Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

ডোনাল্ড লু আবার আলোচনায়

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছর ডোনাল্ড লুর সফর ছিল বেশ আলোচনায়; ভোট হয়ে যাওয়ার চার মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবার ঢাকায় আসতে যাচ্ছেন।

আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা না এলেও এই মে মাসের মাঝামাঝিতে দুই দিনের সফরে তিনি আসছেন বলে কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন লু। ফলে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ দেখার কাজটি তার ওপরই বর্তায়। পাকিস্তানে দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে উৎখাতের ক্ষেত্রে লুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল।

গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে টানাপড়েনের মধ্যে গত বছরের মাঝামাঝিতে ঢাকা সফর করে গিয়েছিলেন লু। তখন তার সঙ্গে আরেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজরা জেয়াও ছিলেন।

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগ থেকে র‌্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের প্রেক্ষাপটে তাদের ওই সফর হয়েছিল।

বিএনপির বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত জানুয়ারির নির্বাচনের গ্রহণযেোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিল ওয়াশিংটন। তখন বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার শঙ্কার কথাও বলেছিলেন কেউ কেউ।

তবে তেমন কোনও নিষেধাজ্ঞা আসেনি। ভোটের কয়েক সপ্তাহ পর টানা চতুর্থ বার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে ওয়াশিংটনের সমর্থন থাকবে। পাশাপাশি মুক্ত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় ঢাকাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

এই প্রেক্ষাপটে লুর এবারের সফরের উদ্দেশ্য কী?

ভোটের পর যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোনও কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফর হয়নি। সেক্ষেত্রে ডোনাল্ড লুর সফরটি হবে উচ্চ পর্যায়ের প্রথম সফর।

লুর সফরের বিষয়টি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে দিয়ে নিশ্চিত করিয়েছে দৈনিক প্রথম আলো। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরের সময় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এর পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে দেখা করবেন। মতবিনিময় করবেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে।

নাম প্রকাশ না করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মনোযোগ দিচ্ছে।

অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার হিসেবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার মতো বিষয়গুলো লুর সফরে থাকবে আলোচনা বিষয়বস্তু।

গত বছর ঢাকা সফরে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ মোমেনের সঙ্গে ডোনাল্ড লু।

এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, “সুশাসন, জবাবদিহি, মানবাধিকারসহ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়গুলোকে সামনে রাখবে না।

“তবে এ বিষয়গুলো নিয়ে তাদের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হবে না। কারণ, দেশটি বৈশ্বিক মানদণ্ডের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে থাকে। ফলে অন্য বিষয়গুলোকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিষয়গুলোকে একটু পাশে সরিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মনোযোগী যুক্তরাষ্ট্র।”

আরেক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পর্বে সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র শ্রম অধিকার সুরক্ষার বিষয়টিতে জোর দিতে পারে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রতিযোগিতার সামর্থ্য নিয়ে তদন্তের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন (ইউএসআইটিসি)।

লুর আসন্ন সফরের গুরুত্ব তুলে ধরে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরের পাশাপাশি এখন ভারত মহাসাগরকে ঘিরেও পরিকল্পনা করছে। এজন্য বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে।

“ভারত মহাসাগরের ঠিক ওপরের দিকে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার বাংলাদেশে থাকলে এখানে তাদের একটা অবস্থান থাকল এমনটা মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচন নিয়ে মতপার্থক্য থাকার পরও এখন পর্যন্ত দুই দেশ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জোরালো মনোভাব দেখাচ্ছে। সেদিক থেকে আসন্ন সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ।”

লুর সফরের খবর দিয়ে দৈনিক মানবজমিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নানা কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় আলোচিত ডোনাল্ড লুর এটা হবে ঢাকায় তার চতুর্থ সফর।

বাংলাদেশে ভোট হয়ে যাওয়ার পর গত মার্চে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের এই সহকারী মন্ত্রীর বক্তৃতার কথাও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনটিতে।

সেই বক্তৃতায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি-আমেরিকানদের কথা উল্লেখ করে লু বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপক্ষীক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপনে বাংলাদেশি আমেরিকানদের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।

চীনা বংশোদ্ভূত আমেরিকান লু ২০২১ সাল থেকে পররাষ্ট্র দপ্তরে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তার আগে তিনি কিরগিজস্তানে ও আলবেনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেইন সার্ভিসে যোগ দেওয়ার পর লু পাকিস্তানে এবং ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের মিশনেও কাজ করেছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত