ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৬টি গ্রুপের ৩৭ সদস্যকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি বলছে, আটক হওয়া গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজনৈতিক ‘বড় ভাইদের’ ছত্রছায়ায় শহরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াত। এলাকায় ত্রাস ছড়াতে ও হিরোইজম দেখাতে অপরাধমূলক কাজ করত তারা।
উত্তরায় র্যাব-১ এর প্রধান কার্যালয়ে শুক্রবার দুপুর ১২টায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ।
আটক হয়েছেন- রাসেল (১৭), আরাফাত (১৭), রবিন (১৫), আল-আমিন (২৪), ইসলাম (২৯), জুয়েল (২২), রবিউল (১৬), মুরাদ (১৭), মাহাবুব (১৯), সাদ (২২), রোহান (২২), মনা (২৮), হৃদয় (২০), ওবায়েদ (১৮), মো. জিসান (১৯), মো. আকাশ (৩০), মো. ঈমন (২০), মো. রমজান (২১), মো. সজিব (১৮) ও মো. শাকিব (২২)।
এছাড়া মো. রাজিব (১৯), মো. আমির হোসেন (৩৬), শাহজাহান সাজু ওরফে রাসেল (৪৫), মো. জিলাদ মিয়া (২০), মো. হৃদয় (১৯), আ. রায়হান (১৫), মো. বাবু মিয়া (২২), মো. শাহজাহান (২১), মো. জালাল মিয়া (২৮), লামিম মিয়া (১৫), মো. রাকিব (১৬), মো. হিরা মিয়া (১৭), ইমরুল হাসান (১৭), মো. সাকিন সরকার রাব্বি (১৮), মো. সুজন মিয়া (১৯), খাইরুল (১৯) ও রাহাতকেও (১৯) আটক করা হয়েছে।
এরা বাবা, ০০৭, ভোল্টেজ, জাউরা, জাহাঙ্গীর ও ডি কোম্পানি নামের গ্রুপের সদস্য বলে র্যাব জানিয়েছে।
র্যাব বলছে, অভিযানের সময় গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম গাঁজা, ২৪টি মোবাইল, একটি ব্লেড, একটি কুড়াল, একটি পাওয়ার ব্যাংক, পাঁচটি রড, ১৬টি চাকু, তিনটি লোহার চেইন, একটি হাতুড়ি, একটি মোটরসাইকেল ও নগদ ২৪ হাজার ২৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযান সম্পর্কে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক বলেন, “কিশোর গ্যাং নিয়ে নির্দেশনা পাওয়ার পর ঢাকার বনানী, মহাখালী, উত্তরা, বিমানবন্দর এবং গাজীপুর ও টঙ্গী এলাকায় আমরা অভিযান শুরু করি। আগেও এভাবে অভিযান চালানো হয়। এবার নতুন কয়েকটি গ্রুপের দলনেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“এদের মধ্যে আছে ০০৭ গ্রুপের দলনেতা আল-আমিন, জাউরা গ্রুপের দলনেতা মাহাবুব, বাবা গ্রুপের দলনেতা সাদ ও ভোল্টেজ গ্রুপের দলনেতা মনা।”
ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের মারামারি এখন বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান র্যাব কর্মকর্তা মোসতাক।
তিনি বলেন, গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্ত্যক্ত করে ও ছোটখাটো বিষয়ে মানুষজনকে মারাধর করে। কেউ প্রতিবাদ করলে খুন করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না।
মোসতাক আহমেদ বলেন, প্রতিটি গ্রুপের সদস্যসংখ্যা আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ জন। গ্রেপ্তারকৃতরা টাকার বিনিময়ে মারামারি, দখলদারিত্ব, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
আটক হওয়া ৩৭ জনের মধ্যে ১৭ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্র, ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কারা মদদ দিচ্ছেন এবং এতে তাদের লাভই বা কী-এই প্রশ্ন র্যাব কর্মকর্তাকে করা হয়।
জবাবে তিনি বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে কিশোর গ্যাংকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন রাজনৈতিক নেতারা। তাদের ‘বড় ভাই’ হিসেবে দেখে অপরাধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকে কিশোররা। এই ‘ভাইদের’ নির্দেশে তারা মারামারি করে।
এছাড়া ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতারা মিছিল ও সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করেন বলে জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক।
কিশোর গ্যাংয়ের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, অপরাধীর কোনও দল বা ঠিকানা থাকতে পারে না। তারা কার হয়ে কাজ করে, সেটিও বিবেচ্য বিষয় নয়। অপরাধ করলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।”