Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

যুদ্ধ এবার টিকটক ঘিরে

ক্যালিফোর্নিয়ার কালভার সিটিতে টিকটকের প্রধান কার্যালয়। ছবি: এপি।
ক্যালিফোর্নিয়ার কালভার সিটিতে টিকটকের প্রধান কার্যালয়। ছবি: এপি।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন কোনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ‍্যম চীনে নেই। নেই ফেইসবুক। নেই টুইটার। নেই ইউটিউব। নেই ইনস্টাগ্রাম। কারণ, এগুলোকে ব্লক করে রেখেছে দেশটি। ব্লকের পক্ষে চীনের যুক্তি হলো, প্ল‍্যাটফর্মগুলো তথ্য সংগ্রহ ও কনটেন্টের ধরন নিয়ে দেশটির সরকারি নিয়মগুলো মেনে চলতে রাজি হয়নি।

এবার চীনা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন প্ল‍্যাটফর্ম টিকটকের তেমনই পরিণতি বরণ করার আশঙ্কা জেগেছে যুক্তরাষ্ট্রে। কারণ টিকটক নিষিদ্ধে বুধবার একটি বিল পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ।

চীনা কোম্পানি বাইট ড্যান্সের কাছ থেকে টিকটককে কিনে নিতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাইটড্যান্স তা বিক্রি করতে রাজি হচ্ছে না। বিক্রি না করলে টিকটককে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে ওই বিলটি পাস করা হয়েছে।

বিলটি পাশের পর বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এর প্রতিবাদ জানান। তার দাবি, বিলটি যুক্তরাষ্ট্রকে স্বচ্ছ প্রতিযোগিতার নীতি এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক রীতি-নীতির বিপরীতে দাঁড় কারিয়ে দিয়েছে।

২০১০ সালে গুগল চীন থেকে সরে আসে। তার আগে গুগল দেশটিতে প্রায় চার বছর ছিল। কিন্তু চীন সরকার গুগলের কনটেন্টের ওপর নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করতে থাকে। সে কারণেই গুগল দেশটি থেকে বেরিয়ে আসে।

গুগলের চীন থেকে বেরিয়ে আসার একযুগ পর এবার টিকটককেও হয়তো যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিধি-নিষেধের কবলে পড়ে দেশটি থেকে সরে যেতে হতে পারে। যদিও দুই ঘটনার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ঠিক একই রকম নয়, তবু দুটো ঘটনার মিল আছে।

কাইয়ুয়ান ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রক সিলভারস বলেছেন, টিকটক বিলটি আইনে পরিণত হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চীনের অসন্তোষ পরিহাসমূলক ও কপটতাপূর্ণ। কারণ তারাও আমেরিকান সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলোর সঙ্গে একই আচরণ করেছিল।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাপগুলোর বিষয়ে চীনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং আপনি স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছেন যে গুন্ডামি কী ও গ্যাংস্টার যুক্তি কী।

টিকটক নিষিদ্ধের বিলটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সেনেটের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সেনেটের অনেক আইনপ্রণেতা বলেছেন, তারা এখনও আইনটি মূল্যায়ন করে দেখছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য বলে দিয়েছেন, বিলটি তার ডেস্ক পর্যন্ত পৌঁছালে তিনি এতে স্বাক্ষর করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা ও আইনপ্রণেতারা দীর্ঘদিন ধরেই টিকটক এর সম্ভাব্য জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। তাদের অভিযোগ, টিকটক চীন সরকারকে তথ্য দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে এমন কনটেন্ট প্রচার করে।

বৃহস্পতিবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, চীন টিকটকের সঙ্গে সম্পর্কিত তার স্বার্থ রক্ষার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

চীন সরকার বলেছে, তারা জোরপূর্বক টিকটকের বিক্রির তীব্র বিরোধিতা করে এবং তাদের তা করার আইনী অধিকারও রয়েছে। তারা টিকটক প্রযুক্তিকে অত্যন্ত মূল্যবান বলেও মনে করে। এ কারণেই চীন সরকার ২০২০ সাল থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে বাইটড্যান্স সরকারের অনুমতি ছাড়া টিকটক বিক্রি করতে না পারে।

প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে বেইজিং

এর আগে ২০২০ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও টিকটক বিক্রি করে দেওয়ার জন্য বাইটড্যান্সকে চাপ দিয়েছিল। তখন চীন টিকটকসহ তাদের কাছে সংবেদনশীল বলে মনে হওয়া বিভিন্ন প্রযুক্তির রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে। টিকটক এর মতো ব্যক্তিগতকৃত তথ্য পরিষেবার মতো প্রযুক্তি রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়।

তিন বছর পরে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এই বিষয়ে দেশটির সরকারের প্রথম সরাসরি প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, চীন টিকটকের যে কোনও জোরপূর্বক বিক্রয়ের বিরোধিতা করবে। কারণ অ্যাপটির বিক্রয় বা বিভাজন প্রযুক্তি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত। এর জন্য চীন সরকারের অনুমোদন লাগবে। এরপর থেকে এই অবস্থানে পরিবর্তনেরও কোনও ইঙ্গিত দেয়নি বেইজিং।

টিকটকের অ্যালগরিদম এর ব্যবহারকারীদেরকে অ্যাপটির সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে জড়িয়ে রাখে। এই অ্যালগরিদমকেই অ্যাপটির সাফল্যের চাবিকাঠি বলে মনে করা হয়। অ্যালগরিদম ব্যবহারকারীদের আচরণের উপর ভিত্তি করে কনটেন্ট দেখায়। ব্যবহারকারীরা যে ভিডিওগুলো পছন্দ করে এবং দেখতে চায় তা সামনে এনে দেয়।

নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ ল-এর অতিরিক্ত অধ্যাপক উইনস্টন মা বলেন, টিকটকের রত্ন হরো এর এআই অ্যালগরিদমগুলো, যা কোম্পানটিকে একটি আইনি লড়াইয়ের মধ্যে ফেলবে। সরকারের অনুমোদন ছাড়া বাইটড্যান্স এটি বিক্রি করতে পারবে না। চীনের আইন অনুযায়ী উন্নত প্রযুক্তি বিক্রি করার আগে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়।

ব্রক সিলভারস বলেছেন, টিকটক হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া পূরণ করার চেষ্টায় একটি মাঝামাঝি অবস্থান খুঁজতে পারে। তবে তাতে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট হবে কি না তা স্পষ্ট নয়।

তিনি বলেন, এই ঘটনায় বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটতে পারে। এর আগে থেকেই কম্পিউটার চিপ ও এআই-এর মতো উন্নত প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিরোধের জেরেও দেশ দুটির মধ্যে বিরোধ চলছে।

প্রযুক্তি ও বাণিজ্য নিয়ে এই চলমান বিরোধের জেরে চীনও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরও কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে বলে মনে করেন ব্রক সিলভারস।

টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে থাকা চীনের অন্যান্য অ্যাপগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে আসতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপ স্টোর বা গুগল প্লেতে জনপ্রিয় চীনা অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে রয়েছে কমদামের খুচরা বিক্রেতা টেমু অ্যান্ড শেইন ও ছোট ভিডিও এডিটিং অ্যাপ ক্যাপকাট, যা বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত