Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

নাচের মিমে ‘খুশি’ মোদী, চটল কলকাতা পুলিশ

মোদীর অবতারকে এভাবেই নাচতে দেখা যায়  মিম ভিডিওতে।
মোদীর অবতারকে এভাবেই নাচতে দেখা যায় মিম ভিডিওতে।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ভারতে লোকসভা ভোটের ভরা মৌসুমে চলছে মিম নিয়ে নরেন্দ্র মোদী বনাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থকদের তর্কযুদ্ধ ।

যখন দেশটির অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয় দফায় ভোট চলছে, তখন সোশাল মিডিয়া এক্সে ছড়িয়ে পড়েছে তাদের দুজনের নাচের দুটো মিম ভিডিও। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো হয়েছে মিম দুটো।

মিম দুটো প্রায় অভিন্ন হলেও পার্থক্য রয়েছে দুপক্ষের প্রতিক্রিয়ায়।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার মিম নিয়ে ‘ধমক’ দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। আর সেই একইরকম মিম দেখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেই মজা করলেন। মোদীর সমর্থকরা কলকাতা পুলিশের প্রতিক্রিয়াকে মমতার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখছেন।

মোদী তাকে নিয়ে বানানো মিমটি রিটুইট করে লিখেছেন, “আপনাদের সবার মতো, নিজের নাচ দেখে আমিও মজা পেয়েছি। নির্বাচনের ভরা মৌসুমে এমন সৃজনশীলতা সত্যিই আনন্দের!” পোস্টে ‘পোলহিউমার’ হ্যাশট্যাগও দেন মোদী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এথিস্ট কৃষ্ণা নামের একটি হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা হয় মোদীর নাচের মিমটি। ভিগল এআই দিয়ে বানানো মোদীর অবতারকে টলিউডের পাগলু ছবির একটি গানে নাচতে দেখা যায়।

আর ক্যাপশনে মোদীকে খোঁচা দিয়ে লেখা ছিল, “আমি ভিডিওটি পোস্ট করছি, কারণ আমি জানি, এর জন্য স্বৈরশাসক আমাকে গ্রেপ্তার করবে না।”

মোদীকে নিয়ে যে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে, সেটি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের র‌্যাপ সঙ্গীত শিল্পী লিল ইয়াচটির মঞ্চ পারফর্মেন্সের একটি দৃশ্য। মূল ভিডিওটিতে দেখা যায়, নাচতে নাচতে মঞ্চে এসে গান গাইতে শুরু করেন লিল ইয়াচটি। ২০২২ সালের ২১ জুন ‘দ্য এক্সট্রা’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি প্রথম পোস্ট করা হয়।

ওই ভিডিওর অবয়ব বদলে বানানো হচ্ছে মিম। এক্ষেত্রে বেশিরভাগই ব্যবহার করা হচ্ছে ভিগল এআই। সেখানে অনেকেই বিখ্যাত ব্যক্তিদের পাশাপাশি বানাচ্ছেন নিজের মিমও।

মিম করা হয়েছে অ্যাডলফ হিটলার থেকে শুরু করে ডিসি কমিকসের সুপার ভিলেন জোকারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিখ্যাত বা কুখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে।

এবার মোদীকে নিয়েও বানানো হলো মিম। যেখানে তাকে পাগলু ছবির একটি গানে নাচতে দেখা যায়।

মমতাকে নিয়েও ওই মিম বানানো হয়। তবে সেখানে অবয়বকে মমতার বক্তৃতার সঙ্গে নাচতে দেখা যায়, কোনও গানের সঙ্গে নয়।

মমতাকে নিয়ে বানানো মিমটি শেয়ার করা হয় ‘সোলজার্স স্যাফ্রন সেভেন’ ও ‘শ্যালেন্ডার ভয়েস’ নামের দুটি এক্স হ্যান্ডেল থেকে। কলকাতা পুলিশ ওই দুই হ্যান্ডেলের ব্যবহারকারীকে তাদের পরিচয় প্রকাশ করার জন্য নোটিশ দিয়েছে।

কলাকাতা পুলিশ দুটি মিম পোস্টের রিপ্লাইতে লিখেছিল, “আপনাকে অবিলম্বে নাম ও বাসস্থানের ঠিকানাসহ আপনার পরিচয় প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। যদি তা না করেন তাহলে ৪২ সিআরপিসি ধারার অধীনে আপনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

পরে অবশ্য সমালোচনার মুখে কলকাতা পুলিশ তাদের রিপ্লাইগুলো ডিলিট করে দেয়। তবে, ততক্ষণে তাদের ওই নোটিশের স্ক্রিনশটসহ ভিডিওগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।

মমতার অবতারকেও একইভাবে নাচতে দেখা যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই মমতা ও মোদীর প্রতিক্রিয়ার তুলনা করে সমালোচনা করেছেন। সমর্থকরা মোদীর প্রশংসা করে বলেন, এই নির্বাচনের মৌসুমে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাকে নিয়ে বানানো অনেক কৌতুক ও কার্টুন এবং মিমের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি।

সোলজার্স স্যাফ্রন সেভেন পুলিশের নোটিশের জবাবে লিখেছে, “কলকাতা পুলিশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে শুধু একটি মিম পোস্ট করার জন্য নোটিশ দিচ্ছে। যারা বলে ভারতে বিজেপি সরকারের অধীনে গণতন্ত্র নেই তাদের মাঝে মাঝে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়া উচিত। বাংলায় এত বাক স্বাধীনতা!”

বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য কটাক্ষ করে লিখেছেন, কলকাতা পুলিশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাপোশের মতো আচরণ করছে। অথচ কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ব্যঙ্গ করে অশ্লীল পোস্টার লাগানোর বিষয়ে কলকাতা পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একহাত নিয়েছেন হিমাচল প্রদেশের মান্ডি লোকসভা আসনের বিজেপির প্রার্থী বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতও।

এক্স হ্যান্ডেলে কঙ্গনা লিখেছেন, “মমতা দিদি জি এটাকে বলে ‘টেকিং অ্যা চিল পিল (মাথা ঠান্ডা রাখার কৌশল), আপনিও মাঝে মাঝে এটা ব্যবহার করুন। আপনি তো সবসময়ই রেগে থাকেন। কয়েকটা বাচ্চা ছেলে আপনার নাচের ভিডিও বানিয়েছে, আর আপনি তাদের জেলে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। আপনি কতটা বেরসিক! মাফ করবেন, বলতে হচ্ছে, আপনি খুবই বদরাগী, অনমনীয় ও বেরসিক।”

মোদী সমর্থকদের সমালোচনার জবাব দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তার দাবি, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মতোই সেই মিম নিয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। মোদীকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি মিম শেয়ার করে কমিশনের কর্তৃত্বকে ‘সাহেব’ খাটো করেছেন।

সোমবার রাতে অভিষেক বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি কনটেন্ট মুছে দেওয়া এবং নীতি মেনে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার জন্য আজ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যখন সেইমতো কাজ করতে গিয়েছে কলকাতা পুলিশ, তখন এআই দিয়ে তৈরি ট্রলিংয়ের বিষয়টি প্রচার করে নির্লজ্জের মতো নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বকে খাটো করছেন ‘সাহেব’।”

তবে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, মিম দুটো পরপর শেয়ার করার পেছনে হয়তো বিজেপির হাত থাকতে পারে। এটি হয়তো তাদের প্রচারণার একটি কৌশল। কারণ, সোমবার মমতার মিমটি নিয়ে পুলিশ প্রতিক্রিয়া জানানোর পরপরই মোদীর মিমটি প্রকাশ করা হয়। আর মোদীও কিছুক্ষণ পরই সেটি শেয়ার করেন।

একে ঠিক কাকতালীয় বলে মানছেন না অনেক বিশ্লেষক। তাদের ধারণা, এর মাধ্যমে মমতার চেয়ে মোদীকে বেশি উদার হিসেবে উপস্থাপন করার কৌশল নেওয়া হয়েছে।

ভোট দিলেন মোদী

ভারতের লোকসভার তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে মঙ্গলবার। এদিন মোদী গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরের একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন।

এই পর্বে ভোট হচ্ছে লোকসভার ৯৩ আসনে। এর মধ্যে রয়েছে গুজরাট রাজ্য।

ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে মোদী অমোচনীয় কালি লাগানো হাতের আঙুল তুলে ধরলে তার সমর্থকরা উল্লাস প্রকাশ করেন।

ভোট দেওয়ার পর মোদী তার এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, “২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছি।”

তথ্যসূত্র : এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে, টিভি নাইন, হিন্দুস্তান টাইমস, ওয়ান ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত