Beta
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪

টানা তিন দিনে সোনার দাম ভরিতে কমল ৫ হাজার ৮৬৮ টাকা

টানা তিন দিন কমানো হলো সোনার দাম।
টানা তিন দিন কমানো হলো সোনার দাম।

দেশের বাজারে একদিনের ব্যবধানে আবারও সোনার দাম কমাল স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। টানা তিন দিনে মূল্যবান এই ধাতুটির দাম ভরিতে কমানো হয়েছে ৫ হাজার ৮৬৮ টাকা।

মঙ্গলবার প্রতিভরি সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমানো হয়েছিল, যা সেদিন বিকাল ৪টা থেকে কার্যকর হয়। বুধবার এই মানের সোনার দর ভরিতে ২ হাজার ১০০ টাকা কমানো হয়; বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সেই দর কার্যকর হয়। বৃহস্পতিবার আরও ৬৩০ টাকা কমানো হয়েছে, যা বিকেল ৩টা ৫০ মিনিট থেকে কার্যকর হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

দেশে এখন এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ৯ হাজার ৭৩৬ টাকা লাগবে। অর্থাৎ এই মানের এক ভরি সোনার দাম পড়বে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা (১ ভরিতে ১১.৬৬৪ গ্রাম)। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগছে ১ লাখ ৮ হাজার ৪০৫ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগছে ৯২ হাজার ৯১৫ টাকা। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা বিক্রি হচ্ছে ৭৪ হাজার ৮০১ টাকা।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হলমার্ক করা প্রতিভরি ২২ ক্যারেটের সোনা ১ লাখ ১৪ হাজার ১৯১ টাকায় বিক্রি হয়। ২১ ক্যারেটের সোনার দাম ছিল ১ লাখ ৯ হাজার টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকায় বিক্রি হয়। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৭৫ হাজার ২০৯ টাকা।

হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, নতুন ঘোষণায় প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম কমেছে ৬৩০ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম কমেছে ৫৯৫ টাকা। ১৮ ক্যারেটের কমেছে ৫১৩ টাকা। আর সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ৪০৮ টাকা কমেছে।

এর আগে ২১ এপ্রিল (রবিবার) দেশের বাজারে সোনার দর বাড়িয়েছিল বাজুস। ওইদিন প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বাড়ানো হয়েছিল ৬৩০ টাকা। ২১ ক্যারেটের ৬০৬ টাকা ও ১৮ ক্যারেটের ৫১৩ টাকা দাম বেড়েছিল। সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম বেড়েছিল ৪২০ টাকা।

আগের দিন ২০ এপ্রিল (শনিবার) সব ধরনের সোনার দাম খানিকটা কমানো হয়েছিল। ২২ ক্যারেটের দাম কমানো হয়েছিল ভরিতে ৮৪০ টাকা। অন্যান্য মানের সোনার দামও প্রায় একই হারে কমানো হয়েছিল।

তার আগে ১২ দিনের ব্যবধানে তিন দফায় সোনার দাম সাড়ে ৫ হাজার টাকা বাড়িয়েছিল বাজুস।

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ডামাডোলে বিশ্ববাজারে সোনার দাম আগের চেয়ে বেশি চড়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) সোনার দাম প্রায় ২ হাজার ৪০০ ডলারে উঠেছিল। তবে গত কয়েক দিনে বেশ খানিকটা কমেছে।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৩২৮ ডলার ৮১ সেন্ট। বুধবারের চেয়ে অবশ্য প্রতি আউন্সে ১২ ডলার ৭১ সেন্ট বা দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

বিশ্বে যেকোনও অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই সোনার দাম চড়তে থাকে। বিশ্ববাজারের প্রভাব তখন স্থানীয় বাজারেও পড়ে।

কোভিড মহামারীর পর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সোনার দাম বাড়লেও পরে স্থিতিশীল হয়েছিল। তবে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা শুরুর পর ধাতুটির দাম অনেক বাড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে প্রতি আউন্সের দাম ছিল ২ হাজার ডলারের নিচে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমাবে—বিশ্ববাজারে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সোনার দাম বাড়তে থাকে।

গত ৬ এপ্রিল বাড়ানো হয় ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা। দুদিন বাদে ৮ এপ্রিলও বাড়ানো হয় ১ হাজার ৭৫০ টাকা।

রোজার ঈদের আগে দেশের বাজারে দুই দিনের ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।

ঈদের পর গত ১৮ এপ্রিল আবার বাড়ানো হয়েছিল দাম। সেই দফায় বাড়ানো হয় ভরিতে ২ হাজার ৬৫ টাকা। তাতে ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকায় উঠেছিল, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড দর।

সব মিলিয়ে ১২ দিনের ব্যবধানে তিন দফায় সবচেয়ে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে সাড়ে ৫ হাজার টাকার বেশি বাড়িয়েছিল বাজুস। সেখানে গত ২০ এপ্রিল (শনিবার) কমানো হয় ৮৪০ টাকা। এর পর মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার- টানা তিন দিন সোনার দাম কমানো হলো ৫ হাজার ৮৬৮ টাকা।

সোনার দাম এত কম সময়ে বাড়ছে-কমছে কেন—এ প্রশ্নের উত্তরে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, সোনার দাম নির্ধারণের পদ্ধতি তারা বদলেছেন, এখন তারা বিশ্ব স্বীকৃত ‘ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল পলিসি’ অনুসরণ করেন।

তবে তিনি বলেন, “এতদিন আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করতাম। সেক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে যখন স্বর্ণের দাম কমত, তখন আমরা কমাতাম। আর যখন বাড়ত, তখন বাড়াতাম।

“এখন আমরা আমাদের স্বর্ণের সবচেয়ে বড় বাজার তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট ফলো করে দর নির্ধারণ করি। এই বাজারে স্বর্ণের দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওঠা-নামা করে। সেটা অনুসরণ করে আমরা নতুন দর নির্ধারণ করি। সেক্ষেত্রে এমনও হতে পারে, দিনে দুই বারও গোল্ডের দাম বাড়ানো-কমানো হতে পারে।”

কেন এই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন—জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, সোনা আমদানি না হওয়ার কারণেই দেশের বাজারকে মানদণ্ড ধরছেন তারা।

“আমরা এখন কোনও গোল্ড আমদানি করি না। বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে গোল্ড আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। প্রথম দিকে কিছু প্রতিষ্ঠান আমদানি করলেও এখন কেউ করছে না। কেননা, ডিউটি (শুল্ক) অনেক বেশি। আমদানি করলে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে।”

সেই কারণে বাজুস সভাপতি, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের নির্দেশনায় ‘ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের পলিসি’ অনুসরণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশে গোল্ড রিফাইনারি শুরু হলে এবং শুল্ক কমালে বৈধভাবে আমদানি হলে, তখন আমরা আবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করব।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত