রাজশাহীতে তিন দিনের ব্যবধানে প্রাণ হারানো দুই শিশুর শরীরে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ মেলেনি। পরীক্ষা শেষে আইইডিসিআর জানিয়েছে, তারা নিপা ভাইরাসে সংক্রমিত ছিল না।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন “দুই শিশুর নমুনা পরীক্ষায় নিপা ভাইরাস নেগেটিভ এসেছে। তবে তারা অন্য কোনও ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল কিনা সেই পরীক্ষা এখনও চলছে। এত তাড়াতাড়ি আমরা সব পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারব না।”
প্রাণ হারানো দুই শিশুর বাবা মনজুর রহমান (৩৫) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) গৃহিণী। তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে বসবাস করেন তারা।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় কুড়িয়ে আনা বরই না ধুয়ে খাওয়ার পর গত বুধবার সকালের দিকে জ্বরে আক্রান্ত হয় দুই বছরের শিশু মুনতাহা মারিশা। দুপুরের পর বমি শুরু হলে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হন বাবা-মা।
হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যায় শিশুটি। এরপর একইভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে মারিশার বড় বোন চার বছরের মুফতাউল মাশিয়া। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বিকালে মৃত্যুবরণ করে মাশিয়াও।
তিনদিনের ব্যবধানে মারা যাওয়া দুই শিশুর বাবা-মা বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দুই শিশুর বাবা-মা জানান জানান, গত বুধবার সকাল ১১টার দিকে তাদের ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে। সে বারবার পানি পান করছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে রাজশাহী সিএমএইচে যাওয়ার পথে কাটাখালী এলাকায় মারা যায় মারিশা। পরে দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে মারিশার মরদেহ দাফন করা হয়।
তারা জানান, এরপর শুক্রবার সকাল থেকে দুর্গাপুরের বাড়িতে থাকা মাশিয়ার শরীরেরও একই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রাজশাহী সিএমএইচে নেওয়া হয়। রাতে মাশিয়ার শরীরে ছোপ ছোট কালো দাগ উঠতে শুরু করে। পরে সিএমএইচের চিকিৎসকরা মাশিয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় মাশিয়াকে রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত আইসিইউতে ভর্তি নেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বিকালে মাশিয়াও মারা যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পলি খাতুন জানান, গত মঙ্গলবার সকালে তাদের কোয়ার্টারের গৃহকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসের গাছতলা থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। সেদিন তারা ভালোই ছিল। একসঙ্গে খেলেছেও।