ছিপছিপে গড়ন, হাতে ধরা সিগারেট। তার ভাষায় যা একাকিত্বের বন্ধু! ফুটবল খেলার স্টাইলের সঙ্গে মিল খুঁজতেন রাজনীতির। ‘এল ফ্লাকো’খ্যাত (স্লিম) সেই কিংবদন্তি কোচ সিজার লুইস মেনোত্তি আর নেই। ৮৫ বছর বয়সে কাল (রবিবার) মারা গেছেন তিনি।
আর্জেন্টিনা প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ জিতে ১৯৭৮ সালে। পরের বছর ডিয়েগো ম্যারাডোনা জাদুতে জিতে প্রথম যুব বিশ্বকাপও। দুই দলের কোচই ছিলেন মেনোত্তি। তার মৃত্যুর খর নিশ্চিত করে ‘এক্স’’এ আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এএফএ লিখেছে, ‘‘অত্যন্ত শোকের সঙ্গে বর্তমান জাতীয় দলের পরিচালক ও আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী কোচ লুইস সিজার মেনোত্তির মৃত্যুর খবর জানাচ্ছে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন। বিদায় প্রিয় ফ্লাকো!’’
লাতিন অঞ্চলে সহিংসতাপূর্ণ ফুটবল খেলার কুখ্যাতি ছিল কয়েকটা দলের। এর অন্যতম আর্জেন্টিনা। মেনোত্তি সহিংসতা থেকে সরে এসে খেলান রোমান্টিক ধাঁচের ফুটবল। এই ফুটবলটাই এখন খেলছেন মেসিরা। তার দর্শনে কোচিং করাচ্ছেন স্কালোনি।
২০০৬ সালে জার্মান সাময়িকী ‘কিকার’কে মেনোত্তি বলেছিলেন, ‘‘বামপন্থী ফুটবল খেলার ফলাফলকে সবকিছুর ওপরে রাখে না। এটা বিনয়ী আর মানুষের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’ এ নিয়ে বিতর্ক হলেও মেনোত্তির দর্শন এমনই। তিনি আসলে চলতেন নিজের ইচ্ছেতে। এজন্য নাপিতের কাছে কখনও যাননি, বরং নিজেই কেটেছেন নিজের চুল! চেইন স্মোকার হলেও ২০১১ সালে ফুসফুসের অস্ত্রোপচারের পর ছেড়ে দেন ধূমপান।
সেই মেনোত্তি অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন।ছিলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। মৃত্যুর আগে রক্তশূন্যতায় ভুগে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন প্রায় এক মাস। মৃত্যুর সঙ্গে সেই লড়াই শেষ হল কাল (রবিবার)।
১৯৩৮ সালে মেনোত্তির জন্ম লিওনেল মেসির জন্মশহর রোজারিওতে। তার মৃত্যুতে মেসি শোক জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘আর্জেন্টাইন ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তি চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। সমবেদনা জানাচ্ছি তার পরিবার ও প্রিয়জনদের প্রতি। শান্তিতে ঘুমান।’’
আর্জেন্টিনার বর্তমান কোচ লিওনেল স্কালোনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘‘আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ফুটবলের একজন শিক্ষক । হৃদয়ে থাকবেন আজীবন।’’
১৯৬৩ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে ১১ ম্যাচে ২ গোল করেন মেনোত্তি। পেলের সঙ্গে খেলেছেন সান্তোসেও। অবসরের পর ৩৭ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে দায়িত্বে ছিলেন আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকোর। ছিলেন বার্সাসহ ১১টি ক্লাবের কোচ।
১৯৭৮ বিশ্বকাপে ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে দলের বাইরে রেখেছিলেন মেনোত্তি। এ নিয়ে সমালোচনা হলে আর্জেন্টিনার ক্রীড়া সাময়িকী ‘এল গ্রাফিকো’কে মেনোত্তি বলেছিলেন, ‘‘আমাকে যেটা করতে হতো, সেটাই করেছি। ম্যারাডোনাকে দেখাটা (গড়ে উঠা) ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওর খেলায় মুগ্ধ ছিলাম। তবে সে ছিল একদমই তরুণ, খুবই ছোট। এজন্যই অপেক্ষা করেছি ম্যারাডোনার জন্য।’’
মেনোত্তি অপেক্ষা করেছিলেন বলেই তৈরি হয়েছিল একজন ম্যারাডোনা। সেই ম্যারাডোনার সঙ্গে এখন আকাশের ওপারে ফুটবল নিয়ে কথা বলতেই পারেন মেনোত্তি।