Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডোপ টেস্ট কতটা ফলপ্রসূ হবে  

cu-2
Picture of আসিফ সিদ্দিকী

আসিফ সিদ্দিকী

ক্যাম্পাস মাদকমুক্ত রাখার লক্ষ্য নিয়ে সম্প্রতি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট (মাদক পরীক্ষা) বাধ্যতামূলক করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে চূড়ান্ত ভর্তির আগে শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত কি না, তা পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তাদের সনদ দেওয়া হবে। সেই সনদ দেখিয়ে তবেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী হিসেবে দেখছেন শিক্ষক ও চিকিৎসকরা। তবে শিক্ষকরা মনে করছেন, নতুন শিক্ষার্থীদের চেয়ে অধ্যয়নরতদের ওপর এই পরীক্ষা করা হলে ক্যাম্পাস মাদকমুক্ত রাখার এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে বেশি।

অন্যদিকে চিকিৎসকরা উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, ডোপ টেস্টের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকলে অনেক শিক্ষার্থী এর বলি হতে পারে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত কিছু প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে। যেমন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট কোন প্রক্রিয়ায় করা হবে, তা এখন পর্যন্ত প্রশাসন জানে না। এছাড়া এই পরীক্ষার খরচই বা কে বহন করবে, তাও স্পষ্ট নয়।      

ডোপ টেস্ট চালুর ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যারয় দেশের দ্বিতীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে ২০২০ সালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথম ডোপ টেস্ট চালু করে।

পাহাড়ঘেরা ২ হাজার ৩শ একরের উপর প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ মুহূর্তে সাড়ে ২৭ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবু তাহেরের সভাপতিত্বে ডিনস কমিটি রবিবার ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত নেয়।

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মাদক পরীক্ষার বিষয়ে উপাচার্য আবু তাহের সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই- এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে আমরা এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

“প্রথমে যারা সফলভাবে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন, তাদের ডোপ টেস্ট করা হবে। এরপর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মীদের এই প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হবে।”

উপাচার্য আরও বলেন, “ডোপ টেস্টের বিষয়ে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ডিনের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিটি ডোপ টেস্টের জন্য আমরা সর্বনিম্ন ২০০ থেকে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করার চেষ্টা করছি।”

উপাচার্য আবু তাহের ডোপ টেস্ট ফি সর্বনিম্ন ২০০ থেকে ৫০০ টাকা নির্ধারণের কথা বললেও এই খরচ শিক্ষার্থী নাকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহন করবে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

অন্যদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, কোনও শিক্ষার্থীর ডোপ টেস্টে পজেটিভ আসলেই তাকে মাদকাসক্ত বলা যাবে না। কখনও কখনও ফলস পজিটিভ রিপোর্টও আসে। সেক্ষেত্রে একাধিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়ে প্রতিবেদন বা সনদ দিতে হবে।

ডোপ টেস্ট কোন প্রক্রিয়ায় হবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাশেদুল মোস্তফা।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কীভাবে বা কোন প্রক্রিয়ায় ডোপ টেস্ট করা হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আমরা সবেমাত্র ডোপ টেস্টের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলাম। এখনও অনেক সময় পড়ে আছে। ৩০ জুন নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে। তার হয়তো এক সপ্তাহ বা ১৫ দিন আগে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে।

“এখন যারা চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে, তারা ডিন অফিসে আসছে। এরপর মাইগ্রেশন চলবে। সবশেষে নিজ বিভাগে ভর্তি হয়ে তারা ব্যাংকে টাকা জমা দেবে। এর আগেই তাদের ডোপ টেস্ট করা হবে। ফলে সময় আছে,” যোগ করেন তিনি।

দেশের স্বার্থে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক রাশেদুল মোস্তফা বলেন, “এখন যারা নতুন ভর্তি হচ্ছে, তাদের মধ্যে মনে হয় না ডোপ টেস্টে খারাপ কিছু মিলবে। তারপরও আমরা দেশের স্বার্থে এই উদ্যোগ নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যারা পড়াশোনা করছে, তাদেরকেও এই কার্যক্রমে যুক্ত করা হবে।”

খরচের বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, “আমি মনে করি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই ফি বহন করা উচিত। বিষয়টি আমি উপাচার্যকেও বলব।”

এতগুলো ডোপ টেস্ট সনদ নির্ভুলভাবে এবং অনিয়ম ছাড়া কীভাবে করা হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, “আমরা সনদটা হার্ড কপি হিসেবে এনে ভর্তি চূড়ান্ত করব। আর মেডিকেল টিমের সঙ্গে আমরা নিজেরা থেকে এই কাজ করব। যাদের দেহে মাদক শনাক্ত হবে, তাদের ভর্তি বাতিল করা হবে।”

ডোপ টেস্টের ‍সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অন্তত ৮ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এটা অবশ্যই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যাতে আমাদের ভোগান্তির শিকার হতে না হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা দরকার।”

ডোপ টেস্টের জন্য দীর্ঘ লাইন কীভাবে এড়ানো যায়, সে বিষয়ে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী বলেন, “কর্তৃপক্ষের উচিত এক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য একেক দিন নির্ধারণ করা এবং অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। আর টেস্টে যাতে জালিয়াতি না হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।”

ক্যাম্পাস মাদকমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে, এ নিয়ে অবশ্য সন্দিহান শিক্ষকরা।  

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সদস্য এস এম মনিরুল হাসান বলেন, “নতুনদের জন্য ডোপ টেস্টের উদ্যোগ ভালো। তবে আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা এখন পড়ছে, আগে তাদের এই টেস্ট করা দরকার।

“বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে যারা থাকে, তাদের যদি ডোপ টেস্টের আওতায় আনা হয় এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর তাদের ডোপ টেস্ট করা হয়, তাহলে মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার যে উদ্যোগ, তা বাস্তবায়ন সম্ভব।”

চিকিৎসকরা যা বলছেন

২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের আগে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। এছাড়া গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পেতে এবং তা নবায়ন করতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সাধারণত প্রস্রাবের নমুনা নিয়ে নির্ধারিত ল্যাবরেটরিতে ডোপ টেস্ট করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্তকে ‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ’ উল্লেখ করে নগরীর বেসরকারি এপিক হেলথ কেয়ারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. দীপন চৌধুরী বলেন, “কোনও শিক্ষার্থী যাতে ভুল রিপোর্টের কারণে ভর্তি হতে না পারে, সেদিকে অবশ্যই কড়া নজর দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “প্রস্রাবের নমুনা থেকে নেওয়া পরীক্ষায় নেগেটিভ আসলে শিক্ষার্থী যোগ্য হিসেবে ভর্তি হতে পারবে। কিন্তু ‌‘ফলস পজিটিভ’ বলে একটি কথা আছে।

“শিক্ষার্থী থাকাকালীন অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শে ডিপ্রেশন বা হতাশা কাটাতে ওষুধ খান। এই ওষুধ খাওয়ার পর ডোপ টেস্ট করা হলে অনেক সময় ‘ফলস পজিটিভ’ রিপোর্ট আসে। তারা কিন্তু মাদকাসক্ত নন। ফলে এসব ওষুধ খাওয়ার কতদিন পর ডোপ টেস্ট করা যাবে, তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা দরকার।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত