মহাখালী বাস টার্মিনাল ও সংলগ্ন এলাকা ছিল রাজধানীবাসীর কাছে এক চরম ভোগান্তির নাম। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বাস, অবৈধ পার্কিং, টার্মিনালের ইনগেট ও আউটগেটে ব্যবস্থাপনার অভাব, টার্মিনালের সামনে অপ্রয়োজনীয় ইউটার্নসহ সব মিলিয়ে ছিল বাজে অবস্থা।
বুধবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে- ডিএমপির (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) ট্রাফিক পুলিশের শক্ত অবস্থানে সেই অসহনীয় যানজটের এখন রূপ পাল্টেছে। সড়কে ফিরেছে শৃঙ্খলা, স্বস্তিতে যাতায়াত করছেন নগরবাসী।
কিন্তু কীভাবে হলো এই পরিবর্তন
এবিষয়ে কথা হয় ট্রাফিক-গুলশান দক্ষিণের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এ.এস.এম হাফিজুর রহমানের সঙ্গে।
তার ভাষ্যে, মহাখালীর যানজট নিরসনে গত ৬ মে মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহন ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে ট্রাফিক-গুলশান বিভাগ বৈঠক করে। সেখানে টার্মিনালে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বাস, রাস্তার পাশে অবৈধ পার্কিং, টার্মিনালের ইনগেট ও আউটগেটে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব, টার্মিনালের সামনে অপ্রয়োজনীয় ইউটার্ন, সীমিত এলাকায় অতিরিক্ত তেল ও গ্যাসের পাম্প, এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মহাখালীতে নামার র্যাম্প স্থাপন, সীমা নির্ধারণ ও সমন্বয়ের অভাবসহ বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। এসব সমস্যা সমাধানে বেশকিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, “সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে শক্ত অবস্থানে নামে ডিএমপির ট্রাফিক-গুলশান বিভাগ। সঙ্গে আছে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের স্বেচ্ছাসেবকরাও। তারা টার্মিনালের সামনে এসে থামানো বাসগুলো অন্য জায়গায় সরে যেতে সহায়তা করছেন।”
‘বাস বে’চালু ও যত্রতত্র যাত্রী ওঠা-নামানো বন্ধ
মহাখালী ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার আরিফুর রহমান রনি বলেন, “বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী ওঠানো-নামানো সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। ‘বাস বে’গুলো সক্রিয় করা হয়েছে। ‘বাস বে’ ছাড়া লোকাল যাত্রীবাহী বাস যেমন দাঁড়াবে না, তেমনি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া দাঁড়াবে না।
“যত্রতত্র বাস দাঁড়ানো ও যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধে চালকদের এখন সতর্ক করা হচ্ছে। না মানলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মামলা করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে কোনও সতর্কতা থাকবে না। নির্দিষ্ট স্টপেজে বাসের যাত্রী গণনা করা হবে। পরের স্টপেজে যাত্রী ওঠানোর আগে সংখ্যা বেশি হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ট্রাফিক-গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মোমেন সকাল সন্ধ্যাকে জানান, বর্তমান ডিএমপি কমিশনারের অন্যতম উদ্যোগ হলো সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানজট দূর করা। সে লক্ষ্যেই কাজ চলছে।
তিনি বলেন, “মহাখালী এলাকার সমস্যা সমাধানে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের অনুরোধে মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকপক্ষ স্বেচ্ছাসেবক যুক্ত করেছেন। চালকদের সঙ্গে আমাদের মাঠপর্যায়ের ট্রাফিক সদস্যরা কথা বলছেন। অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসছে। বাস চালক ও যাত্রীরাও এই ব্যবস্থাপনায় অনেক খুশি।”
স্বস্তির যাত্রা
বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে- যেখানে সেখানে বাস দাঁড়ানো ও যাত্রী ওঠানো-নামানো হচ্ছে না। যান চলাচল শৃঙ্খলার স্বার্থে মহাখালীর সামনের সড়ক খালি রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাসগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে গুলশান-ট্রাফিক বিভাগের ডিসির নির্দেশে মহাখালীতে নতুন করে ইনকামিং সড়কে একটি বাস বে চালু করা হয়েছে। ‘বাস বে’ ছাড়া দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না কোনও যাত্রীবাহী বাসকে। বিশৃঙ্খলা করলেই বাস থামিয়ে সাবধান করছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।
নিয়ম না মানলে দেওয়া হচ্ছে মামলা। সঙ্গত কারণেই এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। এই এলাকার মূল সড়কে কমেছে যানজট। শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে মহাখালী বাস টার্মিনাল, মহাখালী রেলগেট, আমতলা ও কাকলী এলাকায়। ফলে দৃশ্যত ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে যান চলাচলে গতি বেড়েছে।
মহাখালী বাস টার্মিনালের ধারণক্ষমতা আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান।
তিনি জানান, মহাখালী বাস টার্মিনালের পেছনে অনেকটা জায়গা ব্যবহার করা হচ্ছে না। এটি মহাখালী টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত করা গেলে সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে। এনিয়ে ট্রাফিক পুলিশ পরিবহন মালিক-শ্রমিক পক্ষ এবং সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে।
মুনিবুর রহমানের মতে, এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামার একটা র্যাম্প মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে চালু করা হয়েছে। ওঠার জন্য আরেকটি র্যাম্প চালু হলে সড়কে যানবাহনের চাপ থাকবে না।