Beta
শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪

৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত্যুহার ৩ গুণ

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরও দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত প্রায় ১০০ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরও দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত প্রায় ১০০ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরও দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত প্রায় ১০০ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। ৬০ বছরের বেশি বয়স এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্তদের মধ্যে এই মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি।

বুধবার এক সেমিনারে এই পরিসংখ্যান জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন।

আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআর,বি-র যৌথ উদ্যোগে ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল মহাখালীর আইইডিসিআর মিলনায়তনে।

সেমিনারে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স থেকে পাওয়া তথ্য জানান ডা. তাহমিনা শিরিন। তিনি বলেন, “স্বল্প সময়ের জ্বর এবং কাশির অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশের ইনফ্লুয়েঞ্জার উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। এদের মধ্যে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের ১০০ জনে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

“তবে ৬০ বছরের বেশি বয়স এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি।” 

আইইডিসিআর এমন সময়ে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করলে যখন ঢাকা শহরে জ্বর, ঠান্ডা, কাশিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জ্বর হলেই তা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে, কাশিও থাকছে দীর্ঘদিন।

নতুন জ্বরের এ ধরন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে নানা কৌতুহল। এই জ্বর নিতান্তই ভাইরাল কিনা, নভেল করোনাভাইরাসের নতুন কোনও ভ্যারিয়েন্ট কিনা, ডেঙ্গু বা টাইফয়েডের কোনও ধরন কিনা, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

যদিও আইইডিসিআর বা স্বাস্থ্য বিভাগ এসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেনি।

দেশে কোন সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ বাড়ে সে প্রসঙ্গে তাহমিনা শিরিন জানান, তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে বাংলাদেশে সারাবছরই ফ্লু শনাক্ত হয়ে থাকে। তবে বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ফ্লু আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার বেড়ে যায়। আর জুন এবং জুলাই মাসে এর প্রকোপ হয় সর্বোচ্চ। এই কারণে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।”

এজন্য তিনি মৌসুম শুরুর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিয়ে সুরক্ষিত থাকতে এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহারের প্রতি সতর্ক হওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।

সেমিনারে ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পরিচালিত দেশজুড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স থেকে পাওয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

সেখানে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (ইউএস-সিডিসি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরী সহায়তায় এই জরিপ পরিচালিত হয়।

সেমিনারে বলা হয়, বর্তমানে দেশের ১৯ টি হাসপাতালে চলমান এই জরিপের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমন ও মৌসুমী বৈচিত্র্য বোঝার পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন শনাক্ত।

সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দেশে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের টিকা বা ফ্লু-শট দেওয়ার সুপারিশ করেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।

সেমিনারে আইসিডিডিআর,বি বিজ্ঞানী ড. ফাহমিদা চৌধুরী বিশ্বব্যাপী ফ্লু সংক্রমণ নিয়ে কথা বলেন।

তিনি জানান, বিশ্বে প্রতি বছর দুই লাখ ৯০ হাজার থেকে ছয় লাখ ৫০ হাজার মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যবরণ করে।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, “চলমান এই ফ্লু মৌসুমে যদি জ্বর, সর্দি, কাশির মত লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যেন ওষুধের প্রতি রেজিসট্যান্স তৈরি না হতে পারে। এছাড়াও হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং কাশি দেওয়ার শিষ্টাচারগুলো সারাবছর মেনে চললে আমরা শুধু ইনফ্লুয়েঞ্জা বা শ্বাসতন্ত্রের অসুখ নয় অন্যান্য সংক্রামক রোগও প্রতিরোধ করতে পারব।”

আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, “২০০৮-২০১০ সালে আইসিডিডিআর,বি-র বিজ্ঞানী ড. কে জামান গবেষণা করে দেখেছিলেন যে গর্ভাবস্থায় মাকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দিলে মায়ের পাশাপাশি নবজাতকেরও ৬৩ শতাংশ রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। আর এই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতেই পরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গর্ভাবস্থায় মায়েদের ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেয়।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনফেকশাস হ্যাজার্ড ম্যানেজমেন্ট অফিসার ডা. এএসএম আলমগীর, ইস্টার্ন মেডিটার্নিয়ান পাবলিক হেলথ নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমানসহ অন্যরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত