যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্টিগমা বা সামাজিক কুসংস্কার একটি বড় বাধা। এসব রোগীর ২৮ শতাংশ চিকিৎসাকালে স্টিগমার শিকার হন। তাতেেএ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) ও আইসিডিডিআর,বির (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) এক যৌথ জরিপে এমন তথ্য উঠে আসে।
গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নে দেশে প্রথমবারের মতো যক্ষ্মা ও স্টিগমা নিয়ে এই গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী, তাদের পরিবারের সদস্যদের গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ গবেষণায় অংশ নেয় রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা জেলার শহর ও গ্রামের যক্ষ্মা আক্রান্তরা।
মঙ্গলবার আইসিডিডিআরবির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলা হয়, যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীরা স্টিগমা বা সামাজিক কুসংস্কারের শিকার হয়। নানা ধরনের অপমানজনক ও নেতিবাচক আচরণের শিকার হয় তারা।
গবেষণার তথ্য বলছে, যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীদের ২৮ শতাংশ চিকিৎসাকালে স্টিগমার শিকার হন। পাশাপাশি স্টিগমার শিকার হন রোগীদের প্রায় ২২ শতাংশ পরিবারের সদস্যও। এমনকি নিজ বাড়িতেই স্টিগমার কবলে পড়েন ১৪ ভাগ যক্ষ্মা রোগী ও তার পরিবারের ১১ শতাংশ সদস্য।
যক্ষ্মা বিষয়ক স্টিগমার বেশি শিকার নারীরা, এমন তথ্যও উঠে এসেছে গবেষণায়। বলা হয়, নারী রোগীরা সামাজিকভাবে অসম্মান, হয়রানি ও আর্থিক অসুবিধার মুখে পড়েন।
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট সায়েরা বানু। সেমিনারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, “সমাজের এ স্টিগমা কাটিয়ে উঠতে হবে। তা না হলে যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা বাধাগ্রস্থ হবে। এ বিষয়ে তাই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।”
এসব সামাজিক কুসংস্কার বা স্টিগমা যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা গ্রহণের পথে বড় বাধা উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর মো. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, “সামাজিক এসব সংকট আমাদের মোকাবিলা করতে হবে এবং রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।”
আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ বলেন, “একসময় মানুষ যক্ষ্মা নিয়ে কথা বলতে ভয় পেত, এখন অনেকেই এসব নিয়ে কথা বলে। তবে সামাজিক এসব কুসংস্কারের কারণে রোগী এবং তার পরিবারের উপর যেসব প্রভাব পড়ে তা কাটিয়ে উঠতে হবে। তাহলে এই সংকটের সমাধান নিশ্চিত হবে।”