Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

নিট পোশাকে ভর করেই প্রবৃদ্ধি রপ্তানি আয়ে

ঘরোয়া পরিবেশে সাধারণত টি-শার্ট, পলো শার্ট ও ট্রাউজারজাতীয় পোশাক বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। এ কারণে এসব পোশাকের চাহিদাও বাড়ছে। প্রতীকী ছবি
ঘরোয়া পরিবেশে সাধারণত টি-শার্ট, পলো শার্ট ও ট্রাউজারজাতীয় পোশাক বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। এ কারণে এসব পোশাকের চাহিদাও বাড়ছে। প্রতীকী ছবি
Picture of আবদুর রহিম হারমাছি

আবদুর রহিম হারমাছি

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের দুটি উপখাত হচ্ছে ওভেন ও নিট। আগে নিটের চেয়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসত। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ওভেনকে পেছনে ফেলে ওপরে উঠে আসে নিট খাত। এখনও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে মোট ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ওভেন পোশাক থেকে এসেছিল ১৪ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার। আর নিট পোশাক থেকে এসেছিল ১৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার।

২০২০-২১ অর্থবছরে পাল্টে যায় চিত্র; নিট থেকে আসে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার। আর ওভেন থেকে আসে ১৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে ওভেন থেকে আসে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার; নিট থেকে আসে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বেশি, ২৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আসে মোট ৪৭ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নিট থেকে আসে ২৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার; ওভেন থেকে আসে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার কম, ২১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।

বৃহস্পতিবার ইপিবি রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে অর্থ্যাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ৪ হাজার ৭৪৭ কোটি ১৮ লাখ (৪৭.৪৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে তৈরি পোশাক থেকে এসেছে ৪ হাজার ৪৯ কোটি ৪২ লাখ (৪০.৪৯ বিলিয়ন) ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই ১০ মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ দশমিক ৫০ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।

এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২২ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ১১ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ৪ হাজার ৭৪৭ কোটি ১৮ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

হিসাব বলছে, জুলাই-এপ্রিল সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ মোট যে আয় করেছে, তার প্রায় অর্ধেকই এসেছে নিট পোশাক থেকে।

অন্যদিকে ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৭ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়নি। অর্থাৎ গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে যে বিদেশি মুদ্রা দেশে এসছিল, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে সেই একই পরিমাণ এসেছে।

এই ১০ মাসে ওভেনের চেয়ে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে ৫ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার বেশি আয় দেশে এসেছে।

সবশেষ এপ্রিল মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে দশমিক ১ শূন্য এক শতাংশ কম।

এই মাসে নিট পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে এই এপ্রিলে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে ২ শতাংশ বেশি আয় দেশে এসেছে।

অন্যদিকে ওভেন পোশাক থেকে এপ্রিল মাসে আয় কমেছে ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ।   

এই তথ্যই বলছে, নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রপ্তানি আয়ে বাংলাদেশ যে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, তা মূলত নিট পোশাক তথা কম দামি পোশাকে ভর করেই সম্ভব হয়েছে।

কেননা জুলাই-এপ্রিল সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত মাছসহ অন্য প্রায় সব খাত থেকেই রপ্তানি আয় কমেছে।

নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নানা সমস্যার মধ্যেও আমরা আমাদের নিট পোশাক রপ্তানির ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছি। দুই বছরের করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের রপ্তানি আয়ের যে উল্লম্ফন হয়েছিল, তা কিন্তু নিট পোশাকের ওপর ভর করেই হয়েছিল। এখন যুদ্ধের মধ্যেও সেটা অব্যাহত আছে।”

তিনি বলেন, “মানুষ যত সমস্যায়ই থাকুক, যত অর্থ সংকটেই থাকুক না কেন, অতি প্রয়োজনীয় কাপড় কিনতেই হয়। সে কারণে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় বাড়ছে।”

যুদ্ধের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে হাতেম বলেন, “যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সে কারণে ওই সব দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়েছিল। তারা তখন খাদ্য ও অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছিল।”

অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ মোট যে আয় করেছে, তার প্রায় অর্ধেকই এসেছে নিট পোশাক থেকে।

“নিট পোশাক যেহেতু অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য, তাই তারা বাধ্য হয়ে এগুলো কিনেছে। সে কারণে এই খাত থেকে আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল।”

সামনের দিনগুলোতে নিট পোশাকের রপ্তানি বাড়বে এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “সুসংবাদ হচ্ছে, আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ অন্য দেশে মূল্যস্ফীতি কমার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাতে আগামী দিনগুলোতে নিট পোশাক রপ্তানি আরও বাড়বে বলে আশা করছি।”

ওভেন পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি ও এভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিশ্বের সব দেশের অর্থনীতিতেই সংকট চলছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধটা সবকিছু ওলোটপালট করে দিয়েছে। সংকটের এই সময়ে বায়াররা অতি প্রয়োজনীয় পোশাক বেশি কিনেছেন। সে কারণে নিট পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে।”

নিত্যপ্রয়োজনীয় পোশাকই আসলে নিট পোশাক। সাধারণ কথায় গেঞ্জির কাপড়ের তৈরি পোশাকই নিট। যেমন টি-শার্ট, পলো শার্ট, সোয়েটার, ট্রাউজার, জগার, শর্টস প্রভৃতি।

ঘরোয়া পরিবেশে সাধারণত টি-শার্ট, পলো শার্ট, শ্যান্ডো গেঞ্জি, ট্রাউজারজাতীয় পোশাক বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। আরামদায়ক হওয়ায় সারা বিশ্বেই রয়েছে এ ধরনের পোশাকের জনপ্রিয়তা।

অন্যদিকে শার্ট, প্যান্ট, স্যুট-ব্লেজারজাতীয় ফরমাল পোশাক হচ্ছে ওভেন ক্যাটাগরির পণ্য।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত