Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

ব্যাংক একীভূতকরণের বিপক্ষে ফরাসউদ্দিন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

জোর করে ব্যাংক একীভূত করার বিপক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তার মতে, একীভূত না করেও দুর্বল ব্যাংক ভালো করা যায়।

দেশের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সপ্তম এই গভর্নর বলেছেন, “ব্যাংক একীভূত করা সারা পৃথিবীতে আছে। কিন্তু এটা দুর্বল ব্যাংককে ভালো করার একমাত্র পন্থা নয়। যদি দুটি ব্যাংককে একীভূত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তাহলে ওই দুই ব্যাংকের অনুমতি নেওয়া বাঞ্ছনীয়। জোর করে একীভূত করা ঠিক হবে না বলে আমার মনে হয়।”

বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে সংগঠনটি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর এক সময়ের একান্ত সচিব ফরাসউদ্দিন ছিলেন ১৯৯৮-২০০১ মেয়াদে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তিনি এখন দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি।

তিনি জোর করে ব্যাংক একীভূত করাসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বা অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে দুর্বল ব্যাংক শনাক্ত করে সংস্কারমূলক ব্যবস্থা নিতে প্রমট্ কারেকশন অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পিসিএর আলোকে কোনও ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, মূলধন পরিস্থিতি, ব্যবস্থাপনার সুশাসন ও তারল্য পরিস্থিতি—এই ৪টি সূচকের ভিত্তিতে দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করে একীভূত করতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি একটি রোডম্যাপ হাতে নেয় ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।

ওই রোডম্যাপের অংশ হিসেবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় একীভূত না হলে আগামী বছরের মার্চ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।  

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এখন পর্যন্ত যে ১০টি ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার বাইরে আপাতত আর কোনও ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা তাদের নেই। একীভূত হলে ব্যাংকের সংখ্যা ৫টি কমে যাবে। এই অভিজ্ঞতার আলোকে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য ব্যাংক একীভূত করা হবে।

গত ১৮ মার্চ এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক একীভূতকরণে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাকাব একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএল একীভূতকরণের খবর পাওয়া গেছে।

এরপর গত ৪ এপ্রিল ব্যাংক কীভাবে একীভূতকরণ করা হবে—সে বিষয়ে নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ৮ এপ্রিল সিটি ব্যাংক ও বেসিক মার্জারের সিদ্ধান্তের পরের দিন ৯ এপ্রিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে বেসরকারি সিটির সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিকের একীভূত করা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বেসিককর্মীরা। আর ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদও একীভূত হতে নারাজ। তাদের অভিযোগ, একীভূতকরণের আলোচনায় এসব ব্যাংকের কাউকে রাখা হয়নি।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) একীভূত করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে রাজশাহীর ব্যবসায়ী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক জোটের সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার ইআরএফ সভায় মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, “উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে গঠিত বেসিক ব্যাংক সরকারকে লভ্যাংশ দিত। আস্তে আস্তে ব্যাংকটি খারাপ পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই দেশে যেসব ব্যাংককে এখন ভালো বলা হচ্ছে, সেগুলোর ২টিসহ মোট ৪টি দুর্বল ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে রেখে ভালো অবস্থানে নিয়ে এসেছে। কাজেই দুর্বল ব্যাংককে ভালো করতে একীভূতই একমাত্র পন্থা নয়, অন্য পন্থাও আছে।”  

রাকাবের বিষয়ে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, “উত্তর বঙ্গের কৃষিকে প্রচণ্ড অবহেলা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য রাকাব গঠন করা হয়েছিল। এখন যদি রাকাবকে একীভূত করা হয় তাহলে ওই এলাকার কৃষি খাত কিছুটা বেকায়দায় পড়তে পারে। এটাও বাংলাদেশ ব্যাংক ভেবে দেখতে পারে।”

তিনি বলেন, “ব্যাংকিং কমিশনের দরকার ছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারলে ব্যাংকিং কমিশনের দরকার হবে না।”

সারা বিশ্বেই প্রতিনিয়ত ব্যাংক বন্ধ হচ্ছে উল্লেখ করে ফরাসউদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশে সাধারণত একটি উৎকণ্ঠা কেন জানি আছে, একটা ব্যাংক বন্ধ হলে আমানত আর ফেরত পাবেন না। কিন্তু এটা একটি মনস্তাত্তিক সমস্যা।”

দেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এত ব্যাংককে ধারণ করার ক্ষমতা বাংলাদেশের নাই। তবে ব্যাংকের সংখ্যা কোনও বিষয় নয়, বিষয় হলো শাখার সংখ্যা।

“বাংলাদেশে একটি ব্যাংকের শাখা ১৫ হাজার লোককে সেবা দিয়ে থাকে। ভারতে একটি শাখা ১২ হাজার লোককে সেবা দিয়ে থাকে। কিন্তু আমানতের ৬০ শতাংশ যদি মতিঝিলে হয়, আবার ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ কিছু এলাকায় হয়, তাহলে সেটাই বিবেচনার বিষয়।”  

ব্যাংকের তারল্যসংকটের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক গভর্নর বলেন, “বারবার পুনঃতফসিল করার কারণে ব্যাংক খাতে এখন অর্থের টান পড়েছে। কত বছর যাবৎ বলছি যে টাকাকে অতিমূল্যায়িত রাখা ঠিক হচ্ছে না।”

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সমালোচনা করে ফরাসউদ্দিন বলেন, “আইএমএফ অনেক কিছু বলে। কিন্তু মুদ্রা পাচার নিয়ে কিছু বলছে না কেন?”

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যর্থ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “গত ১০ মাস যাবৎ ৯ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি, এতে মানুষের কষ্ট হয়।”

খেলাপি ঋণ গ্রাহক বেশি বড় হলে তার শক্তি অনেক বেশি হয়ে যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি বুঝি, ১০ হাজার টাকা খেলাপির জন্য চাষীভাইকে জেলে নেব, আর ১০ হাজার কোটি টাকা শিল্প ঋণের খেলাপি জন্য তাকে সালাম দেব, আমার পাশে বসতে দেব- এটা দীর্ঘদিন চলতে দেওয়া যাবে না।”

ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের পরিচালনায় আয়োজিত মতবিনিময় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত