Beta
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪

তামা, জিংক, অ্যালুমিনিয়ামের দামও কেন বাড়ছে

সোনা ও রুপার দাম বৃদ্ধি সাময়িক বিরতিতে, কিন্তু  বাড়ছে মৌলিক ধাতুগুলোর দাম।
সোনা ও রুপার দাম বৃদ্ধি সাময়িক বিরতিতে, কিন্তু বাড়ছে মৌলিক ধাতুগুলোর দাম।

তামা, অ্যালুমিনিয়াম ও জিংকের মতো ধাতুগুলোর দাম কয়েক মাস ধরে বাড়ছে। এগুলোর দাম বহু বছরের মধ্যে এখন সর্বোচ্চ। বাড়তে থাকা সোনা ও রুপার দামে সম্প্রতি লাগাম পড়েছে। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত ধাতুগুলোর দাম বাড়ছেই।

তামার দাম কেন বেড়েছে

বৈদ্যুতিক যানবাহন, পাওয়ার গ্রিড ও বায়ুচালিত টারবাইন তৈরিতে তামা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিশ্বের প্রধান প্রধান খনিতে তামা উৎপাদনে নানা বাধা-বিপত্তির কারণে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় বেশ কয়েক বছর ধরে তামার দাম বাড়ছে।

এই মাসে লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জে (এলএমই) অ্যালুমিনিয়াম, নিকেল ও তামার রাশিয়ান সরবরাহের উপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞায় তামার দাম আরও বেড়েছে। সোমবার এলএমইতে তিন মাসে তামার দাম প্রতি টন ৯৯৯৩.৩০ ডলারে পৌঁছেছে, যা দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

শিল্প খাতে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন ধাতু তামার বাজার আগামী তিন মাস স্বাভাবিক থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ক্রিসিল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালিটিকসের গবেষণা পরিচালক সেহুল ভাট বলেছেন, “বাজারে তামার ঘাটতি রয়েছে। তবুও আমাদের বিশ্বাস, সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি বাজারের মৌলিক বিষয়গুলোর চেয়ে এগিয়ে, কারণ সাংহাই ফিউচার এক্সচেঞ্জের গুদামের মজুত এই মাসে তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।”

অ্যালুমিনিয়ামের দাম কেন বাড়ল

রাশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাতু উৎপাদনকারী দেশ। বিশ্বব্যাপী জিংকের ৩ শতাংশ, অ্যালুমিনিয়ামের ৬ শতাংশ ও তামার ৪ শতাংশ সরবরাহ আসে রাশিয়া থেকে।

যদিও লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জে (এলএমই) নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ান ধাতু উৎপাদকদের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বাইরে তাদের পণ্য বিক্রিতে বাধা দেয় না, তবুও অ্যালুমিনিয়ামের দাম বেড়েছে। এলএমইতে এক মাস আগের তুলনায় গত সোমবার অ্যালুমিনিয়ামের দাম ১৫.৫৯ শতাংশ বেড়ে প্রতি টনে ২৬৬৯ ডলারে দাঁড়ায়।

সেহুল ভাট বলেছেন, “অ্যালুমিনিয়ামের বাণিজ্যের উপর এলএমই ও শিকাগো মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জের নিষেধাজ্ঞা এবং আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাধা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত এলএমইতে অ্যালুমিনিয়ামের ৯০ শতাংশের বেশি স্টক ছিল রাশিয়া থেকে আসা। এর ফলে অ্যালুমিনিয়ামের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে যায়।”

জিংক দুর্বল থেকে সবল

দামের দিক থেকে এই বছরের সবচেয়ে দুর্বল মৌলিক ধাতু ছিল জিংক। এলএমইতে জিংকের দাম বর্তমানে এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, তবে সরবরাহ বাড়লে বছরের মধ্যেই দাম আরও কমতে পারে। জিংকের দাম খুব বেশি বাড়বে না, কারণ এটি আবাসন খাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

অস্ট্রেলিয়ান অফিস অব দ্য চিফ ইকোনমিস্ট (এওসিই) তার ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর এবং চীনের সম্পদ বাজারে চলমান দুর্বলতার কারণে জিংকের চাহিদা একটু কম।

ফিচ সলিউশনের একটি ইউনিট গবেষণা সংস্থা বিএমআই বলেছে, ২০২৩ সালে দাম অনেক বৃদ্ধির পরে ২০২৪ সালে পরিশোধিত জিংকের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে জিংকের দাম টন প্রতি বর্তমান ২৮৫২ ডলার থেকে ৩০০০ ডলারে উঠতে পারে।

সোনার দাম কি শেষ সীমায়

সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পর আন্তর্জাতিক বাজারে গত মঙ্গলবার সোনার দাম দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে আসে। গত সোমবার সোনার দাম ২.৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল, যা ২২ মাসের মধ্যে একদিনে সবচেয়ে বেশি দরপতন। এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ১০ গ্রাম স্বর্ণের দাম রেকর্ড ২৪৩০ ডলারে উঠেছিল।

অ্যাবান্স হোল্ডিংসের সিইও চিন্তন মেহতা বলেন, “ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে বিরোধ কমতে দেখা যাওয়ায় সোনার দামেও তীব্র পরিবর্তন দেখা গেছে।”

রুপা কোন দিকে যাচ্ছে

রুপাকে সোনার মতো সম্পদের রক্ষক হিসেবে দেখা হয় না এবং এর দাম বাড়লে অনেক মুনাফা হতে পারে। সিএনবিসি টিভি১৮ এর সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে হিন্দুস্তান জিংকের সিইও অরুণ মিশ্র বলেছেন, শিল্প চাহিদা বৃদ্ধি এবং চলমান সরবরাহ ঘাটতির কারণে মূল্যবান ধাতুটির দাম ট্রয় আউন্স প্রতি বর্তমান দাম ২৮-২৯ ডলার থেকে ৩১-৩২ ডলারে উঠতে পারে। হিন্দুস্তান জিংক সম্প্রতি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রুপা উৎপাদনকারী হয়ে উঠেছে।

২০২৪ এর সম্ভাবনা

এই বছরের শুরুর দিকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রসপেক্টস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জিতেন্দ্র কাহন্দন এক ব্লগে লিখেছেন, ২০২৫ সালে স্থিতিশীল হওয়ার আগে বিশ্ব ব্যাংকের ধাতু মূল্য সূচক ২০২৪ সালে ৫ শতাংশ কমতে পারে।

তিনি বলেন, “বিভিন্ন ধাতুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে অ্যালুমিনিয়াম, টিন, দস্তা, সীসা ও তামার। ২০২৫ সালে মৌলিক ধাতুগুলোর দাম সামান্য বাড়বে। সীসার দাম ২ শতাংশ ও অ্যালুমিনিয়ামের দাম ৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।”

তথ্যসূত্র : ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত