Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

ঢাকায় প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী শিল্প উৎসব শুরু

ss-dipu moni-26-4-24

ঢাকায় প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী শিল্প উৎসব। ‘সকলের সাথে সকলে মিলে মানবিক বিশ্ব গড়বো’ স্লোগানে দুই দিনব্যাপী এই শিল্প উৎসবের আয়োজন করেছে নাট্যসংগঠন ঢাকা থিয়েটার ও ব্রিটিশ কাউন্সিল। এই আয়োজনে সহায়তা করছে প্রতিবন্ধীদের নাট্যসংগঠন সুন্দরম ও আইআইডি নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

শুক্রবার বেলা তিনটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

উৎসবে সুন্দরমের আটটি বিভাগীয় দল এবং কলকাতার জন সংস্কৃতি সেন্টার ফর থিয়েটার অব দ্য ওপ্রেসডের দশটি নাটক মঞ্চস্থ হবে। এ ছাড়াও থাকছে সেমিনার এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে প্রতিবন্ধী নির্মাতাদের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, প্রতিবন্ধী শিল্পীদের চারুকলা ও হস্তশিল্প সামগ্রীর প্রদর্শনী। উৎসবে প্রায় ২৪০ জন প্রতিবন্ধী শিল্পী অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেপুটি ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ম্যাট ক্যানেল, গ্রেআই থিয়েটার কোম্পানির আর্টিস্টিক ডিরেক্টর জেনি সিলি, ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডিরেক্টর (ইন্টেরিম) শ্যানন ওয়েস্ট, ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক নাসিরুদ্দীন ইউসুফ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইডি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদ আহমেদ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দীপু মনি বলেন, “দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফল এই উৎসব।  প্রতিবন্ধীরা শারীরিক সমস্যা থাকলে তাদের মননশীলতা সাধারণ মানুষের মতই, কোনও কোনও ক্ষেত্রে বরং আরও বেশি। আজকের আয়োজন এই বার্তা ছড়িয়ে দেবে যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও অন্য সবার মতোই।”

তাদের উন্নয়নে আমাদের সবক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের শতভাগ ভবন, গণপরিবহন, রাস্তাঘাট সবকিছু যেন প্রতিবন্ধিবান্ধব হয় সে বিষয়ে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূল ধারায় আনার জন্য সরকারের একটা বড় প্রচেষ্টা রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের এগিয়ে নিতে সমন্বিত শিক্ষা নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। যাতে যোগ্য প্রতিবন্ধীরাও স্বাভাবিক শিশুদের মতো একই মানের শিক্ষা পেতে পারে। আর যারা এই ব্যবস্থার সঙ্গে একেবারেই খাপ খাওয়াতে পারবে না তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে।”

তিনি বলেন, “সাধারণ অলিম্পিকে আমাদের কোনও অর্জন না থাকলেও প্রতিবন্ধীদের অলিম্পিকে আমাদের অনেক সফলতা আসছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য আমরা সাভারে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশেষ ক্রীড়া কমপ্লেক্স তৈরি করছি। আমার বিশ্বাস এই কমপ্লেক্স নির্মাণ হলে প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েরা ক্রীড়াক্ষেত্রে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। আজকের আয়োজনে তাদের সাংস্কৃতিক বিষয়ে আমরা জানলাম। একটু সুযোগ পেলে প্রতিবন্ধীরা কত কিছু করতে পারে, কত ভালোভাবে করতে পারে তা দেখলাম।”

গ্রেআই থিয়েটার কোম্পানির আর্টিস্টিক ডিরেক্টর জেনি সিলি বলেন, “এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা প্রমাণ করেছেন প্রতিবন্ধিতা কোনেও বাধা নয়, তাদের সুযোগ দিলে তারা যে কোনও কিছু করতে পারে।”

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বলেন, “সরকার প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেয় ঠিকই, কিন্তু আমাদের দেশটা প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়। আমাদের সমাজও প্রতিবন্ধীবান্ধব না। তাদের জন্য রাস্তা, ফুটপাত, বসার জায়গা কিছুই নাই। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার আফসোস হয় কী দেশ বানালাম। সবকিছুতে ৫০ লাখ মানুষের উপস্থিতির কথা ভুলে গেছি আমরা।”

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে প্রতিবন্ধী শিল্পীদের শিল্পসামগ্রীর প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন অতিথিরা। প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আঁকা ছবি ও বিভিন্ন শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ হন। এছাড়াও জন্মান্ধ মোহন সরকারের বাঁশির সুরে আনন্দিত হন অতিথিরা।

যা থাকবে উৎসবে

আয়োজনের প্রথম দিনে অতিথিদের জন্য রমেশ মেয়াঞ্জানের ‘৭১ ইন সাইলেন্স’, মোস্তাফিজ শাহিন পরিচালিত ‘সার্কাস সার্কাস’, কাজী নওশাবা আহমেদের ‘ত্রিবেণী’, এশা ইউসুফ ও রফিকুল ইসলামের ‘কেন্দ্র বরাবর সুড়ঙ্গটির নাম পৃথিবী’ এবং কলকাতার জনসংস্কৃতি সেন্টার ফর থিয়েটার অফ দ্য অপ্রেসডের পরিচালক সঞ্জয় গাঙ্গুলির ‘ওয়েস্টল্যান্ড এ জার্নি’, এই ৫টি থিয়েটার প্রযোজনা পরিবেশিত হয়। প্রথম দিন ‘ডিজেবিলিটি রিপ্রেজেন্টেশন ইন দ্য আর্ট সেক্টর’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শিল্পকলাসহ সমাজের নানান স্তরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্বের ঘাটতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

শনিবার সমাপনী দিনে আরও ৫টি থিয়েটার প্রযোজনার আয়োজন করা হবে। সেগুলো হলো শামীম সাগরের ‘অতঃপর করিম বাওয়ালি’, সামিউন জাহান দোলার ‘সঙ্গতি’, আল জাবিরের ‘কাজলরেখা’, ড. আমির জামানের ‘পিতৃগণ’ ও অসীম দাশের ‘স্বপ্নকাহন’। এছাড়া, ‘ব্রেকিং ব্যারিয়ার্স ফর অ্যাক্সেসিবল আর্টস’ ও ‘ফান্ডিং ইনক্লুশন ফর ডিজ্যাবিলিটি আর্টস’ এই দুইটি প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। ‘ব্রেকিং ব্যারিয়ার্স ফর অ্যাক্সেসিবল আর্টস’ প্যানেল আলোচনায় শিল্প ও সাংস্কৃতিক সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন তা চিহ্নিতকরণ ও এর সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত