Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

ফিলিস্তিনিদের নারকীয় দিন নিয়ে ৫ সিনেমা

palestines movie
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

(মিডিয়াম ডটকমে প্রকাশিত হামজা শেহরিয়ারের লেখা নিবন্ধ থেকে অনুবাদ ।)

ফিলিস্তিনের গাজায় এখন যা চলছে তা গণহত্যা; এ কথা বলছেন বিশ্ব নেতারা।  

গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালিয়েছিল হামাস। ইসরায়েল সরকারের দাবি, হামাসের ওই হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়েছে; যারা অধিকাংশই বেসামরিক মানুষ। এছাড়া হামাসের হাতে জিম্মি হয় ২৪০ জন।

যদিও হামাস জানিয়েছে, তারা শুধু ইসরায়েলি সেনা আর অস্ত্র বহনকারীদের লক্ষ্য করে ওই হামলা চালিয়েছিল।

বদলা নিতে এরপর ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) পাল্টা হামলা চালিয়ে ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে; অর্থ্যাৎ গাজায় প্রতি ১৫০ জনের মধ্যে একজন নিহত হয়েছে ইসরায়েলের হামলায়। নিহতদের বেশির ভাগ ছিল নারী ও শিশু।

নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল; বাদ যায়নি হাসপাতাল, বিদ্যালয় এবং প্রার্থনাঘরও। ১৭ লাখ মানুষ ঘর ছেড়ে বাধ্য হয় গাদাগাদি করে এক লোকালয়ে থাকতে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, জনজীবনে নেমে আসা এই অনিরাপত্তাকে  ‘খোলা কারাগারে’ বাস বলছে । গাজাকে গুঁড়িয়ে দিতে আইডিএফের আগ্রাসী মনোভাব আগের যে কোনো যুদ্ধাপরাধকে ছাড়িয়ে গেছে বলে ঘোষণা দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।      

২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন জানায়, আইডিএফের আকাশ পথে হামলায়  প্রায় ডজন খানেক হামাস দলনেতা মারা গেছে। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, প্রতি একজন হামাস নেতাকে হত্যা করতে গিয়ে ১০০ জন সাধারণ মানুষের জীবন নিয়েছে ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনের মানুষের উপর নেমে আসা এই বিভীষিকা একেবারেই স্পর্শ করছে না ইসরায়েল সরকারকে। উল্টো বাইবেলে ইসরায়েল দখল করা আমালেক সম্প্রদায়কে মুছে ফেলার কথা বর্ণিত আছে বলে গাজায় চালানো নির্মমতাকে জায়েজ করার  প্রচেষ্টা চালান দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।   

ওল্ড টেস্টামেন্ট বা হিব্রু বাইবেলের দ্য বুক অব স্যামুয়েলে  বলা আছে, “এখুনি যাও, আমালেক গোষ্ঠীকে আক্রমণ করো এবং তাদের যা কিছু আছে সব ধূলিস্যাৎ করে দাও। তাদেরকে কোনোভাবেই ছাড় দেবে না; ওদের পুরুষ, নারী, শিশু, নবজাতক, গবাদিপশু এবং ভেড়া, উট ও গাধা সব মেরে ফেলো।”  বাইবেলে বর্ণিত এই অংশটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ফিলিস্তিনবাসীকে  ‘মানুষরূপী পশু’ বলে সম্বোধন করেছেন।  দেশটির ডান ঘরানার রাজনৈতিক দল  জেহুত পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মোশে ফেইগলিনও গাজার ধ্বংসে বদ্ধপরিকর। ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রী উগ্র ডানপন্থি ইতামারবেন-গাভির আহ্বান করে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের যেন শাস্তি দেওয়া হয়।

জর্ডান নদী এবং ডেড সি-র পশ্চিম তীরের শহর হলো ওয়েস্ট ব্যাংক বা পশ্চিম তীর। ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত এলাকা ওয়েস্ট ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ; যাদের মূল শক্তি ধর্মনিরপেক্ষ ফিলিস্তিনি দল ফাতাহ। এখানে হামাসের কোনও কর্তৃত্ব নেই। এই লোকালয়ে ৭ অক্টোবর হতে ২০০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে আইডিএফ।    

এসব বাস্তবতা যে কাউকে বিব্রত করবে। ফিলিস্তিনিদের দুর্দশায় অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে অনেকে। অথচ এখনও কেউ কেউ ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে থেকে মানবতার চরম বিপর্যয়কে উস্কানি দিয়ে চলেছে। যদিও অনেকে ইসলামোফোবিয়া মানে ইসলামভীতি এবং জাতীয়তাবাদ থেকে পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরায়েলের এই যুদ্ধাপরাধকে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে। অবশ্য অস্বীকার করার জো নেই, গত এক শতাব্দী ধরে ফিলিস্তিনিদের জীবনে নেমে আসা এই নিষ্ঠুর বাস্তবতা সম্পর্কে অনেকেই এখনও অন্ধকারে ।

অনেক সংবাদমাধ্যমের খবরে ফিলিস্তিনিদের কথা চেপে যাওয়া হচ্ছে; যেন এই ভূখণ্ডের নাগরিকদের মানবাধিকার বলে কিছুই নেই। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং দ্য সানডে টাইমসের মতো সংবাদমাধ্যমও ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার কথা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। আর এমন একপেশে খবর পড়ে অনেকেই গাজায় ইসরায়েল সরকারের আক্রমণকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।    

গাজায় আক্রমণের পর ইহুদিবিদ্বেষ বেড়ে যাওয়ার কারণেও সহানুভূতিশীল হয়ে অনেকে ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে। এর কারণ ইসরায়েল ‘বিশ্বের প্রত্যেক ইহুদির প্রতিনিধি’ বলে নিজেকে দাবি করে। শুধু তাই নয় ইসরায়েলের আধিপত্য বিস্তারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনাকেও ইহুদি বিদ্বেষের সঙ্গে এক করে দেখে তারা।    

নাৎসি নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা বাবা-মায়ের সন্তান ইতিহাসবিদ ইলান পাপ্পে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নরম্যান গ্যারি ফিঙ্কেলস্টেইনেরও অতীত একইরকম। তারা দুজনেই জায়নবাদ বা ইহুদি জাতীয়তাবাদের সমালোচক এবং ফিলিস্তিনিদের মুক্তির পক্ষে। ইসরায়েলি সরকারের চোখে এই দুজনই ‘আত্মঘৃণাকারী ইহুদি’ হয়ে ওঠে।

এসবের মধ্যেও সাংবাদিকতা ও তৃণমূল পর্যায়ের তৎপরতার কারণে সোশাল মিডিয়াতে ফিলিস্তিনের পক্ষে অনেক মতামত ছড়িয়েছে।

ডেমোক্রেসি নাও, নোভারা মিডিয়ার মতো স্বাধীন প্রকাশনার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি সাংবাদিক প্লেস্তিয়া আলাকাদ, মোতাজ আজাইজা এবং অ্যাক্টিভিস্ট-সাংবাদিক ওয়েন জোন্স, হাসান পিকার, সেলিব্রিটি লরেন জাউরেগুই, মেলিসা বারেরার ভূমিকা পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গিতেও ব্যাপক বদল নিয়ে আসে। এর প্রমাণ বিশ্বে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জাগ্রত হওয়া। এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৬ শতাংশ ব্রিটিশ এবং ৬৮ শতাংশ আমেরিকান যুদ্ধবিরতির পক্ষে।    

ইসরায়েলের ‘যুদ্ধপরাধ’ এবং ‘ইসলামভীতি’ সম্পর্কে আলোচনা বিস্তার দেখাটা সত্যিই আনন্দের। বিপরীতে ফিলিস্তিনি এবং অন্যান্য সিনেমাতে ফিলিস্তিনের কথা নামমাত্র থাকাটা দুঃখজনক।

‘অপরকে’ স্বীকৃতি দিতে, বুঝতে এবং সম্মান করতে সিনেমা খুব শক্তিশালী এক মাধ্যম। এই লেখার অবতারণা পাঁচটি চলচ্চিত্রের কথা বিশেষভাবে জানাতেই; যা ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা উপলব্ধি করাবে সবাইকে।

ফারহা

আরবিতে ‘নাকবা’ শব্দের অর্থ বিপর্যয়। প্রতি বছর ১৫ মে আল নাকবা বা বিপর্যয় দিবস পালন করে ফিলিস্তিনিরা। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতির পর থেকে এই দিবস পালন করে আসছে তারা; এ বছর ৭৬ বর্ষপূর্তি হতে চলেছে।

ফারহা হলো ১৯৪৮ সালে সাত লাখ ফিলিস্তিনির জাতিগত নির্মূল ও উচ্ছেদ হওয়ার সাক্ষী এক ১৪ বছর বয়সী কিশোরী। দুর্যাগ নেমে আসার আগে ফারহার স্বপ্ন ছিল গ্রাম ছেড়ে শহরে যাবে লেখাপড়া করতে। এই ফারহার গল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক সহ-প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে ফারহা।

৩৬ বছর বয়সী জর্ডানীয়-ফিলিস্তিনি পরিচালক ড্যারিন জে. সাল্লাম সত্যি ঘটনা থেকে এই গল্প তুলে ধরেছেন ক্যামেরায়। ১৪ বছর বয়সী কিশোরীর চোখে ধরা পড়া নাকবার রাজনৈতিক পটভূমি এবং পরবর্তীতে ঘনিয়ে আসা নৃশংসতা দেখাতে চেয়েছেন তিনি।   

সাল্লাম তার চলচ্চিত্র নির্মাণ দক্ষতার পরিপূর্ণ ছাপ রেখেছেন ফারহার মধ্যে দিয়ে।

ফারহার চোখ দিয়ে দর্শক দেখবে ওই সময়ের অস্বস্তি, অনিশ্চয়তা আর যন্ত্রণা। আতঙ্কিত ফারহা সাক্ষী হয় ঘৃণিত এবং ক্ষমার অযোগ্য সব অপরাধের। এই বিভীষিকার সাক্ষী হবে দর্শকও।    

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার মোটে তিন বছরের মাথায় বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জঘন্য অপরাধগুলোর একটি ঘটেছে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে। এই বোধদয় নিয়ে দর্শকদের দেখতে পাবেন বিপর্যয়ের আগে ফিলিস্তিনিদের প্রতিদিনের জীবন ও সংস্কৃতির কোমল চেহারা। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের সেই সব স্বপ্ন মাখা জীবন চুরমার হয়ে গিয়েছিল। তিন প্রজন্ম পরেও গাজা, পশ্চিম তীরবাসীরা এখনও এই মানবিক বিপর্যয়ে দিন কাটাচ্ছে।  

বেদনাদায়ক ও অবিস্মরণীয় পটভূমিতে ফারহা একটি সহানুভূতিশীল চলচ্চিত্র। ইসরায়েলি সরকার নেটফ্লিক্সে এই সিনেমার সব ধরনের প্রচার নিষিদ্ধ করেছিল।

ওমর

পুরোপুরি ফিলিস্তিনের অর্থায়নে নির্মিত ‘ওমর’ সিনেমা এক বেকারিওয়ালার গল্প বলে। ওমর এমন এক যুবকের গল্প যে প্রেমিকা নাদিয়াকে দেখার জন্য মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে রোজ রোজ টপকে যেতে পারে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের আলাদা করতে তোলা দেয়াল। সিনেমার গল্প এগোতে এগোতে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে নিজেকে আবিষ্কার করে ওমর। আগ্রাসী বাহিনীর হাতে দখলকৃত এলাকায় অবরুদ্ধ ও আত্মমর্যাদাহীন জীবন যাপন করা ওমরের কাছে প্রেম, বন্ধুত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা আর উগ্রবাদ ধরা দেয় নানা ভাবে।

বেঁচে থাকার অর্থ কী? আত্মমর্যাদাহীন জীবনের মূল্য কী? বন্দি জীবন কি মেনে নেওয়া যায়?  সিনেমায় পরিচালক হ্যানি আবু-আসাদ বারবার এই প্রশ্নের মুখোমুখি করেছেন দর্শককে।  তবে এসব প্রশ্নের উত্তর সিনেমায় সরাসরি দেননি এই পরিচালক। নিজ দেশে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকার মানসিক লড়াই দেখানোর মধ্যে দিয়ে বরং প্রশ্নগুলো দর্শকের মগজে গেঁথে দেন তিনি। তার জোরালো চিত্রনাট্যে আগ্রাসী বাহিনীর নৃশংসতা ফুটে উঠেছে।

ওমর চরিত্রে অ্যাডাম বাকরি দুর্দান্ত নির্বাচন ছিল। আর নাদিয়া চরিত্রে লিম লুবানি প্রশংসা করার মতো অভিনয় করেছেন। তাদের অভিনয়গুণে হৃদয়বিদারক হয়ে উঠেছে এই সিনেমা। এই সিনেমায় দেখানো শেষ পরিণতি প্রবলভাবে নাড়া দেবে দর্শককে।    

গত দুই মাস ধরে আন্তর্জাতিক খবরের চোখ পুরোপুরি রয়েছে গাজা স্ট্রিপ। অথচ একশ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে পশ্চিম তীরে ঘটে চলে জঘন্যতম অপরাধ; যা বিশ্বের নজরে আনা জরুরি। ওমর দর্শককে এসব চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবে।

২০১৮ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার জিতেছিল এই সিনেমা। ২০১৪ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘেও দেখানো হয়েছিল ওমর। সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র শাখায় অস্কার মনোনয়নও পেয়েছিল সিনেমাটি।

দ্য প্রেজেন্ট

২০ মিনিটের একটি গল্প হলো ‘দ্য প্রেজেন্ট’। স্ত্রীর জন্য বিবাহবার্ষিকীর উপহার কিনতে ইউসুফ তার মেয়েকে নিয়ে দোকানে যায়। কিন্তু ইউসুফের জন্য দিনটি নরক হয়ে দেখা দেয়। বর্ণবাদী ইসরায়েলের কারণে অধিকৃত পশ্চিম তীরের মানুষের কাছেও দিনগুলো এমন করে কাটছে।

‘ওমর’ এবং ‘দ্য প্রেজেন্ট’ সিনেমার পটভূতি অনেকখানি একই। ‘দ্য প্রেজেন্ট’ সিনেমাও বোদ্ধাদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই সিনেমা পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের রোজকার দুর্দশাগুলো তুলে ধরেছে।  

‘দ্য প্রেজেন্ট’ পরিচালনা করেছেন ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি পরিচালক ফারাহ নাবুলসি। ২০ মিনিটের গল্পে তিনি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন। বর্ণবাদের বিষবাষ্পে নারকীয় হয়ে ওঠা পশ্চিম তীরের মানুষের জীবন নিয়ে এই সিনেমা ইসরায়েলি সরকারের ক্ষোভের মুখে পড়েছিল। তারপরও সেরা শর্ট ফিল্ম বিভাগে ২০২১ সালে বাফটা অ্যাওয়ার্ড ছিনিয়ে নিয়েছিল ‘দ্য প্রেজেন্ট’।

তথ্যচিত্র ‘গাজা ফ্লাইটস ফর ফ্রিডম’

২০১৮ সালের ৩০ মার্চ থেকে ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলেছিল গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন। এই সময় ইসরায়েল-গাজা উপত্যকার সীমান্তে হাজার হাজার উদ্বাস্তু গাজাবাসী বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ইসরায়েলি সেনারা তাদের উপর গুলি চালায়।  সেই পীড়াদায়ক প্রেক্ষাপটের তথ্যচিত্র ‘গাজা ফ্লাইটস ফর ফ্রিডম’।

৮০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রের চিত্রনাট্য তৈরি, পরিচালনা এবং বর্ণনা করেছেন অ্যাবি মার্টিন। ইউটিউবে এই ভিডিও তোলা আছে। ইসরায়েল কীভাবে মানবাধিকার পদদলিত করছে তা সাধারণ মানুষের বোঝার মতো করে দেখিয়েছেন পরিচালক অ্যাবি মার্টিন।

গভীর গবেষণার ছাপ রয়েছে এই তথ্যচিত্রে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কারণে শিশু আর সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করার দৃশ্য রয়েছে মার্টিনের তথ্যচিত্রে। বেসামরিক মানুষের মৃত্যুকে যারা দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চায়, তাদের বিবেকের আয়নার মুখোমুখি করার মতো শক্তি রাখে তথ্যচিত্রটি।

ফাঁস হওয়া ফুটেজ যোগ করে তথ্যচিত্রের এক দৃশ্যে দেখা যায়, দুইশ মিটার দূরে থাকা একটি শিশুকেও হত্যা করে আইডিএফ সেনা। খেলার সময় জিতলে যেমন করে হুল্লোড় চলে, তেমন করে ওই হত্যা উদযাপন করে ইসরায়েলি স্নাইপারও। এসব নিষ্ঠুরতা দেখতে দেখতে শিউরে উঠবে দর্শক।

এই তথ্যচিত্রের পাশাপাশি ‘জেনিন, জেনিন’ দেখা জরুরি হয়ে ওঠে। ‘জেনিন, জেনিন’ পরিচালনা করেছেন মোহামেদ বাকরি। আইডিএফের আক্রমণের পর ২০০২ সালে জেনিন শহরে শরনার্থী শিবিরে থাকা ফিলিস্তিনিদের গল্প বলে এই সিনেমা। তিনটি প্রদর্শনী হওয়ার পর ইসরায়েলি ফিল্ম বোর্ড এই সিনেমাটি নিষিদ্ধ করে।

দ্য ব্যাটল অব আলজিয়ার্স

ফ্রান্সের ঔপনিবেশিকতা থেকে আলজেরিয়ার মুক্তিতে আলি লা পয়েন্ট এবং ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের চার বছরের বিপ্লব নিয়ে মর্মস্পর্শী কাহিনী তুলে ধরেছে ‘দ্য ব্যাটল অব আলজিয়ার্স’।

ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট আর ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের গল্পে অগণিত মিল রয়েছে। দুই পক্ষই লড়াই করেছে ও করছে  বৈষম্যমূলক ও বর্ণবাদী আইনি ব্যবস্থা আর সেটলার-ঔপনিবেশিক দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে।

ফিলিস্তিনিদের বোঝার জন্য এই গোল্ডেন লায়ন ও বাফটা বিজয়ী মাস্টারপিস সিনেমাটি তাই দেখা জরুরি। তাতে ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাত থেকে মুক্ত হবেন অনেকেই। এই সিনেমা মনে করিয়ে দেয়, বিপ্লবীদের হত্যা করা গেলেও বিপ্লবকে দমন করা যায় না। মানুষকে হত্যা করা যায়, কিন্তু তাদের চেতনাকে নস্যাৎ করা যায় না। আইডিএফ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করলেও তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা দমন করতে পারবে না। আলজেরিয়া থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিল ফরাসিরা। বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকাকেও উপড়ে ফেলা হয়েছিল। একদিন ফিলিস্তিনও স্বাধীন হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত