Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

টিপু কিবরিয়া আবার গ্রেপ্তার, সেই পর্নগ্রাফির অভিযোগেই

সিটিটিসি বুধবার টিপু কিবরিয়াসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পর্নগ্রাফিতে জড়িত থাকার অভিযোগে।
সিটিটিসি বুধবার টিপু কিবরিয়াসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পর্নগ্রাফিতে জড়িত থাকার অভিযোগে।

আট বছর আগে শিশু পর্নগ্রাফিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সাহিত্যিক ও আলোকচিত্রী টিপু কিবরিয়া। তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল সিআইডি। কিন্তু অপরাধ প্রমাণ করা যায়নি বলে আদালত তাকে খালাস দিয়েছিল।

আবার তিনি গ্রেপ্তার হলেন একই অভিযোগে। এবার তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

বুধবার তাকে গ্রেপ্তারের পর সিসিটিসি বলেছে, আন্তর্জাতিক শিশু পর্নগ্রাফি চক্রের সঙ্গে যুক্ত টিপু কিবরিয়া। এই কারণে অনেক দেশে তিনি অপরাধী হিসেবে তালিকাভুক্ত।

২০১৪ সালে গ্রেপ্তারের সময় সিআইডিও জানিয়েছিল, ইন্টারপোলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টিপুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখনও তার আন্তর্জাতিক চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগই সিআইডির করা মামলায় তোলা হয়েছিল।

তবে তিন বছর আগে আদালত রায়ে বলেছিল, রাষ্ট্রপক্ষ আসামি টিপুর বিরুদ্ধে কোনও নিরপেক্ষ ও নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।

এখন আবার তাকে গ্রেপ্তারের পর ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আগের মামলায় খালাস পেয়ে তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আবার শিশু পর্নগ্রাফির পুরনো পথে হাঁটছিলেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার এক সময়ের শিক্ষার্থী টি আই এম ফখরুজ্জামান লেখালেখির জগতে টিপু কিবরিয়া নামে পরিচিত। তিনি আলোকচিত্রী হিসাবেও কাজ করেন।

সেবা প্রকাশনীর কিশোর পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে ১০ বছর চাকরি করেন টিপু। তার ভৌতিক গল্পগুলো শিশু-কিশোরদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

অর্ধশত বইয়ের লেখক টিপুর একটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটিও গড়ে তোলেন। তার আড়ালেই তিনি শিশু পর্নগ্রাফিতে জড়িয়ে পড়েন বলে পুলিশের দাবি।

ঢাকার খিলগাঁও থানা এলাকার টিপুর বাড়িতে অভিযান চালিয়েই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “অভিযানকালে টিপু কিবরিয়ার বাসায় ব্যবহৃত ডেস্কটপ কম্পিউটার পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, তিনি একাধিক এনক্রিপ্টেড অ্যাপের মাধ্যমে তার আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।

“টিপু কিবরিয়ার ব্যবহৃত ক্যামেরা, কম্পিউটার ও ক্লাউড স্টোরেজে শিশু পর্নগ্রাফির উদ্দেশ্যে তোলা প্রায় আড়াই হাজার স্থিরচিত্র ও প্রায় এক হাজার ভিডিও কনটেন্ট পাওয়া গেছে। তার ডেস্কটপে অসংখ্য ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে।”

টিপুর সঙ্গে কামরুল ইসলাম সাগর নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি। তিনি টিপুর অপরাধকর্মের সহযোগী বলে দাবি করা হচ্ছে।

সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে টিপু কিবরিয়া পুলিশকে বলেছেন, তিনি ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নগ্রাফিক কনটেন্ট বানাতেন।

“পথশিশুদের সংগ্রহ করার জন্য তার কয়েকজন সহযোগী আছেন, যাদের মধ্যে কামরুল অন্যতম। অশ্লীল ছবি ও ভিডিওগুলো তারা বিভিন্ন পর্নগ্রাফির ওয়েবসাইটে আপলোড করতেন। এগুলো দেখে অনেকে টিপু কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।”

ছিন্নমূল শিশুদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে টিপুর বাড়িতে এনে তাদের ছবি তোলা এবং ভিডিও করা হতো বলে পুলিশের দাবি।

টিপুকে আগে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তুলে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, “২০১৪ সালের জুনে টিপু কিবরিয়াকে শিশু পর্নগ্রাফি তৈরি ও পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পর্নগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছিল।

“তবে মামলায় রায়ে তিনি খালাস পান। তিনি কারাগার থেকে বের হয়ে সাহিত্যচর্চার আড়ালে আবার শিশু পর্নগ্রাফির পুরনো পথে হাঁটেন।”

২০১৪ সালের ৯ জুন টিপুকে গ্রেপ্তার করেছিল সিআইডি। সেবারও তার সঙ্গে নুরুল আমিন নামে তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, টিপু আন্তর্জাতিক শিশু পর্নগ্রাফি চক্রের সদস্য। তিনি ও তার সহযোগীরা পথশিশুদের নগ্ন ছবি-ভিডিও তুলে বিদেশে পাচার করে থাকেন।

এরপর সিআইডি মামলা করলে তা বিচারের জন্য ওঠে আদালতে। সেই মামলার তদন্তের সময় সিআইডির তৎকালীন অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শাহ আলম এমনও বলেছিলেন, টিপু কিবরিয়া তার তৈরি পর্নগ্রাফিক কন্টেন্ট ১৩টি দেশের ১৩ ব্যক্তির কাছে পাঠাতেন।

মামলার শুনানিতে সাত পুলিশ সদস্য ও তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও আরও চার সাক্ষীকে আদালতে হাজির করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ।

টিপু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ স্বীকার করেন বলেও জানানো হয়েছিল।

তবে ২০২১ সালে দেওয়া রায়ে আদালত টিপুসহ আসামিদের খালাস দেয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত