Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

হারানোর শোকে বেড়ে ওঠা শিশুরা কেমন হয়

kids-090524
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

কোরিন মাসুর একজন ক্লিনিকাল মনোবিদ ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শদাতা; থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া শহরে। সাইকোলজি টুডে ব্লগে প্রকাশিত তার লেখার অনুবাদ করেছে সকাল সন্ধ্যা।

হারানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার ধারাবাহিক লেখায় জীবনের ছোট ছোট হারানোর গল্প নিয়ে অনেকবার বলেছি। এও বলেছি, শিশুদের কাছে মৃত্যু সংবাদের অর্থ কী? অথবা কারও মৃত্যুর খবর শিশু বয়সী কারও সামনে কী করে বলা যায়? প্রিয়জন যদি মরে যায় তাহলে শিশুর মনের গভীরে কতটা ছাপ পড়ে?     

কিন্তু আগে কখনও বলা হয়নি, প্রিয়জনকে হারানোর কষ্ট যত কঠিন হোক না কেন, কোমল বয়সের এই অভিজ্ঞতাই শিশুর বয়স বাড়িয়ে তোলে।

শুনতে অবাক মনে হলেও, অনেক প্রাপ্তবয়স্কদের মতো শিশু ও কিশোর বয়সীরাও কঠিন সময়ে নিজেকে ধরে রাখা শিখে যায়।

শোক এবং স্বজন হারানো নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবনে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হওয়ার কারণে কারও কারও মনোজগতে খুব ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।

লরেন্স কলহউন এবং রিচার্ড টেডেসচি এর নাম দিয়েছেন ‘পোস্ট-ট্রমাটিক গ্রোথ’ বা আঘাত পরবর্তী বিকাশ। কী কী ধরনের পরিবর্তন আসে চিন্তা জগতে এর তালিকাও করেছেন বিজ্ঞানীরা।

  • জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বেড়ে যায়
  • সম্পর্ক নিয়ে সন্তুষ্টি বেড়ে যায় এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে মনোযোগ বাড়ে
  • সহানুভূতি ও পরোপকার প্রবণতা বেড়ে যায়
  • জীবনে নতুন সম্ভাবনা দেখার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে
  • নিজের ভালো দিকগুলো জানার মনোযোগ দেখা যায়
  • আত্মিক উন্নতি হয়
  • সৃজনশীলতার বিকাশ হয়     

কঠিন মুহূর্তের মুখে পড়লে মনের গভীরের ভাবনা ও অনুভূতির দিকে মনোযোগ বেড়ে যায়। খারাপ সময়ে অনেকে ভাবার চেষ্টা করেন, নিশ্চয়ই সামনে ভালো কিছু হবে।

টোড কাসডান এবং জেনিফার কানে একই বিষয়ে নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন। একজন কলেজ শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণ করে তারা বুঝতে চেয়েছেন, কঠিন ও বেদনাদায়ক ভাবনাকে মানুষ কী পরিমাণে এড়িয়ে যেতে চায়? না কি জীবনে এই অনুভূতির জন্য জায়গা করে দেয় তারা?

গবেষণায় দেখা গেছে, মৃত্যু সংবাদ, মটর গাড়ি দুর্ঘটনা, ঘরে নির্যাতনের সাক্ষী হওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যাগের মতো ঘটনাগুলো বারবার জীবনে ধাক্কা দিয়ে যায়।

কাসডান ও কানে বলছেন, মানুষ যত বড় আঘাতের মুখে পড়ে তত বেশি পরিণত হয়ে ওঠে। তবে এমনটা তাদের সঙ্গেই হয় যারা নিজের অনুভূতির দিকে নজর দেন।

গবেষকদের পরামর্শ হচ্ছে, হারানোর বেদনার কথা প্রকাশ করতে শিশুদের উৎসাহ দিতে হবে সব সময়। যারা কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বারবার পিছিয়ে যায় তাদের জন্য এই উৎসাহ এক ধরনের থেরাপির মতো কাজ করে।   

বাবা-মা হারানো সন্তানদের নিয়ে গবেষণা করেছেন জেসিকা কোবলেনজ। মনের শোক প্রকাশে কী তাদের জন্য সহায়ক হয়ে ওঠে? অথবা কেন তারা শোক চাপা রাখে?  এই দুই প্রশ্নের ‍উত্তর খুঁজতে গিয়ে জেসিকা বিশ্লেষণও বলছে, এই হারানোর বেদনা যেন কয়েক লাফে বয়স বাড়িয়ে দেয় শিশুদের; তারা বড় হয়ে যায়।

জেসিকার গবেষণার তথ্য সংগ্রহের কাজে এক শিশু তাকে বলে, তারা সময়ের অপচয় করতে চায় না অথবা আফসোস করেও দিন কাটাতে চায় না। এই দলের শিশুদের জীবন নিয়ে বাস্তববাদী ধারণা গড়ে ওঠে।  

আরেকজন মিশু জেসিকাকে বলেছিল, সে এখন অনেকখানি মুক্ত। কেউ কেউ বলেছিল, তারা বুঝতে শিখেছে কার কাছে সাহায্য চাইলে পাওয়া যাবে। আবার কেউ দুঃখ কাটাতে শরীরচর্চায় ঝুঁকে গেছে। কেউ হাস্যরসে ডুবে থাকা শ্রেয় মনে করেছে।  

তরুণী তেইগান আমাকে বলেছিল, মায়ের মৃত্যুর পর জীবনকে গুছিয়ে আনে সে; জীবনে যা হতে চেয়েছিল তাই বেছে নিতে মনোযোগী হয়। তেইগান বলে, তা মা মারা যাওয়ার পর স্কুলের এক শিক্ষক প্রতি সপ্তাহে তার সঙ্গে কথা বলতো, পরামর্শ দিতো। এই শিক্ষক তেইগানের প্রেরণা হয়ে ওঠে। তারপর তেইগান সিদ্ধান্ত নেয়, শিশু-কিশোরদের কাউন্সেলর হয়ে উঠবে সে। তেইগানের ওই শিক্ষক যেমন তার পাশে ছিল, সেও অন্য শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা বেছে নিল।  

শোক ও স্বজন হারানোর ঘটনায় জীবনে  ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে কয়েক বছর ধরে গবেষণা করে দেখেছেন লরেন্স কলহউন এবং রিচার্ড টেডেসচি। কঠিন সময়ের মুখোমুখি হওয়ার পর জীবনে আশাব্যঞ্জক বাঁক বদল দেখেছেন এমন অনেকের কথা জানতে পারেন এই দুই গবেষক। জীবনে এই পরিবর্তন আসায় সম্পর্ক মজবুত হয়েছে, নতুন সাফল্যের আলো দেখা গেছে, আত্মিক উন্নতি হয়েছে বলে দেখা গেছে গবেষণায়।    

এসব গবেষণায় মজার কিছু উপাত্ত উঠে এসেছে। গবেষণায় সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কেউ কেউ বলেছেন, “আমি এখন বেশি অসহায় হলেও, অনেক আত্মবিশ্বাসী।” এই দলের বেশির ভাগ নিজের সক্ষমতা জোরদার করে টিকে থাকার কথা জানাতে আগ্রহী হন। জীবনে আঘাত পাওয়া লোকেরা দুর্বল সেই মুহূর্তে কথা বলার তাগিদ বোধ করতেন; আর এই তাগিদ থেকে অনেকের প্রিয়জনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়েছে। অনেকে বলছেন, জীবনের দর্শন আরও অর্থবহ হয়ে উঠেছে তাদের কাছে।    

শিশুদের বেলায় জেসিকা কোবলেনজ দেখেছেন, ৭৩ শতাংশের বেলায় কম বয়সে মৃত্যু কী বোঝার কারণে তারা যেন দ্রুত বড় হয়ে যায়। কোবলেনজের কাছে কেউ কেউ বলেছে, প্রিয়জনের মৃত্যুর ঘটনায় তারা জীবনকে আরও বেশি জড়িয়ে ধরে।

তবে শোকের পর মনকে শক্ত করার প্রয়োজনীয়তা অনেককে অসহায় করেও দেয়। একজন অংশগ্রহণকারী কোবলেনজকে বলেছিল, সে তার শৈশব হারিয়ে ফেলেছে। চারপাশের সবাই তাকে বলছিল, “তুমি খুব শক্ত মনের।” অথচ কেউ তাকে বলেনি, ‘তুমি শক্ত না হলেও কোনো ক্ষতি নেই’।

এই অভিজ্ঞতার অর্থ, শিশুকে ইতিবাচক থাকার উৎসাহ দিয়ে তার শোকের লড়াইকে তার একার করে দিয়ে পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তোলা হতে পারে কারও কারও জন্য। যদিও অনেকেই নিজের স্বাধীনতা এবং প্রয়োজনে কারও সহায়তা পাওয়ার নিশ্চয়তার মধ্যে জীবনের ভারসাম্য দেখছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত