Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
কাশ্মীরের মূক ও বধিরদের গ্রাম

ভালোবাসা যেখানে ভাষার বাধা অতিক্রম করে যায়

মুহাম্মদ শরিফের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা
মুহাম্মদ শরিফের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

নিজেদের সেরা সালোয়ার-কামিজ পরিহিত একদল পুরুষ যৌতুকের শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করছেন। পাশে রান্নাঘরে শুকনো ফল দিয়ে হালুয়া ও ঐতিহ্যবাহী লবণাক্ত কাশ্মীরি চা তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা।

হিমালয় পর্বতমালার কোলে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম দাদখাই। গ্রামেরই বাসিন্দা মুহাম্মদ শরিফের ঘরে ১৯ বছর বয়সী রেশমা শরিফ ও ২২ বছর বয়সী মুখতার আহমেদের আসন্ন বিয়ের পরিকল্পনা করতে জড়ো হয়েছে দুই পরিবারের সদস্যরা।

কনের বাবা ৪০ বছর বয়সী মুহাম্মদ শরিফের সামনেই সবাই আলোচনা করছেন দেনমোহর নিয়ে। শেষমেষ তারা ১২০০ ডলার নগদ ও কিছু স্বর্ণালঙ্কার যৌতুক হিসেবে ধার্য করেন। বয়স্ক পুরুষরা মৃদুস্বরে দোয়া পড়তে থাকেন, আর রান্নাঘর থেকে মিষ্টি খাবারের প্লেট হাতে বের হতে থাকেন নারীরা। গোলাপি ও সবুজ রঙে রাঙানো রুক্ষ কাঠের ছাদ ও মাটির মেঝের বাড়িটি যেন উৎসবের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে।

দুই পরিবার বিয়ের সব নিয়মকানুন মানলেও রেশমা ও মুখতারের বিয়ে অন্য সবার থেকে আলাদা হবে। কারণ এই গ্রামের অন্য অনেকের মতো কনে-বর দুজনেই মূক ও বধির।

এক শতাব্দী আগে প্রথম ঘটনাটি রেকর্ড হওয়ার পর থেকেই মূক ও বধির হওয়ার সমস্যা দাদখাইয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে বেড়াচ্ছে। প্রতিটি বিয়ের আনন্দের পাশেই স্বাভাবিকভাবেই এই চিন্তা মাথাচাড়া দেয়, নতুন দম্পতির সন্তানদের কী হবে? এমনকি বাবা-মা মূক ও বধির না হলেও তাদের সন্তানদের এই সমস্যা হবে কি না, সেই ভয় সবসময়ই তাড়িয়ে বেড়ায় তাদের।

কনের মা মিসরা বেগম ও বাবা মুহাম্মদ শরিফ। পেছনে বরের বাবা গুলাম খান।

শরিফ পরিবারের উৎসবে উপস্থিত গ্রামপ্রধান মোহাম্মদ হানিফ। তিনি বলেন, “অবিচল বিশ্বাসে আমরা এই ভয়কে মোকাবেলা করি, সাহসের সঙ্গে অন্ধকারে ঠেলে দিই।”

উৎসব চলতে থাকলেও, গুজ্জর সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রক্ষণশীল মূল্যবোধ অনুসরণ করে কনে রেশমা রান্নাঘরেই থাকেন। অন্যদিকে তার বাগদত্তা মুখতার অতিথিদের সেবা করছেন। খাবার পরিবেশনে সাহায্য করছেন এবং আত্মীয়রা তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

বারান্দার ঠিক বাইরেই গবাদিপশুদের দিকে তাকিয়ে আছেন ৬৩ বছর বয়সী বৃদ্ধ আলম হোসেন। তিনি ওই গ্রামের মূক ও বধিরদের একজন। তার পরিবারে একমাত্র তিনিই এমন।

হোসেন বলেন, “আমার শৈশবে কতজন মূক ও বধির ছিল, সেটা আর মনে নেই। বয়সের সঙ্গে স্মৃতিও ক্ষীণ হয়ে যায়।”

তিনি এক হাতের তর্জনি মাথায় স্পর্শ করে, অন্য হাতটি আকাশে তুলে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে স্মৃতি হারিয়ে ফেলার দুঃখ তাকে কতটা কষ্ট দিচ্ছে।

অবিবাহিত আলম বেশিরভাগ সময় একাই কাটান। গ্রীষ্মকাল ছাড়া তিনি কোনও কাজ পান না। তখন গবাদিপশুকে চরাতে নিয়ে যাওয়াই হয় তার কাজ। তিনি জানান, আগে মূক ও বধির গ্রামবাসীদের জন্য সঙ্গী খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। কিন্তু বছরের পর বছর এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ায় দাদখাইয়ের সামাজিক পরিবেশও বদলেছে।

সূত্রপাত

ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেরই দাবি করা জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলের পাহাড়ি ডোডা জেলায় অবস্থিত দাদখাই গ্রাম। ভারত-শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামটি হিমালয় অঞ্চলের সবচেয়ে দুর্গম গ্রামগুলোর একটি।

দাদখাই গ্রামে তীব্র ঠাণ্ডা, শুষ্ক বাতাস আর শীতকালে প্রচুর তুষারপাত হয়। সেখানে প্রায় ৩০০ পরিবারে আড়াই হাজার মানুষের বাস। তাদের অধিকাংশই মুসলিম গুজ্জর সম্প্রদায়ের। ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানজুড়ে ছড়িয়ে আছে এই সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের অনেকেই কৃষিকাজ ও পশুপালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন।

গ্রামপ্রধান হানিফ জানান, ১৯০১ সালে গ্রামে ফায়েজি গুজ্জরের ছেলে মূক ও বধির হয়ে জন্ম নেওয়ার মধ্য দিয়ে দাদখাইয়ে প্রথম এমন ঘটনা রেকর্ড করা হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা বাড়তে থাকে। ১৯৯০ সালে গ্রামে মোট ৪৩ জন মূক ও বধির ছিলেন। ২০০৭ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৭৯ জন।

গত বছরে গ্রামের রেকর্ড অনুযায়ী সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৮৩ জনে। তবে এই সময়ে গ্রামের মোট জনসংখ্যা কতটা পরিবর্তিত হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক মূক ও বধির ব্যক্তির বয়স প্রায় ৭০ বছর, আর কনিষ্ঠজনের জন্ম ২০১৯ সালে। উল্লেখ্য যে, এই সমস্যায় আক্রান্তদের অধিকাংশই নারী।

গ্রামটির এই সমস্যা বুঝতে ২০১৭ সালে ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিকেল রিসার্চ একটি গবেষণা প্রকাশ করে। গবেষণায় গ্রামবাসীদের জিনগত পরীক্ষা করা হয়। এতে গ্রামবাসীদের মধ্যে ‘ওটোফেরলিন’ নামক প্রোটিনের ঘাটতির কারণে জিনগত পরিবর্তনের উচ্চহার দেখা যায়। এই প্রোটিন শ্রবণশক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২০১২ সালে ইন্ডিয়ান জার্নাল অব হিউমান জেনেটিক্সে প্রকাশিত আরেক গবেষণায় বলা হয়, ছোট এই সম্প্রদায়ের মধ্যে নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হওয়ায় এই সমস্যা দ্রুত বাড়ছে। মুসলিম গুজ্জর সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেদের গোত্রের মধ্যেই বিয়ে করেন।

দাদখাই গ্রাম দীর্ঘদিন ধরে বহিরাগতদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। কয়েক দশক ধরে অসংখ্য গবেষক ও চিকিৎসক এই গ্রামে ভিড় জমিয়েছেন।

বশির আহমেদ, তার সাত সন্তানের মধ্যে তিনজনই মূক ও বধির।

তিনি বলেন, “প্রথমে গবেষকদের আগ্রহ দেখে খুশি হলেও, এখন গ্রামবাসীরা তাদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিয়ে ক্ষুব্ধ। শুরুতে মূক ও বধির মানুষেরা রক্তের নমুনা দিতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে যেত। কিন্তু এখন তারা বারবার রক্ত দেওয়া আর সহ্য করতে পারেন না।”

দাদখাই গ্রামের দৃশ্য।

দাদখাই গ্রামে পৌঁছতে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে চার ঘণ্টা হাঁটতে হয়। গ্রামের মধ্যে চলাচলের জন্য ঘাসের রাস্তাই স্থায়ী পথ হিসেবে কাজ করে। ২০২০ সালের আগ পর্যন্ত এই গ্রামের কোনো রাস্তা ছিল না। পাহাড় থেকে নেমে গাড়ি চলাচলের যোগ্য রাস্তায় পৌঁছতে মানুষকে প্রায় সাত কিলোমিটার হাঁটতে হতো।

আহমেদের মূক ও বধির সন্তানদের মধ্যে ২৩ বছর বয়সী আয়শা বানো সবচেয়ে বড়। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পরিবর্তে তিনি তার ভাগ্নির কাছ থেকে বুনন শিখেছেন। দিনের বেশিরভাগ সময় মোজা ও সোয়েটার বোনেন তিনি।

নিজের সব সন্তানকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন আহমেদ। কিন্তু তিনি বলেন, “মূক ও বধিরদের জন্য নিকটতম বিশেষায়িত বিদ্যালয়টি ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে জম্মু শহরে অবস্থিত। গ্রামে ইশারা ভাষা স্কুল থাকলে তাদের জন্য পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।”

আহমেদ তার মেয়েদের সঙ্গে ইশারায় কথা বলেন। ছেলের সঙ্গে কথা বলার সময় তার স্বর কঠোর ও কর্তৃত্বপূর্ণ। কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার সময় তার অভিব্যক্তি নরম হয়ে যায়।

কোন পুরুষ সদস্য না থাকলে বাড়িতে অপরিচিত কেউ এলে বানো কী করবেন?

বিষয়টি তিনি হাতের ইশারা দিয়ে ব্যাখ্যা করে বলেন, “যখন আমার দাড়িওয়ালা মানুষ (বাবা) ফিরে আসবেন, তখন আপনি আসতে পারেন।”

এই কথা বলার সময় সে তার বাবার কল্পনাপ্রসূত দাড়ি ধরেন। আর তার বাবা হাসতে থাকেন এই দৃশ্য দেখে।

অঙ্গভঙ্গির ভাষা

দীর্ঘদিন ধরে গ্রামটির মানুষ তাদের নিজস্ব ইশারার ভাষা তৈরি করেছে। গ্রামের সবার কাছে এটি বোধগম্য। প্রতিটি ইশারার স্বতন্ত্র অর্থ রয়েছে।

এই ইশারা ভাষায় অনেক অভিব্যক্তিই মজার ও অর্থপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ ‘নারী’ বোঝাতে নাকের পাশে ইশারা করা হয়। এটি গুজ্জরদের নাক ফুঁড়িয়ে সাজসজ্জার ঐতিহ্যের সঙ্গে মেলে। আবার ‘পুরুষ’ বা ‘পিতা’ বোঝাতে দাড়ি ধরে স্পর্শ করা হয়।

ছবি তোলার অনুরোধ জানাতে তারা তর্জনী দিয়ে বাতাসে একটি ফ্রেম আঁকে। আবার সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য সার্বজনীন ইশারাটিও ব্যবহৃত হয়, যেখানে তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলির ডগা পরস্পর স্পর্শ করে।

দাদখাইয়ের মূক ও বধির শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট উসমান শাফি। মাত্র চার বছর বয়সী এই ছেলেটির মা-বাবা দুই জনেই শুনতে ও কথা বলতে পারেন। উসমান খুবই চঞ্চল, বাইরে খেলতে ভীষণ পছন্দ করে। কিন্তু ভাষা বা কথা বলার ক্ষমতা না থাকা নিয়ে সে মোটেই চিন্তিত নয়। খেলনা, মিষ্টি আর বন্ধুদের সঙ্গে খেলাই তার আনন্দ।

মূক ও বধির শিশুদের অতিরিক্ত যত্ন ও সহায়তার প্রয়োজন হয়। কিন্তু গ্রামের মানুষের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ তাদের সম্পদ কম। উসমানের ক্ষেত্রে তার বড় বোন তাকে ইশারার ভাষা শিখতে সাহায্য করে। তবে উসমানের বাবা গ্রামের বাইরে কাজ করেন। তাই অধিকাংশ দায়িত্ব তার বোন কৌনসারের উপর পড়ে।

একাকিত্বই যখন নিয়তি

নিজের বাড়ির পাশে একা বসে থাকা এক নারী।

গ্রামপ্রধান হানিফের মূক ও বধির ছেলে আহমেদ। এখন তার বয়স ২০ বছর। কয়েক বছর আগে চিকিৎসার জন্য তাকে জম্মুতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেত। প্রায়ই পালিয়ে কয়েক দিনের জন্য জঙ্গলে ঘুরে বেড়াত ও গাছের তলায় ঘুমাত।

হানিফের মতে, একজন মূক ও বধির ব্যক্তি অবিবাহিত থাকলে তার জীবন আরও কঠিন হয়ে যায়। নির্ভরতা ও একাকীত্বের অনুভূতি জাগে। এমন অনেকে একাকীত্বকে তাদের ভাগ্য হিসেবে মেনে নিয়ে জীবন যাত্রায় সহচর ছাড়াই বাস করতে শেখেন।

হানিফের তিন ছেলের মধ্যে দুজনই মূক ও বধির। এদের মধ্যে আহমেদ এখনও অবিবাহিত। এছাড়া হানিফের দুই মেয়েও এই অবস্থা নিয়ে জন্মেছে।

অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকদের একজন মূক ও বধির এবং অন্যজন শুনতে ও বলতে পারেন, তাদের সন্তান স্বাভাবিক হয়। দাদখাই এলাকায় এখন মূক ও বধিরদের সঙ্গে স্বাভাবিক সুস্থ মানুষেরও বিয়ে হচ্ছে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন গ্রামটির প্রবীণেরা।

গ্রামটিতে মূক ও বধির নারীর সংখ্যা বেশি থাকায় প্রথমে পুরুষদের ওই নারীদের বিয়ে করতে রাজি করানো মুশকিল হতো। এক্ষেত্রে গ্রামের প্রবীণরা নিজেরাই উদাহরণ স্থাপন করেন। হানিফের নিজের এক মেয়ে ও ছেলেকে শুনতে ও বলতে পারে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। তাদের সন্তানদের কেউই মূক ও বধির হিসেবে জন্মায়নি।

জন্মের পরের তিনদিন

ভারত ও পাকিস্তানে ঐতিহ্যগতভাবেই চাওয়া হয়, গর্ভবতী মায়ের যেন ছেলে সন্তান হয়। এই ঐতিহ্য সেই সময় থেকে চলে আসছে যখন মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে, এমন ধারণা করা হত না।

কিন্তু দাদখাইয়ে গর্ভবতী মায়েরা মূক ও বধির সন্তানের জন্ম না হওয়ার জন্য প্রার্থনা করেন। কারণ এ অবস্থার সঙ্গে জড়িত চ্যালেঞ্জগুলো তারা এড়াতে চান। মূক ও বধির শিশুরা সাধারণত তাদের পরিবারের উপর নির্ভরশীল থাকে। সাধারণ স্কুলে যেতে পারে না ও তাদের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও সীমিত থাকে।

মূক ও বধির শিশুদের শারীরিক বিকাশও দেরিতে হয়। ফলে তারা একই বয়সের অন্য শিশুদের তুলনায় অনেক ছোট হতে পারে।

দাদখাই নিকটবর্তী গান্দোহ গ্রামের একটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, শিশুর বয়স দুই বছরের আগ পর্যন্ত মূক ও বধির অবস্থার সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যায় না। কারণ সাধারণত এই বয়সে বেশিরভাগ শিশুই কথা বলতে পারে।

শ্রবণ দুর্বলতা নির্ণয়ে শ্রীনগরের চিকিৎসক মুদাসির উল ইসলাম বলেন, “নবজাতক কোনও সাড়া না দিলে বোঝা যায় যে শিশুটি শুনতে পারছে না। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য উন্নত পরীক্ষার প্রয়োজন।”

কিন্তু দাদখাই গ্রামের মানুষেরা বিশ্বাস করেন, জন্মের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কোন শিশু মূক ও বধির হবে কিনা তা নির্ধারণের জন্য তাদের নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে। তারা জানান, জন্মের তিন দিনের মধ্যে এটি স্পষ্ট হয়ে যায়।

গ্রামের ফার্মাসিস্ট গোলাম নবী বলেন, “যখন শিশুর কানে প্রার্থনা পাঠ করা হয়, শিশুটি ভালো থাকলে সে চোখ খুলবে, দুর্বল কান্না করবে ও দুধ খাবে।” তার মতে, মূক ও বধির শিশুরা এসব আচরণ করে না।

বশির আহমেদ।

তবু জীবন সুন্দর

হানিফ, হোসেন, আহমেদরা তাদের জীবনের বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাদের নিজের অপূর্ণতাকে তারা ভালোবাসার শক্তি দিয়ে পূরণ করে নিয়েছেন।

তাই তো আহমেদ তার ঠোঁটে আঙুল রেখে বলেন, “ভালোবাসা, ভাষার বাধা অতিক্রম করে। নীরবতা আরও সুন্দর। শব্দ কখনও কখনও অনুভূতিকে হালকা করে দিতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ হলো হৃদয় থেকে হৃদয়ে সংযোগ।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত