Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

গরমে বাড়ে মনের অসুখ

Untitled design (35)

তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে আত্মহত্যার হারও বেড়ে যায়। বেড়ে যায় অপরাধ ও সহিংসতা। গবেষকদের একাংশ এমনই দাবি করছেন।

উত্তাপ এবং মানুষের মনোজগতের সংযোগ নিয়ে রয়েছে প্রবাদ-প্রবচন। যেমন- যখন কেউ রেগে যায়, বলা হয়- ‘রাগে সে টগবগ করে ফুটছে’। অথবা বলা হয়- ‘মাথায় আগুন জ্বলছে’। রাগে নাকি রক্তও টগবগ করে ফুটতে থাকে। আবার হিংসার তীব্রতা বোঝাতেও বলা হয়- ‘হিংসার আগুনে জ্বলছে’।

তার মানে দুর্বল এবং নেতিবাচক মানসিক অবস্থার সঙ্গে তাপমাত্রার নিশ্চয়ই কোন সম্পর্ক আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও ভেদ করতে চাইছেন তাপমাত্রা এবং দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যকার জটিল সম্পর্কটি।

জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল হেলথ বিভাগের মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শাবাব ওয়াহিদ বলেছেন, তাপ এবং মানসিক অসুস্থতার মধ্যে সম্পর্কটি খুবই সূক্ষ্ম। ওয়াহিদ সম্প্রতি দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ-এ একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন। যেখানে তিনি দেখিয়েছেন তাপমাত্রার এক ডিগ্রি বৃদ্ধিও বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগের মতো অনুভূতি তৈরিতে প্রভাব ফেলতে পারে।

২০১৮ সালে নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জে অর্থনীতিবিদ মার্শাল বার্কের একটি গবেষণা প্রকাশ হয়। তাতে পাওয়া গেছে কৌতুহলোদ্দীপক তথ্য।

গবেষণাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোতে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে আত্মহত্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্পর্ক আছে। এই দুই দেশে অন্তত ১ দশমিক ৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট বৃদ্ধির সঙ্গে আত্মহত্যার হার ১ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।

মার্শাল বার্কের ওই গবেষণা দিচ্ছে আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য।

জলবায়ূ বিজ্ঞানীদের আশংকা অনুযায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রা যদি দিন দিন বাড়তেই থাকে তবে আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমেরিকার বন্দুক ক্রয়ের নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী ক্লিনিকাল অধ্যাপক রবিন কুপার বলেছেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা।

তার মতে দিন দিন তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার যে হিড়িক পড়েছে তা নাকি সামাজিক যোগাযোগ, সুস্থতা এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলছে।

রবিন কুপার ক্লাইমেট সাইকিয়াট্রি অ্যালায়েন্সেরও সভাপতি।

জসুয়া ওয়ার্টজেল ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে জলবায়ূ পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন।

আত্মহত্যার সাথে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্পর্ক নিয়ে তিনি ভিন্ন একটি বিষয় তুলে ধরেছেন।

তার মতে, যেদিন তাপমাত্রা খুব বেশি বৃদ্ধি পাবে সেদিনই যে আত্মহত্যা বেড়ে যাবে বিষয়টি ঠিক এমন নয়। বরং তাপমাত্রার নাটকীয় পরিবর্তনের সঙ্গে এটি সম্পর্কিত।

জসুয়া ওয়ার্টজেল আরও বলেন, “মানুষের মেজাজ মর্জির নিয়ন্ত্রণ নিউরোট্রান্সমিটার মারফত সেরোটনিন নামের একটি হরমোন করে। তাপমাত্রার বৃদ্ধি প্রভাবিত করে এই হরমোনকে।”

এই সেরোটনিন হরমোনের ওপর নির্ভর করেই মানব মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস ঘেমে যাওয়া এবং শীতে কাঁপুনির অনুভূতি। কিন্তু বিষণ্ণতায় ভোগা ব্যক্তির মস্তিষ্ক এই প্রক্রিয়াটি ঠিক মতো বুঝতে পারেনা।

স্ট্যানফোর্ড মেডিকেল স্কুল প্রোগ্রামের ডিরেক্টর (জলবায়ূু পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্য) ব্রিট রেই জানাচ্ছেন বিষণ্ণতা এবং আত্মহত্যা প্রবণতায় প্রভাব ফেলে ‘ক্লাইমেট ট্রমা’।

তার মতে, “বিষয়টা এমন নয় যে দাবানল থেকে কেউ বেঁচে ফিরলেই তার পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার তৈরি হবে। বরং বন্যায় সবকিছু খুইয়ে ফেললে পরিস্থিতি আরও বেশ কঠিন হতে পারে। তার সঙ্গে যদি যুক্ত হয় নানান সামাজিক অর্থনৈতিক সংকট, তবে তো কথাই নেই।”

আসল কথা হলো তাপদাহ মানসিক সমস্যায় জর্জরিত যে কারও পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। আবার তাপদাহ যে কাউকে ফেলে দিতে পারে মানসিক সংকটে।

গবেষক রেই একে ‘দুষ্টু চক্র’ বলে অ্যখ্যায়িত করেছেন।

তার মতে “মানসিক স্বাস্থ্য সংকট অতি অবশ্যই জলবায়ু সংকটের মধ্যকার একারটি সমস্যা। ফলে আরও নানান সংকট আমাদের গ্রাস করার আগেই আমাদের এই সংকটের সমাধান করতে হবে।”

গত কয়েক বছর ধরেই জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে তা নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের আগ্রহ বাড়ছে।

জসুয়া ওয়ার্টজেলের মতে, এই বিষয় নিয়ে গবেষণার তহবিল সীমিত। এই খাতে পর্যাপ্ত তহবিল না পাওয়াকে ‘দুঃখজনক’ বলছেন তিনি।

তার মতে আসছে বছরগুলোতে কোটি কোটি মানুষ তাপদাহের ঝুঁকিতে থাকবে।             

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত