Beta
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

সাংবাদিকদের ঘুষ দেওয়ার ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ভিডিও প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর

শিল্পী : আনিসুর রহমান লিটন
শিল্পী : আনিসুর রহমান লিটন

সনদ জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামানের বক্তব্যের ভিডিওচিত্র সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।

ওই ভিডিওচিত্রে শামসুজ্জামান দাবি করেন, জালিয়াতির তথ্য গোপন রাখতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কয়েকজন সাংবাদিককে ঘুষ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তিনি কয়েকজন সাংবাদিকের নামও উল্লেখ করেন।

তার দেওয়া মৌখিক তথ্যকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ উল্লেখ করে ডিআরইউ নেতারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের দাবি জানিয়েছেন।

শুক্রবার ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম ও সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন এক বিবৃতিতে এ দাবি করেছেন।

তারা বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশ হেফাজতে থাকা একজন ব্যক্তির কয়েকজন সংবাদিকর্মী নিয়ে দেওয়া বিতর্কিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া নৈতিকতাবিরোধী, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও আইনের লঙঘন।

তবে অভিযোগের পক্ষে তথ্যপ্রমাণ থাকলে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানায় ডিআরইউ।

জাল সনদ ছাপানো ও বিক্রির অভিযোগে শামসুজ্জামানকে গত ৩১ মার্চ গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)। পরদিন তাকে সাময়িক বরখাস্তও করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।

শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার এবং জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য জানাতে গত ২১ এপ্রিল ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন-অর রশীদ আসেন সাংবাদিকদের সামনে। তখনই একটি ভিডিও আসে ঢাকা মহানগর পুলিশের মাধ্যমে।

সেই ভিডিওতে শামসুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ জোনের উপকমিশনার মশিউর রহমানকে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামানের বক্তব্য সম্বলিত একটি ভিডিওর বরাত দিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ হয়। সোশাল মিডিয়ায়ও ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।

জিজ্ঞাসাবাদের মুখে শামসুজ্জামান বলেন, তিনি কারিগরি সনদ জালিয়াতি ও অবৈধ সনদ বাণিজ্যের সংবাদ ধামাচাপা দিতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে ঘুষ দিয়েছিলেন।

ভিডিওতে শামসুজ্জামানকে বলতে শোনা যায়, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্যকে তিনি ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। কালের কণ্ঠের শিক্ষা বিটের রিপোর্টার শরীফুল আলম সুমনকে দেন ৮ লাখ টাকা, ইত্তেফাকের শিক্ষা বিটের সাংবাদিক নিজাম উদ্দিনকে (প্রকৃত নাম নিজামুল হক) দেন ৬ লাখ টাকা, সমকালের শিক্ষাবিষয়ক প্রতিবেদক সাব্বির নেওয়াজকে দেন ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন।

এ নিয়ে গত ২২ এপ্রিল সকাল সন্ধ্যা একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে ওই সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বক্তব্য নিতে চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে আবু জাফর সূর্য, শরীফুল আলম সুমন, নিজামুল হক তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। সাব্বির নেওয়াজের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়া ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দুজন সাংবাদিকের নামও আসে ওই ভিডিওতে।

শামসুজ্জামান বলেন, টিভি সাংবাদিকদের মধ্যে মাহমুদ সোহেল নামে একজনকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা এবং এশিয়ান টিভির জাকির হোসেন পাটোয়ারীকে ২ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন তিনি।

ওই ভিডিওতে শামসুজ্জামান দাবি করেন, হাসমত নামে এক সাংবাদিককে বিভিন্ন সময়ে মোট ২ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। রুবেল নামে আরও এক সাংবাদিক বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।

শামসুজ্জামানের এই মৌখিক বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছে ডিআরইউ।

সাংবাদিকদের এই সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনসহ যেকোনও ধরনেরর বেআইনি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী। সংগঠনের কোনও সদস্য বেআইনি কাজ করলে তাকে সুরক্ষা করা যেমন সংগঠনের কাজ নয়, একইভাবে তদন্ত শেষ না করে এবং বিচারে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে শুধু একজনের মৌখিক বক্তব্য সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করা গণমাধ্যম কর্মীদের বিব্রত করার হীণ মানসিকতা।  

অবিলম্বে সোশাল মিডিয়া থেকে বিতর্কিত অডিও-ভিডিও কন্টেন্ট প্রত্যাহারের পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান ডিআরইউ নেতারা।

সেইসঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে পুঁজি করে কেউ যেন সাংবাদিক সমাজকে বিতর্কিত করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তারা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত