Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

‘না, না, ব্যাংকটি দখল হয়নি’

ন্যাশনাল ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন।
ন্যাশনাল ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

ন্যাশনাল ব্যাংকের নবগঠিত পর্ষদ সদস্যরা তাদের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দিতে এসেছিলেন সাংবাদিকদের সামনে। অনেকটা তড়িঘড়ি করে এই সংবাদ সম্মেলন করায় কিছুটা অপ্রস্তুতও ছিল পর্ষদ। ফলে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কিছুটা ভড়কে যান তারা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা জেঁকে ধরায় বেসরকারি ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান আরও বলেন, ব্যাংকটি দখল হয়ে যায়নি। নতুন পরিচালকরা সরকারের পক্ষ থেকে এই ব্যাংকে নিয়োগ পেয়েছেন।

সোমবার ঢাকার বাংলামোটরে ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে। বেশিরভাগ পর্ষদ সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তৌহিদুল আলম খান সাংবাদিকদের জানান, চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে মিটিংয়ের জন্য বের হবেন। এ কারণে তিনি বেশি সময় দিতে পারবেন না। এরপর একে একে নতুন পর্ষদের সব সদস্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এমডি তৌহিদুল আলম খান।

পরিচয় পর্ব শেষে ব্যাংকের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, নতুন পরিচালকরা প্রাথমিকভাবে ১ হাজার কোটি টাকা মূলধন যোগান দেবেন। পরবর্তীতে আরও ৩ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন আমানত সংগ্রহ ক্যাম্পেইনের ও প্রকল্পর মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে। তাই ব্যাংকটি আপতত একীভূত করার কোনও প্রয়োজন হচ্ছে না।

এক বছরের মধ্যে ব্যাংকটিকে আগের মতো ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার আশাও ব্যক্ত করেন ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান। এসময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, নতুন করে এক টাকাও খেলাপি হবে না। খেলাপি ঋণ আদায়েও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নতুন চেয়ারম্যান।

তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের এক পর্যায়ে ‘ভড়কে যান’ পর্ষদ সদস্যরা। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাওয়া হয় ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিনিধি পরিচালকরা কোন কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হয়ে এসেছেন। ওই সব প্রতিষ্ঠানের হাতে ন্যাশনাল ব্যাংকের কত শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

তবে এই প্রশ্নের উত্তর তাৎক্ষণিকভাবে দিতে ব্যর্থ হন চেয়ারম্যান। এসময় এমডি তৌহিদুল আলম খান বলেন, এই বিষয়ক তথ্য তাদের কোম্পানি সচিব দিতে পারবেন।

তবে সাংবাদিকরা কোম্পানি সচিবের পরিবর্তে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ওই প্রশ্নের জবাব চান।

এ পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে উঠে যান চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। এসময় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক আছে বলে দাবি করেন।

রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল ব্যাংককে চিঠি দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়।

আগের পর্ষদ থেকে নতুন পর্ষদে ঠাই পাওয়া খলিলুর রহমানকে চেয়ারম্যান করা হয়। অন্য দুজন হলেন শেয়ারধারী উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন ও সিকদার ইন্স্যুরেন্সের মনোনীত পরিচালক সফিকুর রহমান। রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও ছিলেন পর্ষদে নতুন করে যুক্ত হওয়া প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ রিয়াজুল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম তফাজ্জল হক, রাঙ্গুনিয়ার ব্যবসায়ী এরশাদ মাহমুদ ও আইনজীবী এহসানুল করিম।

ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পরিচালকদের অনেকে দেশের অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী এস আলমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

এই চারজনকে কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক জবাব দিতে পারেনি ন্যাশনাল ব্যাংক পর্ষদ।

এ নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকরা বলতে শুরু করেন, নতুন পর্ষদের পরিচালকরা নিজেরাও জানেন না তারা কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে নতুন পর্ষদ।

এর পরপরই সংবাদ সম্মেলন কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়েন চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। অনেকেই জানতে চান- ন্যাশনাল ব্যাংক কি দখল হয়ে গেছে? কোনও বিশেষ গোষ্ঠী কি এই ব্যাংকটি দখল করেছে?

এসব প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, “না, না, এ কথা ঠিক নয়। ব্যাংকটি দখল হয়নি। এখানে আমরা যারা পরিচালক হিসেবে এসেছি তারা সবাই সরকারের পক্ষ থেকে এসেছি।”

বেসরকারি ব্যাংকে সরকার কেন হস্তক্ষেপ করবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে খলিলুর রহমান বলেন, “বেসরকারি ব্যাংক হলেও এটা দেশের সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষার জন্যই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”  

ওই সংবাদ সম্মেলন এক রকম পণ্ড হয়ে গেলে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি সাংবাদিকদের ডেকে প্রতিনিধি পরিচালকদের পরিচয় তুলে ধরেন।

তিনি জানান, মোহাম্মদ রিয়াজুল করিম কেওয়াই স্টিল মিলের প্রতিনিধি। এরশাদ মাহমুদ স্টিচ অ্যান্ড ওয়েভ ফ্যাশন লিমিটেডের এবং সুন্দরবন কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক হয়েছেন এহসানুল করিম। আর একেএম তফাজ্জল হক প্রতিনিধিত্ব করছেন ইস্ট-কোস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের।

ব্যাংকটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক হয়েছেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামী, চট্টগ্রামের চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ড. রত্না দত্ত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত