Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

শহরজুড়ে এ কেমন ব্যাধি

বছরের শুরু থেকে শ্বাসকষ্ট, জ্বর আর সর্দি-কাশিতে ভুগছেন ঢাকার বাসিন্দারা।
বছরের শুরু থেকে শ্বাসকষ্ট, জ্বর আর সর্দি-কাশিতে ভুগছেন ঢাকার বাসিন্দারা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক তিনি। শ্বাসকষ্টে ভুগছেন সেই জানুয়ারি থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই অধ্যাপক বলেন, “জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ খুব শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সর্দি বা কাশি ছিল না। তবে দম নিতে অনেক কষ্ট হতো। ঘরের বাইরে বের হতে পারতাম না।”

সেসময় অক্সিজেন স্যাচুরেশন কখনও কখনও ৯২/৯৩ থাকত জানিয়ে তিনি বলেন, জানুয়ারির শেষ নাগাদ জ্বর ছিল ১০২ এর মতো।

দুই দফা অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছিলেন তিনি। এক্সরে করেও তেমন সমস্যা পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি শোনেন, এখন অনেকে এমন সমস্যায় ভুগছেন।

পুরো ফেব্রুয়ারি ও মার্চের শেষ নাগাদ শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে ভুগেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “গলায় এখনও কফ আটকে আছে। যেসব অনুষ্ঠানে গিয়ে কথা বলতে হয়, সেগুলোতে যাওয়া বন্ধ রেখেছি।”

সুমনা শারমিন কাজ করেন বেসরকারি এক উন্নয়ন সংস্থায়। তিনিও জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে ভুগছেন তিন মাস ধরে। তার এই অসুখ কখনও কমে, কখনও বাড়ে। এমন অসুখে আগে কখনও পড়েননি বলে জানান তিনি।

ঢাকার আরেক বাসিন্দা নুসরাত নওশীন গলাব্যথা, কাশি, সর্দি জ্বরে ভুগছেন দুই সপ্তাহ ধরে। গাব্যথার পাশাপাশি গলার স্বরও গেছে ভেঙে। অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও প্রতিকার পাননি। জানালেন, একবার কাশি শুরু হলে থামতে সময় নেয়।  

কেবল সুমনা বা নুসরাত নন, ঢাকা শহরজুড়েই এমন রোগী পাওয়ার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, যত ধরনের ওষুধ দেওয়া যায়, সব দিয়েও এই বিশেষ ধাঁচের অসুখ সারানো যাচ্ছে না।

অনেকের লক্ষণ কোভিডের সঙ্গে মিললেও পরীক্ষায় ফল এসেছে ‘নেগেটিভ’ । রোগীরা এই অসুখে মারা না গেলেও তাদের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছে। অনেককে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করাতে হয়েছে।

চিকিৎসকদের মতে, ঋতু পরিবর্তনের সময়ে ঠাণ্ডা-কাশিতে আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। সর্দি-কাশি বা জ্বরে আক্রান্তদের ওষুধ অদল-বদল করে দিয়েও সমস্যার সুরাহা করা যাচ্ছে না।

পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহবুব ময়ূখ রিশাদ সকাল সন্ধ্যাকে জানান, মরণাপন্ন দশা নয়, অথচ ভুগতে হয়েছে মাসের পর মাস, এমন রোগী পেয়েছেন তিনি। অসুস্থদের শরীর ওষুধেও দেরিতে সাড়া দিচ্ছিল।

আগের মতো রোগীদের দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “এক চিকিৎসকের মা আক্রান্ত হলেন। প্রথম দিন কেবল জ্বর ছিল। পরের দিন জানা গেল, তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। আইসিইউতে নিতে হলো। অক্সিজেন স্যাচুরেশন নেমে এলো ৮৪-তে। প্রথমদিন তাকে ৫ লিটার অক্সিজেন দিতে হলো। পরে সেটা হলো ৪০ লিটার। সাতদিন আইসিইউ এবং পরে আরও কয়েকদিন তাকে কেবিনে থাকতে হয়।”

জ্বর, সর্দি-কাশি থেকে একপর্যায়ে রোগীরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলেও জানান এই চিকিৎসক।

পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক- তা তুলে ধরে ডা. রিশাদ বলেন, “সদ্য অস্ত্রোপচার হওয়া এক রোগীর ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, কাশির দমকে তার সেলাই পর্যন্ত খুলে গেছে। সর্দি-কাশিতে ওষুধ খেলে সাতদিন না খেলে এক সপ্তাহ যে প্রবাদ ছিল- এবার সেটি আর হচ্ছে না।”

রাজধানীর ঘরে ঘরে মানুষ কেন এমন শারীরিক দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) কিছু জানাতে পারেনি।

মানুষের রোগ-ব্যাধি নিয়ে গবেষণা করে আইইডিসিআর। দেশের কোথাও অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে প্রতিষ্ঠানটি তা পর্যবেক্ষণের পর গবেষণায় নামে। রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে মতামত দেয়। প্রতিকার বা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়।

তবে সাম্প্রতিক এই রোগ নিয়ে আইইডিসিআর কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, এ বিষয়ে আইইডিসিআরকে কেউ কিছু জানায়নি। নজরদারিও হয়নি। তাই নতুন এই অসুখ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে তার কিছু বলার নেই।

তবে তাহমিনা শিরীন রোগটি নিয়ে নিজের মতামত সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটা ভাইরাসজনিত হতে পারে, আবার ব্যাকটেরিয়াজনিতও হতে পারে। এই রোগের পেছনে বহুবিধ কারণ আছে বলে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি।”

সরকারি বক্তব্য দিতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করতে হয় এবং তার জন্য আইইডিসিআরকে অবহিত করতে হয় মন্তব্য করে এর পরিচালক বলেন, “ইনফ্লুয়েঞ্জার নজরদারি আমরা করে থাকি। এখনও তেমন কিছু আমরা পাইনি।

“যখন কোনও রোগের প্রাদুর্ভাব নতুন করে হয়, তখন সেটার খবর সংবাদমাধ্যম বা হাসপাতাল থেকে আসতে হয়। আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে ফোন করেও রোগটি সম্পর্কে জানানো হয়। কিন্তু এই তিন মাধ্যমের কোনোটি থেকে আমরা সাম্প্রতিক সময়ে কোনও খবর পাইনি।”

আইইডিসিআর সারাবছর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ নজরদারি করে বলে জানান ডা. তাহমিনা। তিনি বলেন, সম্প্রতি সারাদেশের ১০টি বিভাগীয় হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা ৫০৬টি নমুনার মধ্যে কোনও ধরনের ফ্লুয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে এসময়।

রাজধানী শহরের বাসিন্দাদের এই ব্যাধি নিয়ে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, এ, বি, সি ও ডি ইনফ্লুয়েঞ্জা-এই চার ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস রয়েছে। শীতকাল ও তার পরবর্তী সময় বলতে গেলে ফ্লুয়ের মৌসুম। এসময় কেউ সংক্রমিত হলে সেটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

এবার যেটি হচ্ছে, তা নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার বলে মনে করেন মুশতাক হোসেন। তার মতে, এত দীর্ঘমেয়াদী কাশি এর আগে দেখা যায়নি। এর জন্য বায়ুদূষণকে দায়ী করেন তিনি।

ডা. মুশতাক আরও বলেন, ফুসফুসের সংক্রমণ দীর্ঘমেয়াদী হলে তখনই এমনটা দেখা দেবে। এটি একটি জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা। তবে এটা যে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা, তা প্রমাণ করতে হবে। “যারা এর আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফুসফুসের কর্মক্ষমতাও দুর্বল। এ বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে,” বলেন তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত