প্রশ্ন : ঢাকায় কবে এসেছেন?
জামাল ভূঁইয়া : আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় ঢাকা বিমানবন্দরে নেমেছি। সেখান থেকে সোজা ধানমন্ডিতে আবাহনী ক্লাবে এসে পৌঁছালাম।
প্রশ্ন : শুনেছি এতদিন ওমানে ছিলেন…
জামাল : ঠিকই শুনেছেন। গত ১২ দিন ধরে ওমানে ছিলাম। সেখানে আমার এক বন্ধু থাকেন। উনি প্রায় ৩৫ বছর ধরে ওমানেই আছেন। তিনি ওমানের প্রিমিয়ার লিগের ৩ নম্বর দল ওমান ক্লাবে আমাকে অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এতদিন সেখানে অনুশীলন করেছি।
প্রশ্ন : আবারও বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগে খেলবেন। দেশে ফিরতে পেরে কেমন লাগছে?
জামাল : অনেক দিন পর দেশে ফিরতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আসলে আর্জেন্টিনা অনেক দূরের দেশ। ওখানে ট্রাভেলিং করা মানে জীবন একেবারে শেষ (হাসি)। বাংলাদেশকে মিস করেছি এতদিন।
প্রশ্ন: এবার বলুন আর্জেন্টিনায় খেলার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
জামাল : আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি আর্জেন্টিনা আলাদা দেশ। অন্য রকম পরিবেশ। তাই অভিজ্ঞতাও অন্য রকম ছিল। যদিও তৃতীয় বিভাগের ক্লাবে খেলেছি। কিন্তু বাংলাদেশের চেয়ে রাফ ফুটবল খেলে ওরা। ক্রুসিয়ানি (আবাহনীর আর্জেন্টাইন কোচ ডিয়েগো আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি) এটা ভালো করে জানেন। তিনি ভালো মতো বলতে পারবেন, ওখানকার ফুটবলের লেভেল কেমন।
প্রশ্ন : আপনি কি ধারে খেলবেন আবাহনীতে? নাকি আইটিসি (আন্তর্জাতিক ছাড়পত্র) পেয়েছেন?
জামাল : ওখানে প্রাক-মৌসুম চলছে। তবে ওদের সঙ্গে চুক্তি শেষ। শুধু আইটিসির জন্য অপেক্ষা করছি। সেটা এলে সরাসরি মাঠে নামতে পারব।
প্রশ্ন : এর আগে বাংলাদেশে শেখ জামাল ধানমন্ডি, সাইফ স্পোর্টিং, শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের মতো দলে খেলেছেন। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনীর জার্সিতে প্রথমবার দেখা যাবে। ব্যাপারটা ভাবতে কেমন লাগছে?
জামাল : ইনশাল্লাহ এবার আবাহনীর জার্সি গায়ে দেব, এজন্য রোমাঞ্চিত। আবাহনী মোস্ট ডেকোরেটেড ক্লাব ইন বাংলাদেশ, এটা সবাই জানে। যখন প্রথমে এ দেশে এসে শেখ জামাল ধানমন্ডিতে সাইন করি ওই সময় মনজুর কাদের ভাই ( শেখ জামালের তৎকালীন সভাপতি) বলেছিলেন উই ওয়ান্টস টু বি লাইক আবাহনী ক্লাব। তখনই বুঝতে পারি আবাহনী বড় ক্লাব। সেই ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়ে গর্বিত।
প্রশ্ন : কিন্তু এমন একটা সময়ে এসেছেন যখন আবাহনীর ক্রান্তিকাল চলছে। লিগ টেবিলের তিনে দলটি। শিরোপা লড়াই থেকে অনেকটা ছিটকে পড়েছে।
জামাল : সবই জানি। কিন্তু আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট। এটা সত্যি একটা কঠিন সময়ের মধ্যে যাচ্ছে আবাহনী। যেন এটা কাটিয়ে উঠতে পারি, সেই চেষ্টা থাকবে। অবশ্যই সময় লাগবে। বাট দি টিম ইজ গুড। দি কোচ ইজ গুড। দি ম্যানেজমেন্ট ইজ ব্রিলিয়ান্ট। আবাহনী উইল বি ব্যাক অন দা ফর্ম।
প্রশ্ন : ক্রসিয়ানির অধীনে আগেও খেলেছেন। তার চাওয়াতেই এখানে এসেছেন। এই কোচের সঙ্গে বোঝাপড়াটা কেমন হবে?
জামাল : দেখুন উনার অধীনে প্রায় ১ বছর খেলেছি সাইফ স্পোর্টিংয়ে। উনি আমাকে ভালো মত চেনেন। আমার জন্য এটা ভালোই হবে।
প্রশ্ন : এবার আসি জাতীয় দলের প্রসঙ্গে। বুধবার কোচ হাভিয়ের কাবরেরা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য নতুন দল ঘোষণা করেছেন। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে কেমন ফল প্রত্যাশা করছেন?
জামাল : জাতীয় দলে খেলা সব সময় বিশেষ কিছু। কারণ সারা দেশ তাকিয়ে থাকে এদিকে। আশা করি সবাই এবার ভালো করবে। সবাই চেষ্টা করব ভালো একটা ফল দেশবাসীকে উপহার দিতে। দেশকে ভালো একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। এখন আমার সব নজর শুধু ফিলিস্তিন ম্যাচে।
প্রশ্ন : দলে তিন নতুন মুখ রাব্বী হোসেন রাহুল, কাজেম শাহ কিরমানি ও তাজ উদ্দিন। এদের সম্পর্কে কিছু বলুন।
জামাল : এদের মধ্যে শুধু তাজের সঙ্গে সাইফ স্পোর্টিংয়ে খেলেছি। এরপর যখন শেখ রাসেলে গিয়েছি তখনই কোচকে তাজের কথা বলেছিলাম। ওই সময় কোচ ও ম্যানেজমেন্ট না করে দেয়। কিন্তু আমি জানি সে অনেক ভালো ফুটবলার। ওর বড় ভাইয়ের (সাদ উদ্দিন) মত সে অনেক ভালো ফুটবল খেলে।
প্রশ্ন : সম্প্রতি ইংল্যান্ড প্রবাসী ফুটবলার হামজা চৌধুরী নিয়ে অনেক আলোচনা, গুঞ্জন। তিনি বাংলাদেশ দলে যোগ দিলে সেটা কেমন হবে?
জামাল : হামজা যদি আসেন সেটা দল ও দেশের জন্যই ভালো। উনি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী লিগে খেলেন। আমি মনে করি হামজা এলে বাংলাদেশের জন্য ভালোই হবে।
প্রশ্ন : আবারও আর্জেন্টিনায় ফিরতে চাই। সম্প্রতি বুয়েনস এইরেসে ম্যারাডোনার বিশাল ছবির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। সেই ছবির ক্যাপশনে লিখেছেন ওয়ান অব মেনি আইডলস..
জামাল : আসলে বুয়েনস এইরেস শহরের মধ্যে অনেক ছবি, অনেক পোট্রেট আছে ম্যারাডোনার। এমনকি সেখানে একটা চার্চ আছে যেখানে মানুষ প্রার্থনা করে ওখানেও উনার ছবি আছে। আমি একটা স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিসের পর হাটাহাটি করতে গিয়ে উনার কত সুন্দর ছবি যে দেখেছি..।
প্রশ্ন : আর্জেন্টিনায় কে এগিয়ে জনপ্রিয়তায়? মেসি নাকি ম্যারাডোনা?
জামাল : সব জায়গায় মেসি আর ম্যারাডোনার ছবি আছে। ওখানে ম্যারাডোনা এখনও ১ নম্বর। মেসি দুয়ে। অথচ ম্যারাডোনা খেলতো আজ থেকে ৪০ বছর আগে। ভাবা যায়?
প্রশ্ন : মেসি বা ম্যারাডোনার বাড়িতে কি গিয়েছিলেন?
জামাল : আমি মেসির গ্রাম রোসারিওতে গিয়েছিলাম। ওটা বুয়েনস এইরেস থেকে উত্তরের ছোট গ্রাম। ৩ ঘন্টা লেগেছিল গাড়িতে যেতে। লাভালেজ্জা ৪০০ স্ট্রিটে ওদের বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখি অনেক গরীব গ্রামটা। সব কিছু দেখে মনে হচ্ছিল মেসি কতটা লড়াই করেছে ফুটবলার হতে। এখন সে কোথায় আর আগে কোথায় ছিল?
প্রশ্ন : বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
জামাল : ওরা আমাকে পেয়ে সবাই খুশি ছিল। অনেক সম্মান করেছে। বলত উই লাইক ইউ। উই লাভ বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের সময় বাংলাদেশ কিভাবে আর্জেন্টিনার সমর্থন দিয়েছে সেটা সবাই জানে। তাই যখন কোনও বাংলাদেশি মানুষ দেখতো আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ত। আমার একটা বিষয় তো ভীষণ অবাক করেছে।
প্রশ্ন : সেটা কেমন?
জামাল : কোনও রেস্তোরাঁয় গেলে সবাই ছবি, সেলফি তুলতে ছুটে আসতো। জিজ্ঞাসা করতো লোকে, আপনি কি বাংলাদেশি? এরপর শুরু হতো ছবি তোলার হিড়িক।
প্রশ্ন : এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
জামাল : আপনাকেও ধন্যবাদ।