Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

সংকটকালে মহেশখালীর টার্মিনালের এলএনজি সরবরাহে রেকর্ড

মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল।
মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল।
Picture of বিশেষ প্রতিনিধি, সকাল সন্ধ্যা

বিশেষ প্রতিনিধি, সকাল সন্ধ্যা

সারাদেশে যখন গ্যাস সংকট নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন একটি টার্মিনাল থেকে সরবরাহে রেকর্ড গড়ার কথা বলছে দেশের তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ সংস্থা—পেট্রোবাংলা।

কক্সবাজারের মহেশখালীর ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনালের একটি ব্যবস্থাপনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি, সেখান থেকেই মঙ্গলবার ৬০ কোটি ঘনফুট তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়েছে। আগে এই টার্মিনাল দিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের নজির আছে।  

এলএনজি সরবরাহে নিয়োজিত দেশীয় কোম্পানি সামিটের টার্মিনালটি বন্ধ রাখা হয়েছে, সেটি রক্ষণাবেক্ষণে দুই মাসের জন্য সিঙ্গাপুর গেছে।

পেট্রোবাংলা বলছে, জাহাজে করে আমদানিকৃত এলএনজি দেশে সরবরাহ দেওয়ার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে দুটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। জাহাজ থেকে এলএনজি আনার পর তা রূপান্তরের মাধ্যমে পাইপলাইনে সরবরাহ করাই টার্মিনাল দুটির কাজ।

এরমধ্যে একটি ব্যবস্থাপনা করে এক্সিলারেট এনার্জি। আরেকটি সামিট এলএনজি টার্মিনাল।

এক্সিলারেট এনার্জি ২০১৮ সাল থেকে টার্মিনাল দিয়ে এলএনজি সরবরাহ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ২০৩২ সাল পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহের চুক্তি আছে। তারা দিনে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করবে।

সামিট ২০১৯ সাল থেকে নিজেদের টার্মিনাল দিয়ে এলএনজি সরবরাহ শুরু করে। ২০৩৩ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি দিনে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করবে।

প্রতিষ্ঠান দুটি মেয়াদ শেষে কোনও চার্জ ছাড়াই সরকারকে টার্মিনাল দুটি হস্তান্তর করবে বলে পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তি আছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে সরকার দুটি দেশ থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি আমদানি করছে। এর মধ্যে কাতারের রাস গ্যাস কোম্পানি থেকে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তিতে বছরে ১৮ লাখ টন থেকে ২৫ লাখ টন এলএনজি আনা হবে। ২০১৮ সাল থেকেই সেখান থেকে সরবরাহ শুরু হয়।

আর ওমানের ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড থেকে বছরে ১০ থেকে ১৫ লাখ টন এলএনজি আমদানির চুক্তি আছে সরকারের। ১০ বছর মেয়াদি এই চুক্তিতে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয় ২০১৯ সালে।

এর বাইরে চাহিদা সামাল দিতে সরকার বিদেশের স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনে, যা মহেশখালীর ভাসমান দুটি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ করা হয়।  

পেট্রোবাংলা বলছে, ১০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতা থাকলেও অক্টোবর থেকে একটি টার্মিনাল থেকেই দিনে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছিল। এর মূল কারণ এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণে চলে যাওয়ায় সেটি দিয়ে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ ছিল।

২০২৩ সালের অক্টোবরে এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনাল সিঙ্গাপুরে রক্ষণাবেক্ষণে নেওয়া হয়, ফিরে আসে গত ১৭ জানুয়ারি। ততদিন পর্যন্ত সামিটের টার্মিনালটি এককভাবে এলএনজি সরবরাহ দিচ্ছিল।

গত ১৯ জানুয়ারি এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনল পুনরায় কাজে ফিরলেও সংযোগ নিতে গিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে। একইসঙ্গে কারিগরি ত্রুটির কারণে সামিটের টার্মিনালটি থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

এ পরিস্থিতিতে দুটি টার্মিনাল দিয়েই এলএনজি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়। এতে পুরো চট্টগ্রাম গ্যাসশূন্য হয়ে পড়ে।

পরে নানা চেষ্টার পর গত ২০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালে সংযোগ পুনস্থাপিত হয়। পরদিন থেকে এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

তবে গত ২২ জানুয়ারি সামিটের টার্মিনালটি আগের শিডিউল অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিঙ্গাপুর যায়। এরপর থেকে একাই এলএনজি সরবরাহ দিচ্ছে এক্সিলারেট এনার্জি।

গ্যাস সরবরাহের সেই ধকল সামাল দিতেই এক্সিলারেট দিয়েই বাড়তি এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। ফলে দেশজুড়ে গ্যাস সংকট পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

পেট্রোবাংলা বলছে, রক্ষণাবেক্ষণের সময় এই টার্মিনালের ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে ৫০ কোটি থেকে ৬০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত করা হয়। সেই বাড়তি সক্ষমতার পুরোটাই ব্যবহার করা হয় মঙ্গলবার সকালে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (এলএনজি) প্রকৌশলী মো. শাহ আলম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ‘‘সামিটের টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণে যাওয়ায় বাড়তি গ্যাস সরবরাহ দিতেই এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এক্সিলারেট এনার্জির সক্ষমতা বাড়িয়ে ৬০০ মিলিয়ন (৬০ কোটি) করা হয়েছে। ‘‘সোমবার রাত থেকেই এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনাল থেকে আমরা ৫২০ মিলিয়ন (৫২ কোটি) ঘনফুট গ্যাস দিচ্ছিলাম, আর সকাল (মঙ্গলবার) থেকেই সেটি পূর্ণ সক্ষমতার অর্থ্যাৎ ৬০০ মিলিয়ন (৬০ কোটি) ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে।’’  

‘‘একটি টার্মিনাল থেকে ৬০০ মিলিয়ন (৬০) ঘনফুট দেওয়ার ঘটনা রেকর্ড। আগামী মার্চে সামিটের টার্মিনালটি দেশে ফিরবে। ততদিন পর্যন্ত এভাবেই গ্যাস সরবরাহ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে’’ যোগ করেন তিনি।

গত ১৯ জানুয়ারি রাতে এলএনজি সরবরাহে বিপর্যয়ের পর পুরো চট্টগ্রাম গ্যাসশূন্য হয়ে পড়ে। এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনাল মেরামত শেষে সংযোগ চালু করতে গত ২০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টা বেজে যায়। ২১ জানুয়ারি থেকে পুরোদমে গ্যাসের সরবরাহ পেতে শুরু করে চট্টগ্রাম। বাসাবড়ি থেকে শুরু করে সিএনজি স্টেশন, সার কারখানা, শিল্প উৎপাদন, বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল হতে শুরু করে।

অবশ্য চাহিদার চেয়ে এখনও অনেক কম গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে চট্টগ্রাম। শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারাদেশে চাহিদার ৩৭০ কোটি ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে ৩০০ কোটি ঘনফুট—এমনটাই বলছে পেট্রোবাংলা।

ফলে চাহিদার বিপরীতে ৭০ কোটি ঘনফুট কম গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। সংকট আবাসিকে কম হলেও শিল্পে গ্যাস পাচ্ছে চাহিদার অনেক কম; ফলে সেখানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

দেশজুড়ে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে গত ২১ জানুয়ারি সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিদ্যমান গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আগামী মার্চ নাগাদ লাগবে। এই সময়ের মধ্যে এলএনজি টার্মিনালটি (সামিটের) রক্ষণাবেক্ষণ শেষে ফিরবে। আর দেশীয় উৎপাদন এই সময় বাড়বে। ফলে রমজান এবং সেচ মৌসুম ঘিরে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। 

গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) তথ্যমতে, চট্টগ্রামের ছোট–বড় ১ হাজার ২০০ কারখানায় প্রতিষ্ঠানটি গ্যাস সরবরাহ দিচ্ছে।

চট্টগ্রামে মোট গ্যাসের চাহিদা ৩০ থেকে ৩২ কোটি ঘনফুট, এর মধ্যে শিল্পকারখানায় গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৮ লাখ ঘনফুট। এর বিপরীতে গ্যাস মিলছে ৫ লাখ ঘনফুট। ফলে শিল্পে গ্যাস সংকট প্রকট হওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আর গ্যাসের চাপ ঠিকমতো না হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

তবে সরবরাহ বাড়ার পর চট্টগ্রামে মোট কত গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে—তা জানতে চাইলে গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) উপমহাব্যবস্থাপক (ট্রান্সমিশন) শফিউদ্দিন মো. ফরহাদ ওমর সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ২৩০ মিলিয়ন (২৩ কোটি) ঘনফুট পাচ্ছে চট্টগ্রাম। সার কারখানা কাফকো, সিইউএফএল চালু হলে চাহিদা বাড়বে, তখন এলএনজি সরবরাহ বেশি পাবে চট্টগ্রাম। ৬০০ মিলিয়নের (৬০ কোটি) মধ্যে বাকিটা জাতীয় গ্রিড দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত