মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বুধবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পাশাপাশি পরিবার নিয়েও এসেছেন অনেকে।
ফুল হাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে শহীদ মিনারে এসেছে অনেক শিশুও। তাদেরই একজন আট বছরের আদনান। মোহাম্মদপুর থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে শহীদ মিনারে এসেছে সে।
আদনানের বাবা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আলাউদ্দিন বলেন, ছেলে স্কুলে জেনেছে আজকে ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে হয়। তাই ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে এসেছে সে।
কামরাঙ্গীরচরের মেডিকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আসাদুজ্জামান দেড় বছরের মেয়ে আলাইনা ও স্ত্রী রোজিনাকে নিয়ে এসেছেন শহীদ মিনারে।
মেয়ের গালে একুশের আলপনা আঁকিয়ে নেওয়ার সময় ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, “যাদের কারণে মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারছি তাদের প্রতি সম্মান জানাতে এসেছি পরিবারের সবাইকে নিয়ে। সন্তানকেও এই গৌরবের সঙ্গে পরিচিত করতে চাই। তাই তাকেও নিয়ে আসা।”
শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ভিড়ের মধ্যে ফুল হাতে দেখা গেছে মলিন পোশাকের কিছু শিশুকেও। তবে তারা শহীদ মিনারে ফুল দিতে নয়, কুড়াতে এসেছে। একজনের রেখে যাওয়া ফুল কুড়িয়ে আরেকজনের কাছে বিক্রি করছে তারা।
তাদেরই তিনজন জোনাকি (৪), জান্নাতুল (৮) ও মো. আসাদ (৯)। শহীদ মিনারের নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফুলের জন্য বিরামহীন ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে তাদের। আর ছোট্ট জোনাকি কোনও ফুল পেলেই দৌড়ে যাচ্ছে শহীদ মিনারের পাশে বসে থাকা মায়ের কাছে। আর তার মা নাসিমা বেগম বিক্রি করছেন সেসব ফুল।
নাসিমা জানান, তারা হাজারীবাগের সেকশন এলাকা থেকে এসেছেন। সকাল থেকে জোনাকির কুড়ানো ফুল বেচে ৩০০ টাকার বেশি আয় হয়েছে তাদের।
মো. আসাদ জানায়, খুব সকালে কামরাঙ্গীরচর থেকে শহীদ মিনারে এসেছে সে। সকাল থেকে কুড়ানো ফুল বেচে ২০০ টাকা আয় হয়েছে তার।
হাসতে হাসতে আসাদ সকাল সন্ধ্যাকে বলে, “মেলা (অনেক) মানুষ ফুল নিয়া আসে নাই। হেরা আমার কাছ থিকা ফুল কিনা শহীদ মিনারে দিতাছে।”