Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

এলএনজি সরবরাহে রেকর্ড, সুফল বিদ্যুতেও

মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল।
মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল।

গরম বাড়লে দেশে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল সরকারের। ১৫ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিদিন ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। সেই পথেই এগোচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)।  

কক্সবাজারের মহেশখালীর সাগরে ভাসমান দুটি টার্মিনাল থেকে একসঙ্গে ১০৮০ ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ দিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে আরপিজিসিএল। ২০১৮ সালে এলএনজি সরবরাহ চালুর পর এই প্রথম এত বেশি পরিমাণ সরবরাহ দিতে পারল কর্তৃপক্ষ।

এমন এক সময়ে এলএনজি সরবরাহে রেকর্ড হলো যখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও রেকর্ড গড়ছে সরকারি আরেক প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিপিডিবি)। মঙ্গলবার বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট।

আবার কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফরের সময় এই সুখবরটি মিলেছে। বাংলাদেশে এলএনজি আমদানির বড় অংশই আসছে মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ নির্ভর দেশ কাতার থেকে। কাতার থেকে আরও এলএনজি আমদানির জন্য ইতোমধ্যে নতুন চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। ফলে এ সময়ে এলএনজি সরবরাহের রেকর্ডের এই খবরটি তাৎপর্য্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ দুইভাবে এলএনজি আমদানি করে, যা ২০১৮ সাল থেকে চালু আছে। একটি হচ্ছে, সরকারের সঙ্গে সরকারের (জিটুজি) দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি। আরেকটি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি আমদানির সুবিধা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম উঠানামার প্রভাব এখানে থাকে না।

দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে ২০২৪ সালে জিটুজি ভিত্তিতে ৪০টি জাহাজে কাতার থেকে বছরে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন আমদানির লক্ষ্যমাত্রা আছে। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত কাতার থেকে এসেছে ৭টি এলএনজিবাহী জাহাজ।

আর জিটুজি চুক্তি অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ওমান থেকে আসে বছরে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন। ২০২৪ সালে ১৬টি জাহাজে এই এলএনজি আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে। মার্চ পর্যন্ত ৪টি জাহাজের এলএনজি খালাস হয়েছে।

আমদানি করা এলএনজির বড় অংশই জাহাজে করে দেশে আসে। সেই জাহাজ ভেড়ে মহেশখালীর ভাসমান দুটি টার্মিনালে। সেই এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তরের কাজটি করে দুটি টার্মিনাল। একটি টার্মিনাল যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি ও আরেকটি দেশের কোম্পানি সামিট পরিচালনা করে। দুটি টার্মিনালের প্রতিটির সর্বোচ্চ সরবরাহক্ষমতা ছিল ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ দুটি টার্মিনাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ দেওয়া যেত। ২০২৩ সালে অক্টোবরে এক্সিলারেটের টার্মিনাল সিঙ্গাপুরে নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করে সক্ষমতা বাড়িয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করা হয়।

আরপিজিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (এলএনজি) প্রকৌশলী মো. শাহ আলম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের এলএনজি সক্ষমতা বেড়ে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট থেকে এখন ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। মঙ্গলবার আমরা দুটি ভাসমান টার্মিনাল দিয়ে ১০৮০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ দিয়েছি। এর আগে আমরা ১০৬০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত দিয়েছিলাম। সরকার চাইলে আরও বেশি আমরা সরবরাহ দিতে পারব।”

তিনি বলেন, কাতারের আমিরের সফরের সঙ্গে বেশি এলএনজি সরবরাহের যোগসূত্র নেই। তবে এটা ঠিক এই সময়ে রেকর্ড সরবরাহ দেওয়াটা অবশ্যই ইতিবাচক।

এলএনজি সরবরাহ বাড়ায় শিল্প কারখানা ও আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ আগের চেয়ে বেড়েছে। বেড়েছে সার উৎপাদনও।

রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) গ্যাস সরবরাহের সর্বশেষ ২১-২২ এপ্রিল যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, দুই দিনে ৩০৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবারহ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে আমদানিকৃত এলএনজির ১০৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। আর বাকিটা এসেছে দেশের গ্যাস কূপ থেকে। অর্থাৎ চাহিদার বড় অংশই এসেছে এলএনজি থেকে।

এলএনজি সরবরাহ বাড়ায় এর সুফল মিলেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও। ঈদুল ফিতরের আগে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল চালু না হওয়ায় রমজানের শেষদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গিয়েছিল। শহর থেকে গ্রামে বেড়েছিল লোডশেডিং। এখন গরম বেড়েছে, বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদাও। সেই চাহিদা মাথায় রেখে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছে।

বিপিডিবির হিসাব বলছে, গত ১১ এপ্রিল ঈদের দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ১০ হাজার ৯২৯ মেগাওয়াট। ঈদের ছুটি শেষ হয়ার পর প্রথম কার্যদিবসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৪ হাজার ৯৩ মেগাওয়াট। এরপর তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে গত ২০ এপ্রিল ১৫ হাজার ৩৫৮ মেগাওয়াট হয়। ২১ এপ্রিল সেটি আরও বেড়ে হয় ১৫ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট। সর্বশেষ ২২ এপ্রিল ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে তা নতুন রেকর্ড হয়।

যদিও বিপিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, “মূলত এলএনজি ও কয়লা সরবরাহ বাড়িয়েই সরকার তুলনামূলক সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে নজর দিচ্ছে। এই দুই জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎপাদন খরচ কম। ফলে আপনি দেখবেন গরম যত বাড়ছে, সেই অনুযায়ী লোডশেডিং বাড়ছে না। কারণ, বাড়তি এলএনজি সরবরাহ দিয়েই গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সচল রেখেছে সরকার। এ কারণে একদিনে এত বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত