বায়ার্ন ২ : ২ রিয়াল
আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা রীতিমতো বায়ার্নের দুর্গ। সেমিফাইনালের প্রথম লেগের আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে এখানে সবশেষ ১৫ ম্যাচ হারেনি বায়ার্ন। সেই দুর্গে জয় না পেলেও জমজমাট ম্যাচটিতে ২-২ গোলে ড্র করল রিয়াল মাদ্রিদ। ফিরতি লেগটা নিজেদের মাঠে হওয়ায় স্বস্তি নিয়েই মাদ্রিদে ফিরবে আনচেলোত্তির দল।
রোলার কোস্টারের মত উঠা-নামার ইউরোপিয়ান ক্লাসিকো খ্যাত ম্যাচটিতে জোড়া গোল করেছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। বায়ার্নের হয়ে একটি করে গোল লিরয় সানে ও হ্যারি কেইনের।
বায়ার্নের একাদশের গড় বয়স ২৯ বছর ১১৭ দিন। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচের পর এত বয়সী একাদশ নিয়ে আর চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলেনি তারা। সেই বয়সীরাও শুরুটা করে ঝড়ের বেগে।
৪০ সেকেন্ডেই প্রথম সুযোগ পায় বায়ার্ন। হ্যারি কেইন বক্সে খুঁজে নিয়েছিলেন লিরয় সানেকে। তবে সানের শট ঠেকান রিয়াল গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিন। দশম মিনিটে ৩৫ গজ দূর থেকে নেওয়া হ্যারি কেইনের দুর্দান্ত শট মিস হয় অল্পের জন্য।
প্রথম ২১ মিনিটে রিয়ালের পোস্টে ছয়টা শট নিয়েও গোল পায়নি বায়ার্ন। রিয়ালের রক্ষণের ওপর দিয়ে এই সময় ঝড়ই বইয়ে দেয় তারা। সেই ঝড় সামলে প্রথম সুযোগেই ২৪ মিনিটে গোল পেয়ে যায় রিয়াল।
প্রায় মাঝমাঠ থেকে টনি ক্রুসের থ্রো বল দুই সেন্টার ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে ডিবক্সে পান ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। এই ব্রাজিলিয়ানের শট ঠেকাতে পারেননি গোলরক্ষক মানুয়েল নয়্যার। জারি লিটমানেন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং কেভিন ডি ব্রুইনার পর চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে গোল করার কীর্তি গড়লেন ভিনিসিয়ুস।
চ্যাম্পিয়নস লিগে সবশেষ ৫৮ ম্যাচে বিরতির আগে এগিয়ে থাকা ম্যাচে হারেনি রিয়াল। সবশেষ হারটা ছিল ১১ বছর আগে কোয়ার্টার ফাইনালে গালাতাসারাইয়ের বিপক্ষে। হারল না এবারও। ২০১১-১২ মৌসুমের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা ৮ ম্যাচ রিয়ালকে হারাতে পারল না বায়ার্ন।
বিরতির আগে পোস্টে বায়ার্নের শট ছিল ৮টি আর রিয়ালের ৩টি। বিরতির পর আক্রমণের ধার আরও বাড়ায় বায়ার্ন। লিরয় সানে সমতা ফেরান ৫৩ মিানিটে। কনরাড লাইমারের কাছ থেকে ডান প্রান্তে বল পেয়ে দারুণ এক শটে কাছের পোস্ট দিয়ে বোকা বানান লুনিনকে।
বায়ার্ন ৫৭ মিনিটে এগিয়েও যায় হ্যারি কেইনের পেনাল্টিতে। লুকাস ভাসকেস ডিবক্সে ফাউল জামাল মুসিয়ালাকে ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। এটা এই মৌসুমে কেইনের ৪৩তম গোল, যার ৮টি করলেন চ্যাম্পিয়নস লিগে। এবার সর্বোচ্চ ৮টি করে গোল করেছেন কেইন ও কিলিয়ান এমবাপ্পে।
চ্যাম্পিয়নস লিগে তার অ্যাসিস্টও ৩টি। চ্যাম্পিয়নস লিগের এক মৌসুমে ১১ গোলে সরাসরি সম্পৃক্ত তিনি, যা করতে পারেননি আর কোনও ইংলিশ ফুটবলার।
পাঁচ মিনিটের ঝড়ে দুই গোল পাওয়ায় সমুদ্রের ঢেউ উঠে গ্যালারিতে। রিয়াল মাদ্রিদ এলোমেলো হয়ে পড়ে এ সময়। ৬১ মিনিটে রুডিগারের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে বক্সে পড়ে গিয়েছিলেন কেইন, তবে পেনাল্টি দেননি রেফারি।
বেলিংহাম বিবর্ণ ছিলেন ম্যাচে। তাকে ৭৬ মিনিটে তুলে নেন আনচেলোত্তি। লুকা মডরিচের সঙ্গে ব্রাহিম দিয়াসকে বদলি হিসেবে নামান রিয়াল কোচ। মডরিচের পাসে ৭৯ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের শট ঠেকান নয়্যার। রিয়ালের আক্রমণের গতি বাড়ে এরপর।
এরই ফল হিসেবে ৮৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরান ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তারই পাস ডিবক্সে পেয়েছিলেন রোদ্রিগো। কিম মিন জায়ে তাকে ফাউল করায় পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি, যা মিস করেননি ভিনিসিয়ুস। বায়ার্ন সমর্থকরা পেনাল্টি নেওয়ার সময় দুয়ো দিচ্ছিলেন ভিনিসিয়ুসকে। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে গুরুত্বপূর্ণ গোলটা করেন তিনি।
২০২১-২২ মৌসুম শুরুর পর চ্যাম্পিয়নস লিগে সরাসরি ৩১ গোলে অবদান রাখলেন ভিনিসিয়ুস। তার গোল ১৬টি, অ্যাসিস্ট ১৫টি। এই সময়ে এত বেশি গোলে অবদান নেই আর কারও।
এই মৌসুমে ৯০ মিনিটের ম্যাচে টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত রইল রিয়াল। তাদের সবশেষ হারটা লা লিগায় আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বরে।