Beta
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪

ধরিত্রী দিবস কী এবং কেন

প্রায় ২০০টি দেশের কোটি কোটি মানুষ ২২ এপ্রিলকে ধরিত্রী দিবস হিসেবে পালন করে।
প্রায় ২০০টি দেশের কোটি কোটি মানুষ ২২ এপ্রিলকে ধরিত্রী দিবস হিসেবে পালন করে।

প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে প্রতি বছর ২২ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় আর্থ ডে বা ধরিত্রী দিবস। এবছর ‘গ্রহ বনাম প্লাস্টিক’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দিনটি পালিত হচ্ছে।  

নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরিবেশের সুরক্ষা কতটা জরুরি, তা উপলব্ধি করতে পেরে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ প্রথম ১৯৭০ সালে ধরিত্রী দিবস পালন করে। এখন বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের কোটি কোটি মানুষ দিনটি পালন করছে।          

প্রথম ধরিত্রী দিবস

১৯৬৯ সালের ২৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান্টা বারবারা শহরের উপকূল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের একটি তেলকূপ হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়। এতে ১ কোটি ১০ লাখ লিটারের বেশি তেল গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ১০ লাখের বেশি সামুদ্রিক পাখি, ডলফিন, সিল, সি লায়ন সেসময় প্রাণ হারায়।

ভয়াবহ এই বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশকর্মীরা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশবিষয়ক শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে তারা সে সময় ধরিত্রী দিবস পালনের ওপর জোর দেন। 

এর ধারাবাহিকতায় সে বছর ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো কাউন্টিতে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর এক সম্মেলনে শান্তিকর্মী জন ম্যাককনেল পৃথিবীকে সম্মান জানাতে প্রথম একটি দিবস পালনের প্রস্তাব দেন।

পরের বছর ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটর ও পরিবেশবাদী গেলর্ড নেলসন ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির স্নাতকের শিক্ষার্থী ডেনিস হেইসের উদ্যোগে ২২ এপ্রিলকে ধরিত্রী দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়।   

সেনেটর নেলসন ও হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী হেইস উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতিসাধন নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ার সেই তেলকূপে বিস্ফোরণ এবং তার পরবর্তী ঘটনা তাদের উদ্বেগ বাড়ায়।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের পাতায় প্রথম ধরিত্রী দিবসের খবর।

নেলসন ও হেইসের লক্ষ্য ছিল, বছরের কোনও একটি দিন পরিবেশের সুরক্ষায় পালন করা হলে মানুষকে এর সঙ্গে যুক্ত করে পরিবেশ সচেতন করা সম্ভব। একই সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ে পরিবেশবান্ধব নীতি প্রণয়নে সরকারের ওপর চাপ দেওয়া যাবে।

১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ধরিত্রী দিবসে ২ কোটি মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। দুই দশক পর ১৯৯০ সালে এটি বৈশ্বিক রূপ পায়। এখন বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের ১০০ কোটির বেশি মানুষ ধরিত্রী দিবস পালন করে।          

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা আর্থডে ডট অর্গের প্রেসিডেন্ট ক্যাথলিন রজার্স বলেছেন, “ধরিত্রী দিবস পালন প্রায়ই অনেকের প্রথম পরিবেশবাদী পদক্ষেপ হয়ে থাকে।”   

এবছরের ধরিত্রী দিবস

২০২৪ সালের ধরিত্রী দিবসের প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে ‘গ্রহ বনাম প্লাস্টিক’। এর লক্ষ্য প্লাস্টিক দূষণের ফলে মানুষ ও পৃথিবীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো।     

আগের বছরগুলোতে ধরিত্রী দিবসে জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে শুরু করে প্রজাতি রক্ষা, গাছ রোপণের উপকারিতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।       

এবছর প্লাস্টিক দূষণকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ এনিয়ে জাতিসংঘের ঐতিহাসিক চুক্তি, যা ২০২৪ সালের শেষে হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।        

যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশ ২০৪০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এনিয়ে তারা জাতিসংঘের দ্বারস্থও হয়। সব ঠিকঠাক থাকলে এ বছরের শেষ নাগাদ ২০৪০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে চুক্তি হতে পারে।

তবে পরিবেশবাদী আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো প্লাস্টিকের বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষপাতি। তাদের দাবি, ২০৪০ সালের মধ্যে যেন সব ধরনের প্লাস্টিকের উৎপাদন ৬০ শতাংশ কমিয়ে ফেলা হয়।       

পৃথিবীর অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলছে প্লাস্টিক।

ধরিত্রী দিবসের অর্জন

১৯৭০ সালে প্রথম ধরিত্রী দিবস পালনের কয়েক বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাশাপাশি পরিষ্কার বায়ু আইনসহ বেশ কয়েকটি পরিবেশগত আইন প্রণয়ন করা হয় বা উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করা হয়।

আর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ গাছ রোপণ থেকে শুরু করে টেকসই চাষাবাদের পদ্ধতি অবলম্বনে কৃষকদের সহায়তা, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণে ধরিত্রী দিবসের অবদান অছে।        

পরিবেশবিষয়ক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করেন, প্রাণ-প্রকৃতিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে ধরিত্রী দিবস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

জাতিসংঘের সাবেক জলবায়ু প্রধান ইভো দে বুয়ার বলেন, “সমাজে নতুন-পুরাতন ইস্যুর ভিড়ে পরিবেশসংক্রান্ত ইস্যু অগ্রাধিকার তালিকার তলানিতে পড়ে যায়। এর মধ্যে ধরিত্রী দিবসের মতো কর্মসূচি স্বল্পমেয়াদী লাভের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি কী হয়, তা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।”               

২০১৫ সালে প্যারিসে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আটকে রাখার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল বিভিন্ন দেশ। ওই প্রথম তারা সমবেতভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা সীমিত রাখতে রাজি হয়েছিল। চুক্তিটি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নামে পরিচিত।

পরের বছর ২০১৬ সালে ধরিত্রী দিবসকে ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিক দিন হিসেবে নির্বাচন করা হয়।                  

ধরিত্রী দিবস নিয়ে সমালোচনা

সমালোচকরা মনে করেন, ১৯৭০ সাল থেকে পালিত হয়ে আসা ধরিত্রী দিবসের বিভিন্ন অর্জন প্রাণ-প্রকৃতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অগ্রগতি সম্পর্কে মানুষকে ভুল ধারণা দিয়ে আসছে।

তাদের মতে, মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে, নানা প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এমন কোনও পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত নিতে দেখা যায়নি যা আক্ষরিক অর্থেই এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করেছে। 

সমালোচকদের অভিযোগ, কিছু ব্যক্তি ও কোম্পানি ধরিত্রী দিবসের দিন তাদের ‘অর্জন’ এমনভাবে প্রচার করে, যা অবাক করে দেয়। পরিবেশের সুরক্ষার জন্য বাস্তবিক অর্থে যে পরিবর্তন দরকার, সেই দায়িত্ব পালন না করে তারা বিভ্রান্তি ছড়ায়।

এসব ব্যক্তি ও কোম্পানি ধরিত্রী দিবসকে বিভ্রান্তি ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তাদের এই কর্মকাণ্ডকে সমালোচকরা ‘গ্রিনওয়াশিং’ তকমা দিয়েছেন।

সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ।

উদাহরণ হিসেবে ২০২২ সালে সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের একটি টুইট এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। তিনি সেসময় টুইটারে (বর্তমানে এক্স) বলেছিলেন, “ধরিত্রী দিবস ক্ষমতাবানদের গ্রহের প্রতি ‘ভালোবাসা’ প্রদর্শনের সুযোগ করে দিয়েছে। একদিকে এদিন ক্ষমতাবানরা পৃথিবীর জন্য আবেগে ভেসে যান, অন্যদিকে একই সঙ্গে তারা সর্বোচ্চ গতিতে পৃথিবী ধ্বংসের আয়োজন অব্যাহত রাখেন।”              

এ বিষয়ে আর্থডে ডট অর্গের প্রেসিডেন্ট ও ধরিত্রী দিবসের আয়োজক ক্যাথলিন রজার্স বলেন, “আমরা সবাই জানি, গ্রিনওয়াশিং চলছে। কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধরিত্রী দিবসকে তাদের মতো করে ব্যবহার করছে।”

তথ্যসূত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত