Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

ফ্ল্যাটের ভুয়া দলিল করে শতকোটি টাকার মালিক

ss-fraud-4-5-24
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস কাজ করতেন একটি সোনার দোকানে। ঢাকার মিরপুরের কোঅপারেটিভ মার্কেটে ওই দোকানের কর্মচারি ছিলেন তিনি। এরপর শহিদুল ইসলাম সবুজ নামের একজনের সঙ্গে গড়ে তোলেন ফ্ল্যাট জালিয়াতি চক্র। পরিস্থিতি বদলাতে তার সময় লাগেনি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জয়নাল হয়ে যান শতকোটি টাকার মালিক।

দীর্ঘদিন ধরে ফ্ল্যাট জালিয়াতি চক্র নিয়ে তদন্ত করছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। এর আগে চক্রের হোতা জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিসকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন, জয়নাল আবেদীনের প্রধান সহযোগী মোঃ রাকিব হোসেন (৩৩), জয়নালের ভায়রা ভাই কেএম মোস্তাফিজুর রহমান (৫৪), জাল কাগজপত্র ও এনআইডি প্রস্তুতকারক মোঃ লিটন মাহমুদ (৪০), ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল প্রস্তুতকারক হাবিবুর রহমান ওরফে মিঠু (৩০), ব্যাংক কর্মকর্তা হিরু মোল্যা (৪৪), আব্দুস সাত্তার (৫৪) ও সৈয়দ তারেক আলী (৫৪)। এর আগে জয়নালসহ এ পর্যন্ত চক্রের মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, “প্রতারণার জন্য নিজ নামে ছয়টি সক্রিয় এনআইডি ব্যবহার করেন জয়নাল। এসব এনআইডি দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫০টির বেশি হিসাব খোলেন। এরপর জয়নাল ফ্ল্যাটের মালিকানার জাল দলিল তৈরি করে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মর্টগেজ রেখে হাতিয়ে নেয় শতকোটি টাকা।”

জালিয়াতির টাকায় রাজধানীর বসুন্ধার আবাসিক এলাকায় ৭তলা বাড়ি, ৩টি ফ্ল্যাট, মিরপুর ও আশকোনায় ৩টি ফ্ল্যাট কিনেছেন জয়নাল। এ কাজে তার অন্যতম প্রধান সহযোগী দুই স্ত্রী রোমানা সিদ্দিক ও রাবেয়া আক্তার মুক্তা।

সিআইডি প্রধান এডিশনাল আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, “গোপন সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন পরিদপ্তরের কিছু অসাধু সদস্য একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যদের নামে একাধিক সক্রিয় এনআইডি ও টিন তৈরি করে। পরবর্তীতে তারা ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু অসাধু ব্যক্তির মাধ্যমে চক্রের সদস্যদের নামে ফ্ল্যাট/ জমির একাধিক মূল দলিল তৈরি করে।

“এরপর তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একটি ফ্ল্যাটের বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে একাধিক ঋণ নিয়ে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।”

তিনি বলেন, “দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, এ সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের হোতা জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস। চক্রের অন্য সদস্যরা ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের ক্রেতা হিসেবে হাজির হন। এসব ফ্ল্যাট কেনার জন্য শুরুতে তারা মোটা অংকের টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট বায়না করেন। এরপর ফ্ল্যাটের মালিকানার তথ্য যাচাইয়ের কথা বলে মালিকের কাছ থেকে দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্রের কপি সংগ্রহ করেন।

“এরপর তারা ফ্ল্যাটের মালিকের কাছ থেকে নেওয়া দলিল এবং অন্যান্য কাগজপত্রের তথ্য নিয়ে তৈরি করেন জাল দলিল। জয়নাল আবেদীন জাল দলিলে কখনো নিজে মালিক হন আবার কখনো চক্রের অন্যান্য সদস্যের মালিক বানান। এরপর সেই জাল দলিল দিয়ে পাতেন ফ্ল্যাট বিক্রির ফাঁদ।”

ফ্ল্যাট পছন্দ হলে ক্রেতার কাছ থেকে বায়না বাবদ অগ্রিম টাকা নেন জয়নাল। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় ক্ষমতা অর্পণ দলিল দেখিয়ে ক্রেতার নামে ব্যাংক ঋণ নিয়ে সেই টাকাও আত্মসাৎ করেন। এভাবে তারা দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন শত কোটি টাকা।

সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে আসে, এই জালিয়াতি চক্র ফ্ল্যাট বিক্রির ফাঁদ পেতে পথে বসিয়েছেন বহু ফ্ল্যাট মালিককে। পাশাপাশি সম্ভাব্য ফ্ল্যাট ক্রেতাদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট বিক্রির অগ্রিম টাকা এবং ব্যাংক ঋণের বোঝা চাপিয়ে তাদেরকে করেছেন নিঃস্ব।

শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে জয়নাল আবেদীনের মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান রুমানা জুয়েলার্স, নীড় এস্টেট প্রোপার্টিস লিমিটেড, স্নেহা এন্টারপ্রাইজ ও ই আর ইন্টারন্যাশনালসহ চক্রের ২৫ জন সদস্যের বিরুদ্ধে ডিএমপির উত্তরা-পূর্ব থানায় অর্থপাচার আইনে মামলা দায়ের করে সিআইডি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত