Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

স্ত্রীর ‘দুর্নীতির’ খবর ‘জানেন না’ আকবর

ঢাকার মিন্টো রোডে ডিবির দপ্তরে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে আসেন আলী আকবর খান।
ঢাকার মিন্টো রোডে ডিবির দপ্তরে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে আসেন আলী আকবর খান।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন স্ত্রী; তবে তাকে নিরাপরাধ মনে করছেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান।

কারিগরি সনদ জালিয়াতিসহ দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার আকবরকেও ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ঢাকার মিন্টো রোডে ডিবির দপ্তরে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে আকবর সাংবাদিকদের বলেন, অনিয়মের ঘটনায় ‘সঠিক’ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

স্ত্রীর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “স্ত্রীর দুর্নীতির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার মনে হয়, তাকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে গত ৩১ মার্চ বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামান গ্রেপ্তার করে ডিবি। জাল সার্টিফিকেট ছাপানো ও বিক্রির অভিযোগে পরদিন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।

শামসুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদে একে একে উঠে আসে এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বোর্ড সংশ্লিষ্ট অনেক ছোট-বড় কর্মকর্তা ও দেশের কয়েকটি কারিগরি স্কুল ও কজেলের প্রধান আর অধ্যক্ষদের নাম। 

এর ধারাবাহিকতায় গত শনিবার ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বোর্ড চেয়ারম্যানের আকবরের স্ত্রী শেহেলা পারভীনকে।

পরদিন রবিবার আকবরকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ওএসডি করা হয়। তার দুদিন বাদেই ডিবি তাকে ডেকে নেয়।

আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন-অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতির দায় বোর্ড চেয়ারম্যান হিসাবে আকবর এড়াতে পারেন না।

তিনি জানান, তারা ঢাকার পাইকপাড়ায় সিস্টেম এনালিস্ট শামসুজ্জামানের বাসায় অভিযান চালিয়ে সেখানে জাল সনদের ‘কারখানা’ পেয়েছিলেন।

এই অভিযানে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। তাদের মধ্যে পাঁচজনই দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান হারুন।

আকবরের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে“েছন জানিয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি সিস্টেম এনালিস্ট শামসুজ্জামানের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন।”

আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন-অর রশীদ।

মঙ্গলবার কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের পাশাপাশি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককেও ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে হারুন জানান।

তিনি বলেন, “আমরা জানতে চেয়েছি যে, সার্টিফিকেট চুরির করার ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আপলোড করা সনদ অনিয়ম করা হয়েছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। কীভাবে?

“তিনি একজন চেয়ারম্যান। তিনি নির্দেশনা নেতৃত্ব দেন। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ নিয়ে যাচ্ছে, সিসিটিভি আছে, তারা দেখছেন। এই জালিয়াতি হলো! আবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সার্টিফিকেটগুলোতে স্বাক্ষর করে গেছেন মাসের পর মাস। কলেজগুলোর পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করা। তিনি সেটি করেননি।”

“এই ঘটনাগুলো কি অবহেলায় চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক করেছেন? নাকি স্বপ্রেণাদিতভাবে করেছেন, সেটা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তখন চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘আমাদের লোকবল কম ছিল, নজরদারি সম্ভব হয়নি’। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সার্টিফিকেট কেনাবেচা হচ্ছে, সার্টিফিকেট বানানোর পর ওয়েবসাইটে আপলোড হচ্ছে। জানার পরও এসব হলে দায় এড়াতে পারেন কি না?”

হারুন বলেন, “আমি মনে করে, কারিগরির চেয়ারম্যান দায় এড়াতে পারেন না। কোনও সুযোগ নেই। আমরা এখন দেখব, তিনি আসলে সনদ বিক্রির বিষয়টি জানতেন কি না? তার তো জানার কথা?”

সনদ জালিয়াতির ঘটনায় নিজের দায় সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে আকবরকে এক-দুদিন সময় দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারেন, আর আমরা যদি তার সংশ্লিষ্টতা বা অনৈতিক যোগসাজশের তথ্য-প্রমাণ পাই, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”

দায় এড়ানোর সুযোগ নেই বলার পরও চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে এখনই গ্রেপ্তার না করার বিষয়ে হারুন বলেন, “দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। স্ত্রী যে টাকাটা নিতেন, সেটা তিনি জানেন কি না? পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ লাগবে।

“সার্টিফিকেটগুলো কারা কিনেছেন? কোথায় কোথায় বিক্রি হয়েছে? সেটা দেখা হবে৷ বুয়েটের একটা পরীক্ষক দল আসবেন। বিশ্লেষণ করে দেখা হবে, আসলে কী পরিমাণ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছিল? কী পরিমাণ টাকা লেনদেন করা হয়েছে? তদন্ত আরও চলবে।”

গ্রেপ্তার করা না হলেও সরকারি কর্মকর্তা আকবর ডিবির নজরদারিতে থাকবেন বলে জানান হারুন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত