Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

৮টি গুটিয়েছে ডানা, উড়তে যাচ্ছে ‘ফ্লাই ঢাকা’

নভেম্বরে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে চায় ফ্লাই ঢাকা।
নভেম্বরে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে চায় ফ্লাই ঢাকা।
Picture of অনিক রায়

অনিক রায়

বাংলাদেশের আকাশে উড়তে যাচ্ছে ‘ফ্লাই ঢাকা’। দেশের বেসরকারি ৮টি এয়ারলাইন্স এরই মধ্যে গুটিয়ে গেছে। যে তিনটি আছে সচল, সেগুলোও যখন খাবি খাওয়ার কথা বলছে, তখন ফ্লাই ঢাকা বিমানপথে সম্ভাবনা দেখে যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ফ্লাই ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বিমানযাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোই তার সুফল নিচ্ছে। তারা সেই ব্যবসায় ভাগ বসাতে চাইছে।

ফ্লাই ঢাকার মালিকানায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতা, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, যিনি এক সময় বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের সভাপতি ছিলেন।

দেশের দ্বাদশ বেসরকারি এয়ারলাইন্স হিসেবে লাইসেন্স নিয়ে চলতি বছরের নভেম্বরে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ফ্লাই ঢাকা।

ফ্লাই ঢাকা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবর সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সাশ্রয়ী মূল্যের পাশাপাশি নিরাপদ ভ্রমণকে অগ্রাধিকার দিয়ে এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট (এওসি) পেতে কাজ করছি আমরা। কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলছে।”

৮টি বন্ধ, টিকে আছে ৩টি

স্বাধীনতার পরের বছরই দেশের আকাশ পথে প্রথম উড়াল দেয় সরকারি সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানবাহিনীর একটি ডিসি-৩ উড়োজাহাজ দিয়ে শুরু হয় বিমানের যাত্রী পরিবহন। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে যাত্রী পরিবহন শুরুর তিন দিন আগে ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ লন্ডন থেকে ১৭৯ জন যাত্রী এনে প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালিয়েছিল জাতীয় পতাকাবাহী এই সংস্থা।

প্রথম বেসরকারি এয়ারলাইন্স পেতে বাংলাদেশের অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২৩ বছর। ১৯৯৫ সালে লাইসেন্স পায় অ্যারো বেঙ্গল এয়ারলাইন্স। ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরুর এক বছরের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় দেশের প্রথম বেসরকারি এয়ারলাইন্সটি।

এরপর একে একে আরও ১০টি এয়ারলাইন্স লাইসেন্স পায়। সেগুলোর মধ্যে জিএমজি এয়ারলাইন্স, এয়ার পারাবাত, এয়ার বাংলাদেশ, জুম এয়ারওয়েজ, বেস্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার, রয়েল বেঙ্গল এয়ারলাইন্স ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ গুটিয়ে গেছে। এর মধ্যে জিএমজি ও রিজেন্ট আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল।

বেসরকারি এয়ারলাইন্সের মধ্যে এখন চালু আছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রা।

ইউএস-বাংলার রয়েছে ২৩টি উড়োজাহাজ। নভোএয়ারের ৫টি এবং ২০২২ সালের নভেম্বরে যাত্রা শুরু করা এয়ার অ্যাস্ট্রার রয়েছে ৩টি উড়োজাহাজ।

এর মধ্যে ইতিহাদ এয়ারলাইন্সসহ চারটি বিদেশি বিমান সংস্থাও বাংলাদেশে তাদের কাজ গুটিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে ২৮টি বিদেশি এয়ারলাইন্স কাজ করছে দেশে।

যাত্রী সংখ্যায় রেকর্ড

বিমানযাত্রীর সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। গত বছর রেকর্ড সংখ্যক যাত্রী বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলো ব্যবহার করেছে। তবে এই যাত্রীদের বেশিরভাগই ব্যবহার করছে বিদেশি এয়ারলাইন্স।

বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) হিসাবে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলো ব্যবহার করেছে ১ কোটি ৭৪ লাখ যাত্রী। তাদের বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারী। সংখ্যাটি ২০২২ সালের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশি এবং বিদেশি উভয় নাগরিকের সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক যাত্রীর সংখ্যা গত বছরে আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২৬ লাখ বেড়েছে। কোভিড মহামারির আগের সময়ের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৩৭ শতাংশ।

যাত্রী বাড়ার কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে রেকর্ড জনশক্তি রপ্তানি, শিক্ষাগত অভিবাসন বৃদ্ধি, চিকিৎসা ও পর্যটন এবং ব্যবসায়িক ভ্রমণ।

কোভিড মহামারির পর বিশ্বেই বিমানযাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী বিমান ব্যবহারকারী যাত্রী প্রায় ৩৬ শতাংশ বেড়েছে।

কেন পারছে না দেশি এয়ারলাইনস

এত যাত্রী থাকার পরও কেন বাংলাদেশে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে? সেই প্রশ্নের নানা উত্তর পাওয়া যায়।

কেউ বলেছেন, উড়োজাহাজের ভাড়া সেই হারে বাড়েনি বলে ব্যবসায় টিকে থাকতে পারছে না বিমানসংস্থাগুলো।

দেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট সবচেয়ে বেশি।

২০১২ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ভাড়া ছিল সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা। এখন সেই ভাড়া ৪ হাজার ৪০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। অভ্যন্তরীণ অন্য রুটেও একই অবস্থা। যাত্রী হারানোর ভয়ে ভাড়া বাড়াতে না পেরে লোকসান গোনার কথা বলছেন একটি বিমান সংস্থার কর্মকর্তা।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, একটি প্রাইভেট এয়ারলাইন্স চালানোর জন্য যে ধরনের উদ্যোক্তা দরকার, যেমন দক্ষতা-ব্যবস্থাপনা দরকার, সেগুলো এখনও দেশে গড়ে ওঠেনি।

সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, দুটি কারণে এয়ারলাইন্সগুলো বন্ধ হয়েছে। একটি অব্যাহত লোকসান, অন্যটি ব্যবস্থাপনার ত্রুটি।

বাংলাদেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে ইউএস-বাংলা দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও পরিচালনা করে।

দেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সমস্যা কোথায়- জানতে চাইলে ইউএস-বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সরকারের ট্যাক্স, জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক। এর ফলে বিমান সংস্থাগুলোর লাভ করে চলা একেবারেই অসম্ভব।

“পৃথিবীর সব জায়গাতেই দেশীয় বিমান সংস্থাগুলোর চার্জ কম থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে তা উল্টো। এখানে চার্জ এত বেশি যে সব দিয়ে কোনওদিন লাভের মুখ দেখা যাবে না।”

কোন সম্ভাবনা দেখছে ফ্লাই ঢাকা

বিমানযাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধির সুযোগটি ফ্লাই ঢাকা নিতে চায় বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স প্রধান ফারাবি বিন জহির।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কোভিডের পর থেকে আমাদের এয়ারপোর্টে ট্রাফিক বেড়েছে। প্রতিবছরই যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, যাত্রীদের ম্যাক্সিমাম ক্যাপাসিটি ব্যবহার করছে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো। প্রায় ৮০ শতাংশ মার্কেট তাদের দখলে।

“আমাদের দেশের টাকাগুলো বিদেশে চলে যাচ্ছে। সেটাকে মাথায় রেখেই আমাদের আসা। আমরা মার্কেটের এই গ্যাপ দূর করতে চাই।”

আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ ফ্লাই ঢাকার কর্মকর্তারা।

যাত্রীদের আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক জায়গায় দেখবেন, বিজনেস ক্লাস এবং ইকোনমিক ক্লাসের যাত্রীদের সঙ্গে আচরণে ব্যাপক ফারাক থাকে। আমরা এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে চাই। আমরা সকল যাত্রীর জন্য তার যাত্রা সমান আরামদায়ক করতে চাই।”

অভ্যন্তরীণ রুটে এটিআর ৭২-৬০০ মডেলের উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা ফ্লাই ঢাকার। পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে, তখন এয়ারবাস কিংবা বোয়িং উড়োজাহাজ বহরে সংযোজন করবে তারা।

ফ্লাই ঢাকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে আকবর বলেন, “আমাদের লক্ষ্য কেবল দেশীয় বাজারে আধিপত্য বিস্তার করা নয়, বরং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে সেবা প্রসারিত করা। এজন্য এশিয়ার একটি জায়ান্ট এয়ারলাইন্সের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।”

নিয়ম অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ রুটে অন্তত এক বছর ফ্লাইট পরিচালনার পর আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। কারণ সেখানে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কাজ করতে যান।

ফারাবি বলেন, “কিন্তু এই রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সাথে নানান রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আমরা তাদের জন্যও ভ্রমণ আরামদায়ক করতে চাই। তাদের জন্য আমরা বিশেষ সুবিধা রাখব।”

দেশে অধিকাংশ বেসরকারি এয়ারলাইন্সের টিকতে না পারার বিষয়ে ফারাবি তখন ও এখনকার যাত্রী সংখ্যার তুলনা দেন।

তিনি বলেন, “একটা সময় ছিল, যখন শুধু উচ্চবিত্তরা বিমান ব্যবহার করত। ফলে এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রী পেত কম।

“কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। মানুষের কাছে সময় কম। রাস্তায় সময় অনেক লাগে, যানজটসহ নানান ঝামেলা হয়। ফলে মানুষ এখন ধীরে ধীরে আকাশ পথকে বেছে নিচ্ছে। এখন মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত এই শ্রেণির লোকজনও প্লেনে চলছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত