Beta
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪

গরমে কাঁচা আমের কিছু খাওয়া কি ঠিক হবে

raw-mangoes

অনেকেই গরমে সামান্য স্বস্তি পেতে কাঁচা আমের শরবত খান। গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশের একটি বহুল প্রচলিত রেসিপি হচ্ছে আম-ডাল দিয়ে ভাত খাওয়া। কেউ কেউ ভর্তা হিসেবে বা তরকারিতেও কাঁচা আম ব্যবহার করেন।

কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই এমন শোনা যায় যে, গরমকালে কাঁচা আম বা এর তরকারি খেয়ে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, আরও গরম লাগছে কিংবা গায়ে চুলকানি এবং অস্বস্তি ও জ্বরজ্বর বোধ করছে। গরমে স্বস্তির জন্য তাহলে কী কাঁচা আম এবং এর তরকারি খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো?

না, এড়িয়ে চলতে হবে কেন! বরং জেনে নেওয়া ভালো, কী করলে কাঁচা আম খেয়ে গরমেও পাওয়া যাবে স্বস্তির পাশাপাশি দারুণ পুষ্টি।

কাঁচা আমের উপাদান ও উপকার

১০০ গ্রাম কাচা আমে থাকে ৬০ কিলোক্যালরি শক্তি। এছাড়াও পুষ্টি উপাদান কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি-১,২,৩,৫, ফোলেট, আইরন, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, আলফা ক্যারোটিন, বেটা ক্যারোটিন ইত্যাদি রয়েছে কাচা আমে।

তাই কাঁচা আম খাওয়া আমাদের নানাভাবে সাহায্য করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘ই’ মানুষের হরমোন সিস্টেমকে উন্নত করে। এটি ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে; কাঁচা আম সোডিয়াম ক্লোরাইডের মজুদ পূরণ করে। এটি পেটের ব্যাধি যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, ফোলাভাব, বদহজম এবং ডায়রিয়া নিরাময় করে। লিভারকে ডিটক্সিফাই করে; কাঁচা আম যকৃত পরিষ্কার করে এবং পিত্ত অ্যাসিড নিঃসরণকে উৎসাহিত করে।

আমে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে উপকারী। কাঁচা আমেও নিয়াসিন বেশি থাকে, যা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য বাড়াতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়। কাঁচা আম ত্বক ও চুলের জন্যও ভালো।

তাহলে উল্টা প্রতিক্রিয়া হয় কেন?

গ্রীষ্মের ফল কাঁচা আম। খেলে তো উপকার হওয়ারই কথা। কিন্তু মাঝেসাঝেই গরমে কাঁচা আম খেলে উল্টা ফল হয় কেন?

পুষ্টিবিজ্ঞানীরা দিচ্ছেন এর উত্তর। তারা বলছেন, পুষ্টিকর  উপাদানের পাশাপাশি কাঁচা আমে বেশকিছু অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট উপাদানেরও উপস্থিতি রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে ফায়াটেটস বা ফাইটিক অ্যাসিড। এটি একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং একটি আমে দশমিক ৫০ শতাংশ পরিমাণ থাকে। এ উপাদানটি ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে এবং কোষ থেকে বর্জ্যজাতীয় বস্তু দূর করতে সহায়তা করে।

তবে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, আমের ভেতরে থাকা এ ফাইটিক অ্যাসিড মূলত মানুষের শরীরের ভেতরের উত্তাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। পাকস্থলির উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েও সেখানে গড়বড় লাগিয়ে দিতে পারে।  ফলে হতে পারে ডায়রিয়া ও বেশি গরম অনুভূত হওয়ার মতো অস্বস্তি। 

সমাধান কী?

অনেকেই বাজার থেকে কেনার পর আম ফ্রিজে রাখতে পছন্দ করেন, আবার অনেকে সংরক্ষণ ও স্বাদ নেওয়ার আগে পানির পাত্রে ভিজিয়ে রাখেন কিংবা ধুয়ে নেন। ফলকে দুই-তিন ঘণ্টা ধরে ভিজিয়ে রাখার কোনো মানে আছে নাকি এটা নিছকই একটা মিথ?

ভারতের জেন মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের ডায়েটিশিয়ান প্রিয়া পালান বলেন, “আম শুধু সুস্বাদু নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বড় সম্ভার রয়েছে আমে- যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। সঠিক পদ্ধতিতে ফল খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবহারের আগে আম ভিজিয়ে রাখলে সঠিক পুষ্টি পেতে সাহায্য হয়।”

“আমে ফাইটিক অ্যাসিড থাকে এবং আম ভিজিয়ে রাখলে তা ফাইটিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে। এ এসিডটি অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট হিসেবে কাজ করে এবং আমাদের শরীরে পুষ্টির শোষণকে কমিয়ে দেয়। আম ভিজিয়ে রাখা এনজাইমের কার্যকলাপ বাড়াতে সাহায্য করে, যা ফাইটিক অ্যাসিড ভাঙতে সাহায্য করে,” বলেন প্রিয়া পালান।

আহমেদাবাদের নারায়ণ হূদলায় অবস্থিত মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালের সিনিয়র ক্লিনিকাল ডায়েটিশিয়ান শ্রুতি ভরদ্বাজ বলছেন, “আম খাওয়ার আগে ভিজিয়ে রাখা একটি প্রাচীন ঐতিহ্য, এবং এর পেছনে একটি ভালো কারণ রয়েছে। মূলত, আমরা যদি আম ভিজিয়ে রাখি তবে প্রক্রিয়াটি অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টগুলি অপসারণ করতে সাহায্য করে। অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টগুলি কিছু পুষ্টির শোষণে বাধা দেয়। আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। আমকে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখাই এ ধরনের সমস্যা দূর করার জন্য যথেষ্ট। আপনি সেগুলিকে সাধারণ কলের পানিতেই ভিজিয়ে রাখতে পারেন।”

পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়, কাঁচা আমে থাকা পুষ্টিকর উপাদানগুলোকে বাধা দেওয়ার কারণেই ফাইটিক অ্যাসিড শরীরে গরম তৈরি করে। আবার অনেক সময় হজমেও সমস্যা করে। তাই কাঁচা আম খাওয়ার আগে, তিন-চার ঘণ্টা ভিজিয়ে নিলেই বোধ হয় জিহ্বায় এ ফলের অমৃত নানা স্বাদ ধরা দেওয়াটি স্বাস্থ্যগত দিক থেকে ঝুঁকিমুক্ত হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত