোন উচ্চতায় রয়েছে সেটাও মেপে নেওয়া হবে ওই প্রযুক্তি দিয়েই। সঙ্গে সঙ্গে দেখা নেওয়া যাবে বল সেই ক্রিকেটারের কোমরের উপরে রয়েছে না নীচে। সম্প্রচারকারী চ্যানেলে ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন, কোহলির কোমরের উচ্চতা মাটি থেকে ১.৪ মিটার। বল ছিল ১.২ মিটারের উচ্চতায়।
অর্থাৎ কোমরের নীচেই ছিল বল। তাছাড়া কোহলি ছিলেন ক্রিজের বাইরে। এজন্যই আউট দেন তৃতীয় আম্পায়ার। একটা সময় ১১ ওভারে ২ উইকেটে ১৩৭ করে জয়ের আশা জাগিয়েছিল বেঙ্গালুরু। তবে ১৮ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচের লাগাম হারায় তারা।
সেই ধাক্কা সামলে বেঙ্গলুরুকে ম্যাচে ফেরান সুয়াস প্রভুদেশাই ও আইপিএলে ২৫০তম ম্যাচ খেলতে নামা দীনেশ কার্তিক। শেষ ৫ ওভারে জয়ের জন্য বেঙ্গালুরুর দরকার ছিল ৪৯ রান। ১৮ বলে ২৫ করে ফেরেন সুয়াস। ১৮ বলে ২৫ করে ফেরেন সুয়াস। ১২ বলে দরকার ছিল ৩১ রান। কার্তিক ১৮ বলে ২৫ করার পর শেষ ওভারের সেই নাটক। শেষ পর্যন্ত শেষ হাসিটা কলকাতার।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে সুনিল নারাইন শান্তই ছিলেন। ১৫ বলে করেছেন কেবল ১০। তবে ওপেনার ফিল সল্ট ১৪ বলে ৭ বাউন্ডারি ৩ ছক্কায় ৪৮ করে দৃঢ় ভিত গড়ে দেন কলকাতার জন্য।
অধিনায়ক শ্রেয়াস আয়ার খেলেন ৩৬ বলে ৫০ রানের ইনিংস। শেষ দিকে রিঙ্কু সিং ১৬ বলে ২৪, আন্দ্রে রাসেল ২০ বলে ২৭ আর রমনদ্বীপ সিং খেলেন ৯ বলে ২৪ রানের ঝড়ো ইনিংস।
ঝড়টা বেশি গেছে ইয়াশ দায়ালের ওপর দিয়ে। ৪ ওভারে ৫৬ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের পেসার লকি ফার্গুসনের খরচ ৪৭ রান।