Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

গরম কমাতে আয়ুর্বেদ ও চীনা পদ্ধতি কী খেতে বলে

bodyheat

তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির পারদ ছুঁয়েছে। এ অবস্থায় শরীর ঠাণ্ডা রাখবে এমন খাবারই তো খুঁজবে সবাই। আমাদের পরিচিত এমন কিছু শরীর ঠাণ্ডা রাখার খাদ্য ও পানীয় রয়েছে। কিন্তু জানলে অবাক হওয়া লাগে এসবের বেশ কয়েকটি শরীর তো ঠাণ্ডা করেই না, বরং সাময়িক স্বস্তির পর গরমের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

গরম অনুভূত হলে কোন খাবার ও পানীয়গুলো বেছে নিতে হবে সেটি নিয়ে সারা দুনিয়াব্যাপী নানা ‘মিথ’ ও ভুল ধারণা রয়েছে । যেমন- আমরা অনেকেই মনে করি, গরমকালে ঝাল খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। বাস্তব হলো, মরিচ শুরুতে ঘাম ঝরালেও, নিঃসৃত ঘাম শরীর ঠান্ডা করার কাজে লাগে।

আবার অনেকেই মনে করেন, গরমের দিনে চা খাওয়া যাবে না। গরমকালে ঠান্ডা পানীয় খেতে ভালো লাগে ঠিকই, কিন্তু গরম চায়ের উপকার আরও বেশি। বিশেষ করে গ্রিন টি খেতে গিয়ে শুরুতে শরীরে ঘাম ঝরাবে। সে ঘামই একসময় উবে গিয়ে শরীরে আনবে প্রশান্তি।

আরও একটি বিতর্কও রয়েছে সারা দুনিয়াব্যাপী। সেটি হলো, খাবার গ্রহণের সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রার কোনও সংযোগ আছে কি নেই- সেটা নিয়ে। তবে, শরীরের তাপনিয়ন্ত্রণের জন্য অবশ্যই পানিশূন্যতা দূর করতে হবে- এ নিয়ে বিতর্কের কোনও জায়গা নেই।  

কাজেই খাওয়ার সময়ে শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূত হয়- এমন খাবার খেলেই যে কেউ ‘হিট স্ট্রোক’ থেকে উদ্ধার পাবেন, তা নয়। গরম থেকে বাঁচার খাবার কী সেটি নিয়ে গবেষণা রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে। তাই গরমে কী খেলে একটু প্রশান্তি হবে, তা জানতে আধুনিক বিজ্ঞানের চেয়েও বেশি বিশ্বের উষ্ণ অঞ্চলগুলোর খাদ্য সংস্কৃতির ওপর জোর দিচ্ছেন এ বিষয়ে যারা কাজ করেন- সেই বিশেষজ্ঞরা।

স্বভাবতই একজন সচেতন মানুষের মনে এ প্রশ্ন আসারই কথা, সবচেয়ে মশলাদার ও ঝাল খাবারগুলো কেন পৃথিবীর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতেই রান্না হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার তরকারিতে মরিচের উদাহরণ টেনেই আলোচনার সূত্রপাত করা যায়।

গরম কমাতে ঝাল-মসলাদার খাদ্য

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ফ্যাকাল্টি সদস্য ড. উইলিয়াম লি এর ‘পরিপাকের জন্য সঠিক খাদ্য’ বিষয়ক একটি দুর্দান্ত বই রয়েছে। সেই উইলিয়াম লি যুক্তরাজ্যভিত্তিক টাইম পত্রিকায় বলেন, “আপনি মশলাদার বা ঝাল খাবার খেলে কী হয়? আপনার হৃৎপিণ্ড একটু দ্রুত স্পন্দিত হয়, আপনি একটু জোরে শ্বাস নেন, আপনি ঘামতে শুরু করেন এবং শুধু আপনার মুখ নয় পুরো শরীরে আগুন লেগেছে বলে মনে হয়। আর যখন এ খাবারটি খাচ্ছেন তখন যদি, বাইরের তাপমাত্রা ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (বা প্রায় সাড়ে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) উপরে থাকে, আপনি সত্যিই ভয়ঙ্করভাবে গরম অনুভব করবেন।”

এর ফলে ঘাম হয়।

“আমাদের শীতল করার একমাত্র উপায় হলো ঘাম,” বলছেন সান ফ্রান্সিসকোর ‘কাইজার পারমানেন্টে’ রান্না ও লাইফস্টাইল বিষয়ক ওষুধ বিভাগের পরিচালক চিকিৎসক লিন্ডা শিউ।  

তিনি বলেন, “আপনি যখন খুব বেশি সময় ধরে প্রচণ্ড তাপের সংস্পর্শে থাকেন – শরীরের মূল তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। সেই মূল তাপমাত্রা কমিয়ে আনার প্রয়াসে ঘাম ত্বককে ঠান্ডা করে। মশলাদার খাবার খেলে ঘামের প্রক্রিয়াটিই আরও ত্বরান্বিত হয়, এ কারণে এসব খাদ্য বিশ্বের গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে এত জনপ্রিয়।”

“বিশ্বের এই গরম অঞ্চলগুলোর সংস্কৃতি হাজার হাজার বছর ধরে এই তথ্য জানে। গরমের কারণে গড়ে তাদের রান্নার রেসিপির সংস্কৃতিই একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে চালু করে দেয়, যেটি শরীরের রোমকূপগুলো খুলে দিয়ে তাপ বের করে দেয়।”

আমাদের পরিপাকতন্ত্রে একধরনের কোষ রয়েছে যার নাম টিআরপিভি১। মশলাদার ও ঝাল খাবারের স্বাদ পেলেই এই কোষগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। জিহ্বা ও মুখের সামনের মাড়ির অংশে কোষগুলোতে এই টিআরপিভি১ সবচেয়ে সংবেদনশীল অবস্থায় থাকে। কাজেই এ ধরনের খাবার খেলেই মস্তিষ্কে তাৎক্ষণিক খবর পৌঁছে যায়। মস্তিষ্ক থেকে বিপদ সংকেত হিসেবে নোরপাইনফিরিন (এক ধরনের যোগাযোগ হরমোন) নিঃসৃত হয়, শত্রুর সঙ্গে মোকাবেলার জন্য। এটিকে শরীরের ভেতর লড়াইয়ের জন্য রেড সিগন্যালের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যখন এ চরম বার্তা মস্তিষ্ক জানান দেয়, তখন মানুষের শরীর ঘাম ঝরিয়ে তাপ নির্গতের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের মধ্য দিয়ে ভারতীয় ও চীনাসহ অন্যান্য উষ্ণ অঞ্চলের মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই এ বিদ্যাটি জানতেন। এছাড়াও গুলমরিচ, দারুচিনি, ইন্দোনেশিয়া কিংবা মালয়েশিয়া অঞ্চলের কাঁঠালের মতো দেখতে ফল ডুরিয়ান টিআরপিভি১ উৎপন্ন করতে পারে। ঝালের পাশাপাশি তীব্র তিতা ও অম্লযুক্ত খাদ্যও একই হরমোন উৎপাদন করতে পারে।

আনারস থেকে ব্রোমেলিন নামের এক ধরনের এনজাইম বা রস নিঃসৃত হয়ে পাকস্থলির পরিপাককে দীর্ঘায়িত করে। এতে হজমে বেশি শক্তি খরচ হয় এবং ঘাম ঝরায়। এভাবেও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন- লিন্ডা শিউ।

তিনি মেক্সিকোর ফল থেকে তৈরি বিভিন্ন আচারজাতীয় উদাহরণ টেনে বলেন, আবহাওয়া উষ্ণ হলে ‘হাইড্রেটেড’ থাকার জন্য সেগুলো সহায়ক।

ভারতে গরমের দিনগুলোয় শীতল হতে ‘নিম্বু পানি’ বা ‘লেবুর শরবতে’র যে উদাহরণ লি শিউ টেনেছেন, তা নিয়ে ভারতীয় আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের একটি আলাদা সতর্কতাও রয়েছে।

তবে, শিউসহ পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা ভারতীয় ও চীনা সভ্যতার গরমের দিনের খাবারের ঐতিহ্যগত দিকটি অনুসরণের ওপরই জোর দিয়েছেন বেশি।

ঝাল বাদে কী কী খাদ্যে গরম কমবে

চিকিৎসক লি শিউ জানাচ্ছেন, প্রাণী জগতের ওপর পরীক্ষা করে পাওয়া গিয়েছে যে, দারুচিনির কোষ থেকে নিঃসৃত অ্যাসিড এবং এনজাইম পাকস্থলির তাপমাত্রা রাতারাতি কমিয়ে ফেলতে পারে। এটি প্রাণী শরীরকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ঠান্ডা করতে পারে। অবশ্য মানুষের ওপর এটি কতোটা কার্যকর সেই ব্যাপারে কোনও গবেষণা পাওয়া যায়নি।  

মানব শরীরে থাকা ‘ব্রাউন ফ্যাট’ পোড়ানোর মাধ্যমেই শরীর ঠান্ডা রাখা যায়। এক্ষেত্রেও টিআরপিভি১ প্রথমে শরীরকে উত্তপ্ত করে। টিআরপিভি১- কে বাদামি চর্বি পোড়ানোয় সক্রিয় করতে হলে, আপেল কিংবা অ্যাভাকোডার দ্বারস্থ হওয়া যেতে পারে। বাদামি চর্বি শরীরের ক্ষতিকর সাদা চর্বির সঙ্গে একসঙ্গে পুড়ে শরীরকে প্রথমে গরম অনুভূতি দিবে। তারপর ঘাম হবে।

ক্যালরি ও শরীর শীতলীকরণ

ছোটবেলা থেকে আমরা পড়ে এসেছি- ক্যালোরি হচ্ছে শক্তির একক। আমরা প্রায়ই বলি এই খাবারে এত ক্যালরি আছে, ওই খাবারে অতটা। এর মানে আসলে কী? আসলে আমরা বলতে চাই, ওই খাবারটি খেলে আমাদের কতটুকু শক্তি হবে। সাধারণত ৭ট থেকে ১০টি গাজরের ওজন এক কেজিতে । এই ১ কেজি গাজরে শক্তি হয় ৪১০ ক্যালরি। এর মানেই বা কি?

এক কেজি পানির বা এক লিটার পানি প্রায় একই পরিমাণ। এখন এই এক লিটার পানি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পরিমাণ গরম করতে যে শক্তি ব্যয় হয়, সেটিই আসলে হচ্ছে ১ ক্যালরি।

বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ বলছেন, বৈশ্বিক জলবায়ুর উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম থেকে বাঁচতে শরীরে ক্যালরি গ্রহণে পরিমাণ কমিয়ে ফেলা হতে একটি উপায়।

২০১১ সালের একটি গবেষণা বলছে, দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ২৩ শতাংশ কমালে শরীরের তাপমাত্রাও আধা ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যায়। মনে হতে পারে, এতো কম! হ্যা, এই সামান্য কমাতে পারা তাপমাত্রাই একজন মানুষকে ‘হিট স্ট্রোক’ থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।

একটা বড় সময় উপোস থাকাও গরম থেকে বাঁচার উপায় হতে পারে। আমরা যখন খাই তখন সেই খাদ্য ভেঙ্গে শক্তি তৈরি করতে শরীর ইনসুলিন উৎপন্ন করে। এই প্রক্রিয়া শরীরের ভেতরকে গরম করে দেয়। গরম এড়াতে তাই উপোসও খুব কাজের বলেই মনে করেন চিকিৎসক শিউ।

তবে ক্যালরি কমাতে গিয়ে উপোস থাকা বা কম খাওয়ার পরামর্শের পাশাপাশি পুষ্টি সংক্রান্ত ঝুঁকির কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

ঠাণ্ডার বদলে গরম করতে পারে যেসব খাবার

পত্রপত্রিকার লাইফস্টাইল, রান্না বা চিকিৎসার পাতা খুললেই শরীরকে ঠান্ডা রাখতে তরমুজ থেকে শুরু করে শসার সালাদ পর্যন্ত অসংখ্য খাবার ও পানীয়ের নামের উল্লেখ দেখা যায়।

একথা মনে রাখতে হবে যে, এ লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে শরীর ঠাণ্ডা রাখার ব্যাপারে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত ভরসা করছেন- ভারতীয় ও চীনাদের হাজার বছরের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের ওপর। তাই শরণাপন্ন হতে হচ্ছে ভারতীয় আয়ুর্বেদ চিকিৎসার দিকেই।

সম্প্রতি ভারতের আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক ভারা ইয়ানামান্দ্রা এক সাক্ষাৎকারে এমনকিছু খাদ্যের নাম নিয়েছেন- যেগুলোকে আমরা খুব বেশি গরম অনুভূত হলে শরীর ঠান্ডা করতে গ্রহণ করি।

চিকিৎসক ভারা ইয়ানামান্দ্রার মতে, এই তথাকথিত শরীর ‘ঠান্ডা’ করা খাবারগুলো উল্টো শরীরকে উষ্ণ করে দেয়। এর পক্ষে তিনি দিয়েছেন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের ব্যাখ্যাও।

সাময়িক স্বস্তির ফাঁদে পড়ে কিছু খাবার খেলে গরমে আরও হাসফাঁস করা লাগতে পারে।

বরফ-ঠাণ্ডা পানি

গ্রীষ্মের দিনে পরাণ ঠান্ডা করা বরফের পানিকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে শরীর ‘শীতলকারী’ বলে মনে করা হয় না। বরফ-পানি পাকস্থলিতে হজমের জন্য যে উত্তাপ লাগে সেটিকে ঠান্ডা করে দিয়ে প্রক্রিয়াটি কঠিন করে তোলে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে ভালো লাগলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই দীর্ঘসময়ের জন্য বরফ-গলা পানি শরীরে গরম ফিরিয়ে আনবে। সঙ্গে হয়তো অন্য অস্থিরতা এবং অস্বস্তিও। কেননা, হজমে সমস্যা করে যে!  

দই

গরমে দইকে একটি সতেজ খাদ্য হিসেবেই মনে করেন অনেকে। দইকে আয়ুর্বেদে ‘অভিষ্যন্দী’ জাতীয় খাদ্য বলে বিবেচনা করা হয়। এ ধরনের খাবার পরিপাকতন্ত্রের দহন বা কার্যক্ষমতায় বাধা সৃষ্টি করে। আয়ুর্বেদ বলছে, গ্রীষ্মের গরমে পাকস্থলিতে থাকা ‘অগ্নি’ বা হজম ক্ষমতা এমনি দুর্বল হয়ে যায়। ঠান্ডা হওয়ার জন্য দই খেলে সেটি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলে বদহজম, ফোলাভাব এবং শরীর ভারী হওয়ার অনুভূতি হতে পারে। এটি বরং গরম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

আইসক্রিম

গরমেই তো আইনসক্রিম সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। কেউ যদি বলে, খুব গরম লাগলে স্বস্তির জন্য আইসক্রিম খাবেন না। পরামর্শদাতাকে যে কেউ পাগল মনে করতে পারে।  কিন্তু আয়ুর্বেদ বিদ্যা ঠিক এ পরামর্শই দিচ্ছে। বলছে, আইসক্রিমে চিনি ও চর্বিজাতীয় পদার্থ থাকে। স্বাদের জন্য খাদ্য হিসেবে এতে চিনি, চর্বি ও অন্যান্য যে পদার্থের মিশ্রণ থাকে সেটিও হজমে সমস্যা করে। ফলে পাকস্থলিতে আরও তাপ তৈরি হয়। আইসক্রিম খাওয়া মানে হজমের ‘অগ্নি’-কে দুর্বল এবং হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেওয়া, যা শরীরে টক্সিন তৈরি করতে পারে। এর ফলে হজমের অস্বস্তি, অলসতা এবং ভারী হওয়ার অনুভূতি হতে পারে।

লেবুর রস

লেবুকে সাধারণত আয়ুর্বেদে উপকারী বলে মনে করা হয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবুকে একটি শীতল খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আয়ুর্বেদের ভাষায়, টক এবং পাকস্থলিতে খাদ্য ‘গরম’ করার ক্ষমতার কারণে লেবু দ্রুত হজমেও সাহায্য করে। কিন্তু ‘পিত্তদশা’ মানে যাদের অম্বল, অ্যাসিডিটি ও ত্বকের সমস্যা রয়েছে, তাদের অস্বস্তি এটি আরও বাড়াতে পারে।

টমেটো

আয়ুর্বেদে টমেটোকে সাধারণত গরম খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গরমের সময় এটি সেরা বিকল্প নাও হতে পারে, বিশেষ করে যাদের পিত্তদশা আছে বা যারা হজমের সংকটে ভোগেন তাদের জন্য একেবারেই উপেক্ষা করার কথা বলা হচ্ছে। কেননা, টমেটোর মধ্যে টক এবং সামান্য অম্লীয় স্বাদ- দুটোই রয়েছে। এসবের কারণে খাদ্য হিসেবে টমেটো গ্রহণ পিত্ত দোষ বাড়াতে পারে এবং তাতে শরীরের ভেতরে তাপ আরও বাড়াতে পারে।

চীনা চিকিৎসা শাস্ত্রে ঠাণ্ডা খাদ্য

শরীর ঠাণ্ডা এবং গরম করার খাদ্য নিয়ে সম্ভবত আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের চেয়েও কিছুটা এগিয়ে প্রাচীন চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি।

শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিবেচনায় প্রাচীন চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি খাদ্যকে রীতিমত পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছে। যে ভাগগুলোকে বলা হয়- ‘সিকি’। এগুলো হলো- খুব ঠান্ডা খাবার, ঠান্ডা খাবার, হালকা গরম খাবার, গরম খাবার, ব্যালান্সড বা ভারসাম্যপূর্ণ খাবার।

‘আ সং অব আইস অ্যান্ড ফায়ার: কোল্ড অ্যান্ড হট প্রোপার্টিজ অব ট্র্যাডিশনাল চায়নিজ মেডিসিন’ শীর্ষক একটি গবেষণা নিবন্ধে এ বিষয়ে সবিস্তারে নানা বর্ণনা রয়েছে। নিবন্ধটির লিখেছেন ৩ জন গবেষক- জুয়ান লিউ, উউন ফেং এবং চেং পেং।

নিবন্ধটির লেখকরা জানিয়েছেন, চীনে হান রাজ বংশের শাসনামলে খ্রিস্টপূর্ব ২০০-১০০ শতকের মধ্যে ‘শেন নন বেন ছাও চিন’ নামের চিকিৎসাবিষয়ক অভিধানে শরীরের ভেতরের উত্তাপ বাড়িয়ে দেওয়া কিংবা কমিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত ওই পাঁচ ধরনের খাদ্যদ্রব্যের তালিকার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়।

চীনা চিকিৎসকরা ঐতিহ্য অনুযায়ী, প্রত্যেক খাদ্যের শরীরের তাপমাত্রা বাড়ানো বা কমানোর গুণ বিবেচনা করে সেগুলোকে বিভিন্ন ভাগে ফেলেছেন। দুই হাজার বছর ধরে এ তালিকা আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। চীনা প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী, রোগ সারাতে পথ্য হিসেবে খাবারের বিকল্প নেই। যেমন- জ্বর হলে প্রাচীন চীনা চিকিৎসা পদ্ধতিতে শরীর ঠান্ডা করতে ঝিমু (এক ধরনের শুষ্ক গুল্ম)  এবং ঝিঝি (এক ধরনের ফল) খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলো গরম করেও খাওয়া যেতে পারে। কেননা, খাদ্যের ভেতরের উপাদানে শরীর ঠাণ্ডাকরণের গুণাগুণ থাকলেই হয়। অর্থাৎ খাবার খাওয়ার সময় গরম না কি ঠান্ডা সেটি বিবেচ্য নয়।

সেদিকে বিস্তারিত না গিয়ে বরং একবার দেখে নিই- ঠান্ডা খাবারের তালিকায় চীনা প্রাচীন চিকিৎসাবিদ্যা কী কী রেখেছে।

একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, উপরের তালিকায় ডাব নেই। নারিকেল বা ডাবকে চীনা চিকিৎসা পদ্ধতিতে হালকা গরম খাবারের তালিকায় রাখা হয়। আবার, একথাও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, যে খাদ্যতালিকা উপরে দেওয়া হলো- আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা সেটি প্রমাণিত নয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভারতীয় আয়ুর্বেদ বিদ্যা এবং চীনের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন চিকিৎসা বিদ্যার শরীর ঠাণ্ডাকরণ খাদ্য তালিকার মধ্যে বিভেদ রয়েছে। তবে সেই সংখ্যা খুবই সামান্য।

আধুনিক পুষ্টি ও শরীর বিজ্ঞান, ভারতীয় আয়ুর্বেদ এবং চীনা চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে একটি সাধারণ মিল রয়েছে। সেটি হলো, গরমের সময় বিপাক প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টিকারী যেকোনও খাদ্যকে দূরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর তাই এই তিনের শরীর ঠান্ডা করার খাদ্য তালিকার মিলটাই বেশি, অমিল খুব কম।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত